ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ


যে সব প্রত্রিকা থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে সেই পত্রিকাগুলি হচ্ছে, নয়া দিগন্ত, ২৩-২৭ জুন, ২০১৫। প্রথম আলো ২৬- জুলাই থেকে ২ আগষ্ট, ২০১৫। যুগান্তর ২৬ জুলাই থেকে ২ আগষ্ট, ২০১৫।

বন্যা এ দেশে নতুন কোন ঘটনা নয় প্রতিবছরই কোন না কোন এলাকা বন্যা কবলিত হয়। প্রবল বৃষ্টি ও মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে এই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই ভারী বর্ষণে পাহাড়ী ধস থেকে শুরু করে ঘরবাড়িসহ ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় থেকেও বন্যার খবর পাওয়া গেছে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় এলাকা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার মানুষ। চকরিয়া উপজেলার প্রায় ৭৫ টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। জুন মাসের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মানুষ এই ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় বার ২০ জুলাই থেকে শুরু হয় টানা ভারী বর্ষণ। এতে করে আবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মাননুষগুলো। টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ফেনী ও নোয়াখালীতে পানি বন্দী হাজারো মানুষ। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ৪০ টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা, বাজালিয়া, সোনাকানিয়া, আমিশাইল, চরতি ও কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩৫ টি গ্রামের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ২৫ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। অতি বর্ষণে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলের ভয়াবহ অবস্থা রূপ নিয়েছে।


চকরিয়া বন্যা


টেকনাফে অতিবর্ষণ ও অমাবস্যার জোয়ারে ফুঁসে উঠেছে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদী। বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। লাখো লাখো মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে দুর্দশার মধ্যে পড়েছে।

কক্সবাজার জেলার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে কমপক্ষে টেকনাফের ১৪ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় ৮০০ একর জমি পানিতে বিলীন হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি ও মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে এই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই ভারী বর্ষণে পাহাড়ী ধস থেকে শুরু করে ঘরবাড়িসহ ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় থেকেও বন্যার খবর পাওয়া গেছে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় এলাকা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার মানুষ। চকরিয়া উপজেলার প্রায় ৭৫ টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে করে আবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মাননুষগুলো। টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ফেনী ও নোয়াখালীতে পানি বন্দী হাজারো মানুষ। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ৪০ টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা, বাজালিয়া, সোনাকানিয়া, আমিশাইল, চরতি ও কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩৫ টি গ্রামের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ২৫ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।

বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যায়। এবারের বন্যায় সরকারি কোন ত্রাণের উদ্যোগ দেখতে পাওয়া যায়নি। এ বারের বন্যা পরিস্থিতি নিযে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই কেন? বুঝতে পাছি না। নাকি সরকার মধ্য আয়ের দেশ গড়তে ব্যস্ত। মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার জন্য সরকার যখন অনেক ভাল কাজ করে যাচ্ছে এই সময়ে আবার নতুন করে বন্যার শিকার হয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ।


চকরিয়া বন্যা


ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী টানা বর্ষণ ও সীমান্তের ওপার থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীর বিশাল এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীতে বন্যায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফুলগাজী উপজেলার ১০ টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদীকোর্ট, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সার্কিট হাউজ সড়ক, জামে মসজিদ সড়ক, কাজীকলোনী বেশির ভাগ সড়কেই প্রায় হাটু পানির নীচে। স্কুল, মাদ্রসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

লৌহজংয়ে ২ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি। কয়েক দিনের টানা বর্ষণে লৌহজংয়ের কনকসার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ও চরাঞ্চলের বেশ কিছু নিন্মাঞ্চলের ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে।

বরগুনা: টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে বরগুনা উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ধসে যাচ্ছে আমতলী শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক। বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, ও পুরাতন বাজার। ইতিমধ্যে ১৫০ মিটার সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। বরগুনা সদর, তালতলী,আমতলী, বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগীসহ শতাধিক গ্রাম প্লবিত হয়েছে। এতে পায় ৩০০ মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ।

