সুমির দাদী ও জুলেখার গল্প
গৃহশ্রমিক জুলেখা বেগম সকাল ৮ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত , বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অন্যের বাড়ি কাজ করে। জুলেখার বয়স ২৮। স্বামী খেলনা বিক্রি করে সংসার চালায়। জুলেখা বলে সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরে আর কোন কাজ করতে ইচ্ছে করেনা। কাজ করবো কি শরীর হাত পা শুধু ঝিন ঝিন করে। আগের দিনে মা চাচীদের দেখছি আমন /আউশের পান্তা ভাত খেয়ে সারা দিন কাজ করছে। তাদের কোন সমস্যা হয় নাই। তাদের শরীরে শক্তি ভালই ছিল। তাদের ঘরের সন্তান আমরা এই বয়সেই দুর্বল হয়ে গেছি। এখন আমরা তুষ খাই। অর্থাৎ বাজার থেকে যে চাল কিনে আনা হয় সেটা মেশিনে ছেটে সাদা করে ফেলে। রান্না করার সময় চাল ধুয়ে সব পরিস্কার করে ফেলি। তার পর ভাতের মাড় সব ঝেড়ে ফেলি। তা হলে থাকলো কি? পুষ্টি আর পেলাম কোথায়? আমাদের যত টুকু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন তাকি আমরা খাই?
আমাদের গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন মৌসুমে নানা রকমের ফল পাওয়া যায়। ছোট বেলায় আমরা নানা ধরণের ফল খেতাম। মা চাচীদের কাছে শুনেছি মৌসুমী ফল খেলে শরীর ভাল থাকে। ভাত না খেয়ে বেশির ভাগ সময়ে ফল খেয়ে সময় কাটাতাম। তখন শরীর বেশ ভালই ছিল।
এখন সেই ফলে কোন গুণ নাই। বিষ দিয়ে ভরে রাখে। কথায় বলে ফল খেলে বল বাড়ে। এখন দেখি ফল খেলে বল কমে। কারণ এখন তো আসল ফল পাই না। বাজারের বিষাক্ত ফল কিনে খেতে হয়। আগে খেতাম নিজের বাড়ির টাটকা ফল। এখন নানা ধরণের ক্যামিক্যাল মিশানোর কারণে যাও খাই তাতে কোন সুফল পাইনা। উল্টা মানুষের নানা ধরণের রোগ হচ্ছে। ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষের নানা রকমের নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে- যেমন ডাইবেটিকস, কিডনি, লিভার, হার্ড নষ্ট হচ্ছে। রং চক্চক্ করার জন্য ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মেশাচ্ছে। শুনছি তরমুজে নাকি ইংজেকশন মারে। তাই এইবার তরমুজই খাইনা। মানুষে বলে না চক্চক্ করলেই সোনা হয় না। আমরা ফল পাকাতাম যেমন আতাফল, সফেদা ফল শরিফা, তুশের নীচে ঢেকে রেখে। আম এবং কলা পাকাতাম ধানে খড়ের দিয়ে ঢেকে রেখে। এখন পাকায় নানা রকমের ক্যামিক্যাল দিয়ে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।