গাছের কাছে বসবাস
গাছ প্রকৃতির অসংখ্য বিস্ময়ের অন্যতম। বৈচিত্র্যে ভরপুর। পাখ-পাখালির আশ্রয় দাতা। আমরাও রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেই। এখানেই শেষ নয়। নতুন গবেষনায় দেখা গেছে আশে পাশে গাছপালা থাকলে মানুষ আনন্দে থাকে। টেনশন মুক্ত সৃষ্টিশীল পরিবেশে মন ভাল থাকে। আয়ু বাড়ে।
এটা একেবারে নতুন কিছু নয় যে গাছ আমাদের মন ভাল করে। কারণ আদিতে মানুষ ঘর বাধার আগে বনেই বাস করতো। জাপানে এখনও মানুষ “বনস্নান” উপভোগ করে। সেখানে তারা নিরব সময় কাটায়। নৈস্বর্গিক পরিবেশ অনুভব করে। বনের মধ্যে নিড়বে দীর্ঘ সময় পায়চারি করে। তাদের বিশ্বাস এভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। দেহের ঋাণাত্মক প্রতিক্রিয়া অপশারিত হয়ে স্বাস্থ্যকর অনুভূতি সৃষ্টি করে। ধ্যান মগ্ন পরিবেশে অধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ ঘটে।
গাছ বাতাস বিশুদ্ধ করে। বাসগৃহের আশে পাশের গাছ শীতে ঘর গরম রাখে এবং গ্রীস্ম কালে ঠান্ডা রাখে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। শরীর ও মন ভাল থাকে। মানসিক প্রশান্তি বিরাজ করে। আকস্মিক এবং দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু ঝুঁকি কমায়। রোগব্যাধি মুক্ত রেখে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। রক্তচাপ এবং আস্থিরতার মাত্রা কমায়। অলস বসে থাকার অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়। কর্ম প্রেরণা সৃষ্টি করে। স্মরণ শক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে। আপরাধ প্রবনতা কমায়। অস্ত্রপচারের পরে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে। সহমর্মিতাপূর্ণ মানবিক অবস্থা সৃষ্টি করে। হৃদরোগেরর ঝুঁকি কমায়। মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
শহরে যথাসম্ভব সবুজ এলাকা থাকা বাঞ্চনীয়। যেখানে মানুষ প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। নগর পরিকল্পনা, আবাসিক ভবন নির্মাণ ও এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাতাদেরও এ বিষয় মনোযোগী হওয়া প্রয়েজন। নতুন স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি সবুজ গাছপলার বেষ্ঠনী তৈরি করাও অপরিহার্য। বাংলাদেশে বর্তমানে ভবন নির্মাণের প্রাবনতা হচ্ছে বিদ্যমান গাছপালা যা কিছু আছে সব পরিস্কার করে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা। এ প্রবনতা মারাত্মক ইঙ্গিত বহন করে।
ভবিষ্যতে শহরে যে কোন স্থপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত কম পক্ষে ৫-৬% এলাকায় গাছ পালার সবুজ বেষ্ঠনি রাখা বাধ্যতা মূলক করা প্রয়োজন। একই সাথে “সবুজ ছাদ” বা ছাদে বাগান করার উপমুক্ত পরিবেশ সৃষ্ঠির জন্য বাড়ী/স্থাপনা নির্মাণের সময়ই পরিকল্পনা থাকা বাঞ্চনীয়।
সবুজ ছাদের সুবিধা :
১. গ্রীস্মকালে তাপ কমায়, ২. শীতকালে গরম রাখে, ৩, নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্ঠি করে, ৪. বাতাস বিশুদ্ধ করে, ৫. কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য দূষিত পদার্থ শোষন করে এজমা এবং অন্যান্য রোগের প্রকোপ কমায়, ৬. বৃষ্টির পানি ছেকে নিয়ে বিশুদ্ধ করে, ৭. শব্দ দূষণ কমাতে সহায়তা করে, ৮. সবুজ শ্যামল প্রকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে, ৯. বাড়তি ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্ঠি হয় এবং ১০. বাতাসে জলীয় বাস্পের ভারসাম্য রক্ষা করে।
আমরা সকলেই জানি ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান প্রাচীন কালের সপ্তম আশ্চর্য্যরে অন্যতম ( ৬০০ খৃ:পূ:)। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ গাছপালার প্রতি দায়িত্বশীল ছিল। তবে আধুনিকতার স্্েরাতে, বিশ্বায়নের ধাক্কায় মাঝ খানে পরিবেশ প্রকৃতির উপর যথেষ্ঠ অবিচার হয়েছে। দেরীতে হলেও মানুষের মধ্যে আবার শুভ বুদ্ধি ও চেতনার উন্মেস ঘটছে। আপন স্বার্থেই গাছ পালা সংরক্ষণের কথা ভাবছে। বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, কোষ্টারিকা, মিসর, ফ্রান্স জার্মানি, গ্রিস, ইসরায়েল, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, গ্রেটবৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বহুদেশ সবুজ ছাদ নির্মাণ করছে এবং এ বিষয় গবেষণা হচ্ছে।
উপসংহারঃ বর্তমানে বাংলাদেশে কিছু কিছু ভবনের ছাদে গাছ দেখা যায়। খুব ভাল। শুভ লক্ষণ। তবে “সবুজ ছাদ” একটি নির্মাণ কৌশল। বিভিন্ন দেশে এ বিষয় গবেষণা হচ্ছে। নির্মাণ কৌশল এবং উপযুক্ত গাছ নির্বাচনের জন্য গবেষণা প্রয়োজন। বাংলাদেশ জাতীয় নির্মাণ নীতি এবং ইমারত নির্মান বিধি-মালায় “সবুজ ছাদ” নীতি অন্তর্ভুক্ত করে আইন প্রনয়ন করতে হবে। ইতোমধ্যে নির্মিত সকল ভবনগুলিকেও সবুজ ছাদে রূপান্তর করার বিধান প্রনয়ন করতে হবে।