সেদ্ধ চালে অনেক গুণ
ধান ভিজিয়ে সেদ্ধ করে শুকিয়ে ছাটাই করে যে চাল উৎপাদন হয় তাই সেদ্ধ চাল। এ ভাবে উৎপাদিত চালের গঠন ও মান আতব চালের চেয়ে ভাল হয়। বিশ্বব্যাপি যে চাল উৎপাদন হয় তার প্রায় অর্ধেক সেদ্ধ চাল। ভারত, পাকিস্তান মায়ানমার, মালয়াশিয়া, নেপাল, শ্রীলংকা, গিনি ,দক্ষিন আফ্রিকা, ইটালি, স্পেইন, নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, এবং বাংলাদেশে সেদ্ধ চালের ব্যবহার বেশী।
ধান সেদ্ধ করার ফলে চালের বহিরাংশে এবং তুষের মধ্যে থাকা পুষ্টি উৎপাদান বিশেষ করে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, এনথোছায়ানিন চালের ভিতরে ঢুকে যায় এবং চাল ছাটাইয়ের পরেও চালের মধ্যে থাকে। সেদ্ধ করার ফলে চালের শ্বেতসার নরম হয়ে আঠালো হয় এবং ঠান্ডা হওয়ার পরে আবার পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে। তা ছাড়া সেদ্ধ চালে আতব চালের দ্বিগুন খাদ্য আঁশ থাকে যা ক্যান্সার প্রাতিরোধ করতে সহায়তা করে।
সেদ্ধ চালের মধ্যে ২০-২৫% এমাইলোজ থাকে, চালে এমাইলোরর উপস্থিতি শর্করা হজমে বিলম্ব ঘটায়। শর্করা হজমের এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় গ্লাইসেসিক সূচক। সেদ্ধচালের গ্লাইসেমিক সূচক আতব চালের চেয়ে কম। সাধারনভাবে সেদ্ধ চালে (৩৮), আতব (৮৯) চালের চেয়ে গ্লাইগেমিক সূচক কম থাকে। সে জন্য সেদ্ধ চাল ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশী উপযোগী।
প্রটিন, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ লবন চালের গায়ে লেগে থাকে। ধান থেকে ছাটাই ও মিলিং প্রক্রিয়ায় চাল উৎপাদনের সময় এ সব উপাদানের প্রায় সবটাই তুষ এবং কুড়ার সাথে বেড়িয়ে যায় এবং শুধু শর্করা চালে অবশিষ্ট থাকে।
তবে সেদ্ধ চালে আতব চালের চেয়ে বেশী পুষ্ঠিমান থাকে। সাধারনত ১০০, গ্রাম সেদ্ধ চালে ৮১ গ্রাম শার্করা, ২ গ্রাম আঁশ, ১ গ্রাম চর্বি, ৭.৫ গ্রাম প্রটিন, ০.২২৫ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ৫ মিলিগ্রাম নিয়াসিন, ০.৭৪ মিলিগ্রাম আয়রন এবং ০.২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে (Richard Nikoley 2013)।
সেদ্ধ চালের গুনাগুন আরো বৃদ্ধি করা যায়, যদি ধান সেদ্ধ করার আগে
পানিতে ভির্জিয়ে রেখে বীজ সামান্য অঙ্কুরিত করে নেয়া হয়। সামান্য মুখ ফাটা ধান সেদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে টেকিতে ছাটাই করলে চালের খাদ্য মান বহু গুন বেড়ে যায়। এ ভাবে উৎপাদিত চালে প্রাণসঞ্চারি উৎপাদান যেমন ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, গামা এমাইলো বুটারিক এসিড, খাদ্য আঁশ, ইনোসিটল ,ফেরুলিক এসিড, ফাইটিক এসিড, টোকাট্রাইএনল, ইত্যাদির পরিমান বৃদ্ধি পায় (Kayahara and Kikuichi 2000; Hirunpong and Tungjaroenchai 2008)
তথ্য সূত্র :
1. Hirunpong P, Tungjaroenchai . 2008 . Effect of Germinatiarn on Cantents of Bioaetive Components in Germinated Brown Rice of Three Cultivars. 34th Congress on Science and Technology
2. Kayahara H, Kikuichit T. 2000. Flavor, Health and Nutiotional Quality of Pre-germinated Brown Rice, International Chemical Congress of Pacific Basin Societies, Hawaii
3. Richard Nikoley. 2013. Parboiled White Rice : More Nutritious, Half the Glycemic Load, More Resistant Starch, amazon.com