তৈরি খাবারে ভেজালের স্বরূপ
খাদ্যে ভেজাল নিরব মহামারী। কাঁচামাল সবজি থেকে ফল মূল, মাছ, দুধ, মাংস সব কিছুতেই ভেজাল। প্রায় সব রকম তৈরি খাবারেও ভেজাল। ফরমালিন, কার্বাইড, বস্ত্র রঙ্গিন করার রং, কৃত্রিম গন্ধ, স্বাদ, ইউরিয়া, ডিডিটি ইত্যাদি ব্যাপক হারে তৈরি খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে।
শহরে কর্মজীবি মানুষের খাদ্যের প্রধান উৎস হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রাস্তার ধারের খাবারের দোকান, ফেরিওয়ালা, প্যাকেট জাত খাবার ইত্যাদি। জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে খিচুরী, তেহারী, বিরানী, নেহারী, লটপটি, ভাজি, পরাটা, সিঙ্গারা, সমুচা, পুড়ি, চপ, বেগুনি, ফুসকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, পেঁয়াজু , হালিম, লাচ্ছি, সেমাই, পায়েশ, পিঠা, নানা রকম মিষ্টি ইত্যাদি।
কোডেক্স এলিমেন্টারিয়াস কমিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য / বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সজ্ঞা অনুযায়ী কোন খাদ্য ভেজাল খাদ্য হিসাবে গণ্য করা হয়, যখন তার মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত থাকে; নোংড়া পচাঁ-গলা পদার্থ থাকে; অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়ায় প্রস্তত করা হয়; নি¤œ মানের প্যাকেটে ধারণ করা হয়; কোন উপাদানের পরিবর্তে বিকল্প কোন অবাঞ্চিত উপাদান ব্যবহার করা হয় এবং পুষ্টিকর কোন উপাদান সরিয়ে নেয়া হয়।
খাদ্যে ভেজাল সাধারণ মানুষের মারাত্বক স্বাস্থ্য সমস্যা। এসব ভেজাল খাদ্য দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। ক্রেতার মন ভুলিয়ে দেয়। চকচকে রং দেখে আকৃষ্ট হয়ে ধরা খায়।
তৈরি খাবারের উপাদান হিসাবে প্রধানতঃ ব্যবহার করা হয় গমের আটা, চালের আটা, দুধ, ঘি, তেল, চিনি, মসলা, ইত্যাদি।
গম ও চালের আটা: পোকায় খাওয়া, ছত্রাক আক্রান্ত, মেয়াদউর্ত্তীর্ণ, পচাঁ গম ও চালের আটা, প্যাকেট জাত খাবার যেমন বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, এবং অন্যান্য খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
দুধ: সাধারণতঃ দুধ থেকে মাখন তুলে নিয়ে পানি এবং গমের আটা, সয়াবিন তেল, চীনা বাদামের পাউডার, অন্যান্য চর্বি এবং মাড় মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করা হয়।
ঘি: পচাঁ দুধ, পাম অয়েল, সয়াবিন, প্রাণীজ চর্বি, আলুর মন্ড, ইত্যাদির সাথে কৃত্রিম রং ও গন্ধ মিশিয়ে ভেজাল ঘি তৈরি করা হয়।
তেল: তিল, সরিষা, সয়াবিন, বাদাম, নারিকেল ইত্যাদি ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তবে এ সব তেলের সাথে নানা রকম নি¤œ মানের তেলের ভেজাল দেয়া হয়। যেমন সরিষার সাথে শিয়ালকাঁটার বীজ মিশ্রণ করে তৈল ভাঙ্গানো হয়। শিয়ালকাটা তেলে সেনগুইনারীন নামক একটি বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে যার বিষক্রিয়ায়ায় শোথ রোগ এবং পক্ষাঘাত রোগ হতে পারে।
খাবার তৈরি করতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয তা যদি ভেজাল যুক্ত হয় তা হলে তৈরি খাবার ও ভেজালযুক্ত বিষাক্ত খাদ্য হবে। তাই খাদ্য তৈরি করতে বিশুদ্ধ উপাদান ব্যবহার করা প্রয়োজন।
উপসংহার: তৈরি খাবারে ভেজাল বাংলাদেশে জন স্বাস্থ্যের একটি মারাত্বক হুমকি। তবে খাদ্য জীবনের জন্য অপরিহার্য। তাই খাদ্য পুষ্টিমান সম্পন্ন বিশুদ্ধ এবং সব রকম ভেজাল মুক্ত হতে হবে। সেজন্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরন, বাজারজাতকরণ তথা মাঠ থেকে টেবিল পর্যন্ত প্রত্যেকটি পর্যায় ভেজাল মুক্ত হতে হবে। এ লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ সর্বস্তরে বাস্তবায়ন করতে হবে।