স্বাস্থ্য রক্ষায় পুষ্টির গুরুত্ব


জীবন ধারণ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় উপাদানকে পুষ্টি বলা হয়। দেহ অভ্যন্তরে সঞ্চিত পানি, মেদ, পেশী এবং কৌলিক উপদানের দ্বারা মানুষ কোন খাদ্য গ্রহণ না করেও চল্লিশ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। অপুষ্টি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যা সাধারণত: দারিদ্র, পুষ্টি সম্পর্কে না জানা, অভাব এবং খাদ্য নিরাপত্তার ঘাটতির সঙ্গে যুক্ত। অপুষ্ট ব্যক্তি সমাজের অগ্রগতির পথে মস্ত বড় বাধা।

মানব দেহে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ আছে যেমন-পানি, শর্করা, প্রোটিন, লিপিড, ডিএনএ এবং

আরএনএ। এ সব যৌগিক পদার্থ বহু মৌলিক পদার্থ যেমন কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম. ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি দ্বারা গঠিত। মানব দেহে এসব মৌলিক পদার্থ বিভিন্ন যৌগিক যেমন হরমোন, ভিটামিন, ফসফোলিপিডস, ও হাইড্রোঅক্সিএপেটাইড আকারে থাকে।

পুষ্টি প্রধানত: সাত শ্রেণীতে ভাগ করা যায় যেমন-শর্করা, চর্বি, আঁশ, খনিজ লবণ, প্রোটিন, ভিটামিন ও পানি।

শর্করা:

ভাত, রুটি, নুড্লস, এবং অন্যান্য দানা শস্য শর্করার উৎস। শর্করা প্রাথমিক ভাবে মানব দেহে পাঁচটি কাজ করে যেমন শক্তি উৎপাদন, শক্তি সঞ্চয়, ম্যাকরোমলিকুল গঠন, মিতব্যায়ীতার সাথে আমিষ ব্যবহার করা এবং লিপিডের রাসায়নিক রূপান্তর করা। শর্করার প্রধান কাজ শরীরের সকল কোষে শক্তি সরবরাহ করা।

চর্বি:

চর্বি খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাংস, দুধ, পনির, মাখন, ঘি, মাছ, ভেজ্য তেল, মার্জারিন, বিস্কুট, কেক, পেষ্ট্রি ইত্যাদিতে চর্বি থাকে। চর্বি শরীরে শক্তি উৎপাদন করে, কিছু কিছু খাদ্য উপাদান শোষণে সহায়তা করে এবং শরীরে তাপমাত্রা সংরক্ষণ করে।

পথ্য আঁশ (Dietary Fiber)

ফল, শাক সবজি এবং দানাদার খাদ্যের মধ্যে পথ্য আঁশ আছে। আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্যের অনেক গুণ। এর মধ্যে রয়েছে:

১. নানা রকম পেটের পীড়া থেকে সুরক্ষা দেয়;

২. ডায়াবেটিস প্রবনতা কমিয়ে দেয়;

৩. শরীরে ওজনের ভারসাম্য রক্ষা করে;

৪. রক্তে কোলেষ্টরল ও চিনির পরিমাণ কমিয়ে দেয়;

৫. হৃদ যন্ত্রের দক্ষতা বাড়ায়;

৬. ষ্ট্রোকের প্রবনতা কমায়;

৭. ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখে;

৮. পাকস্থলীর প্রদাহ থেকে উপসম দেয় এবং

৯. পিত্তপাথরী ও কিডনির পাথর হওয়ার প্রবনতা কমায়।

খনিজ লবণ:

খনিজ লবণ মানব দেহের জন্য অপরিহার্য। খনিজ লবণ মাটি থেকেই আসে। অতএব বিভিন্ন রকম উদ্ভিদ খাদ্য, প্রাণীজ খাদ্য এমন কি পানীয় জলের মধ্যেও খনিজ লবণ পাওয়া যায়। খনিজ লবণ শক্তি (ক্যালরি) উৎপাদন করে না, তবে শরীরে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়া সম্পাদন করে যা সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য অপরিহার্য।

প্রধান চারটি মৌলিক উপাদান যেমন- কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন ছাড়াও প্রাণীদেহে আরো সাতটি মৌলিক পদার্থ যেমন- ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, সোডিয়াম, ক্লোরিন এবং ম্যাগনেশিয়াম অপরিহার্য। এছাড়াও সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় আয়রণ, কোবাল্ট, কপার, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, মলিব্ডেনাম, আইওডিন, ব্রমিন এবং সেলেনিয়াম। এ সব পদার্থের প্রয়োজন সামান্য পরিমাণ কিন্তু ঘাটতি হলে মারাত্বক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য থাকা অত্যন্ত জরুরী

প্রোটিন:

প্রোটিন মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান। শরীর গঠন ও পেশি শক্তি উৎপাদনে মৌলিক কাঠামো হিসাবে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীর বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। বিভিন্ন খাদ্য যেমন- মাংস, ডিম, মাছ, দুধ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, ডাল, বাদাম, বিভিন্ন ফল ও বীজে প্রোটিন পাওয়া যায়।

ভিটামিন:

দৈহিক বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য ভিটামিন প্রয়োজন। মানব দেহের জন্য ১৩ প্রকার ভিটামিনের প্রয়োজন। যার মধ্যে চারটি চর্বিতে দ্রবনীয় (এ, ডি, ই এবং কে) এবং ৯টি পানিতে দ্রবনীয় (বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, বি-৭, বি-৯, বি-১২ এবং ভিটামিন-সি)। বিভিন্ন প্রকার খাদ্য থেকে আমরা ভিটামিন পাই। দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়াকর্ম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে ঘাটতি জনিত রোগ সৃষ্টি হয়।

পানি:

পানির অপর নাম জীবন। মানব দেহে প্রায় ৭০% পানি। মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কাজ পরিচালনার জন্য পানি প্রয়োজন। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় তিন লিটার পানীয় জলের প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি যেমন প্রয়োজন তেমনিই এর গুনাগুণ ও বিশুদ্ধতা একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

 

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter