প্রসোবোত্তর মায়ের মানসিক সমস্যা
বিশেষ ভাবে যে বিষয়টি নিয়ে লিখছি তা হলো প্রসোবোত্তর মায়ের মানসিক সমস্যা। যে কোন প্রসুতির মায়ের প্রসবোত্ত মানসিক সমস্যা হতে পারে। তবে কিছু কিছু বিষয় এ ধরণের মানসিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। যেমন কম বয়সী মা, দাম্পত্য জীবনে অশান্তি, সদ্যজাত সন্তানের যতেœর জন্য মায়ের উপর চাপ, বাচ্চা হওয়ার পর মা যদি জানতে পারে তার বাচ্চা মৃত ইত্যাদি। এখানে পরিবারের সদস্য ছাড়াও ডাক্তাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। সন্তান প্রসবের পর সাথে সাথে বাচ্চাকে মায়ের বুকে দেয়া মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্যে খুব জরুরী। যে কেই ষ্টাডি এখানে তুলে ধরছি তা হলো জন্মের পর বাচ্চা অসুস্থ থাকায বাচ্চাকে মার থেকে ডাক্তারা দুরে সরিয়ে রাখেন। এতেও যে একজন মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে তা আমরা কখনো চিন্তা করিনা। এই প্রসুতি মায়ের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। এই কেসইষ্টডি টি দিয়েছেন দাইমা জরিনা বেগম।
দাইমা জরিনা বেগম টাংগাইল জেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এক জন দাইমা। তিনি নলশোধা দাইঘরের অধীনে যে গ্রাম আছে সেই গ্রামগুলিতে কাজ করেন। এখানে দাইঘর একটি নতুন ধারণা চার-পাঁচটি গ্রামের মহিলা ও শিশুরা একটি কেন্দ্রে এসে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ নিতে পারেন। এমন একটি ঘরকে দাইঘর বলা হচ্ছে। এই দাইঘর থেকে দাইমারা মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বুঝে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রেফার করে থাকেন।
আমেনা বেগম একজন গর্ভবতী মা। তার বয়স ৩০ বছর। টাংগাইল জেলার, পাথরাইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর
গ্রামে তার বাড়ি। স্বামীর নাম মোঃ রাজ্জাক মিয়া। এটা তাদের প্রথম সন্তান।
গর্ভের বয়স যখন ১ মাস তখন থেকেই দাইমা জরিনা বেগম তার দেখা শোনা করেন। মাঝে মাঝে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসেন। ১-৬ মাস পর্যন্ত তাকে বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবার খাওয়া পরামর্শ দেন। সাবধানে চলা ফেরা করতে বলেন। বেশি বেশি পানি খেতে বলেন। দুপুরে খাবার পর বিশ্রামে থাকতে বলেন। ৬ মাস পর্যন্ত তার কোন সমস্যা ছিল না। ৭ মাস পর থেকে পায়ে পানি আসে, চোখে ঝাপসা দেখে, মাথা ব্যথা করে। এ অবস্থা দেখে দাইমা বুঝতে পারে যে কোন সময় তার খিঁচুনি হতে পারে। এটা প্রি-একলামশিয়ার লক্ষণ। পরিবারে সাথে দাইমা আগেই কথা বলে রেখে ছিলেন। পরিবারকে বলে ছিলেন যে প্রসবের সময় এই মার ঝুঁকি হতে পারে। ৯ মাসের সময় যখন প্রসব ব্যথা উঠে তখন সময় ছিল ৬ ঘন্টা। প্রায় ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর দেখা গেল জরায়ুর মুখ শক্ত হয়ে গেছে। বাচ্চা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। এজন্য দাইমা জরিনা বেগম তাকে টাংগাইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তারা সব পরীক্ষা করে নরমালে বাচ্চা হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্ত দেখা গেল নরমালে বাচ্চা হচ্ছে না। তখন পরের দিন সকালে সিজার করে বাচ্চা বের করেন। বাচ্চা জন্ম থেকে জন্ডিস ছিল। ডাক্তাররা বাচ্চার জন্ডিসের চিকিৎসা করার জন্য বাচ্চাকে মা কাছ থেকে অন্যত্র সরিয়ে রাখেন। বাচ্চাকে হাসপাতালে রেখে মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন আমেনা বেগম বাচ্চাকে দেখার জন্য অস্থির হয়েছিল। এই কারণে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সব সময় পাগলের মত বকতে থাকে। কখনো হাসে, কখনো কাঁদে, মাঝে মাঝে রেগে যায়। এই অবস্থা অনেক দিন চলতে থাকে। এই অবস্থা দীর্ধস্থায়ীও হতে পারে। ঘটনাটি ছোট খাট মনে হলেও প্রসুতি মায়ের জন্য এটা মারাত্বক একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বাচ্চা সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে বাচ্চাকে এনে যখন তার কোলে দেয়া হয়, তখন থেকে সে আবার আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। বর্তমানে মা ও বাচ্চা দুজনেই ভাল আছে।