ঝালকাঠি ভারী বৃষ্টিপাতে ঝালকাঠিতে প্লাবিত হয়েছে শহর ও গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা । বাড়ছে পানি এবং সাথে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। টানা বর্ষণে পানি বন্দী হয়ে পড়ে শতাধিক মানুষ।

সাতক্ষীরা কলারোয়া: অতি বর্ষণে কপোতাক্ষ উপচে কলারোয়ার সাতশ, পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। কয়েকটি বিলে পানি ঢুকে পড়ায় নষ্ট হয়েছে ফসল ও আমন বীজতলা। একটি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় পানির চাপে বাড়িঘরও ধসে পড়েছে।

সারা দেশজুড়ে অতি বর্ষণের কারণে এবারের ঈদ মানুষ তেমন আনন্দে কাটাতে পারেনি। কেউ তেমন ঘর থেকে বের হতে পারেনি। বিভিন্ন রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট।প্রথম আলোর সুত্রে জানা যায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহা সড়কের চন্দ্রা থেকে টাংগাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় ঢাকামুখী যানবাহন যানজটে আটকে যায়।

পাহাড় ধস: প্রতিবছর বর্ষা এলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। স্থায়ী কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতিবছর পাহাড় ধসে নিহতের ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না। সর্ব শেষ ১৯ জুলাই ঈদের রাতে চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেওয়াল ধসে পাঁচ শিশুসহ ছয়জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। টানা বৃষ্টির বিপদ ও ঝুঁকির বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ আগে থেকে বিবেচনায় নিলে মর্মান্তিক এ মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হতো। সবচেয়ে বড় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন। ঐসময়ে এক দিনে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে ১২৭ নিহত হয়েছিল। ২০০৮ সালে মারা গেছে ১৪ জন। এর পর থেকে প্রতিবছরই পাহাড় ধসে প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে মারা গেছে ১৭ জন। ২০১২ সালে ২৮ জন। ৩১ জুলাই,২০১৫ রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে নিহত হয়েছে ৭ জন। ১ আগষ্ট, ২০১৫ সাভার পৌর এলাকার দেওগাঁ দক্ষিণ পাড়া এলাকায় মাটির ঘর ভেঙ্গে ঘরেরর নীচে চাপা পড়ে তৈয়র আলী নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। সেই থেকে ৯ বছরে এ পর্যন্ত ১৯৯ জন নিহত হয়েছে পাহাড় ধসের কারণে। চট্টগ্রাম শহরে যেসব পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রয়েছে তার বেশির ভাগ মালিকানা সরকারের। ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ও রয়েছে। সরকারি পাহাড় দখল করে অথবা ইজারা নিয়ে ঘর তৈরি করে দেয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ২০০৭ সালে পাহাড় ধসের পর নিহতের ঘটনা ঠেকাতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এত দুর্ঘটনা এড়াতে ৩৬ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। এসব সুপারিশ গত ৮ বছরে আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিবছর বর্ষা এলে উচ্ছেদ চালানো হয়। এবারও ১১ টি পাহাড়ের ৬৬৬ টি পরিবারকে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে।


পাহাড় ধস


মৃত্যুর সংখ্যা: প্রবল বষর্ণে বন্যায় ও পাহাড় ধসে মোট মৃতের সংখ্যা 3১ জন। রাঙ্গামাটির কাউখালীতে ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়ও পানিতে ডুবে ১ জন নিহত প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারে পাহাড় ধস, পানিতে ভেসে গিয়ে ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ১৫ জন। মিরের সরাই নোয়াপাড়া গ্রামের মোহম্মদআলী হোসেনের ছেলে আবু তাহের ৪২ বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। কক্সবাজারের চকরিয়ায় পানিতে ভেসে গিয়ে শিশুসহ দু,জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পেকুয়ার মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লার লাঙ্গল কোটে পানিতে ডুবে সাপের কামড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাভারে দেওগাঁ মাটির ঘর ধসে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছ্।টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভোলায় ভেসে যাওয়া শিশুর লাশ উদ্ধার।

আহতের সংখ্যা: মোট ৬ জন।বান্দরবানের লামার আজিজনগরে পাহাড়ধসে মিশনপাড়ার নূর আহমেদসহ পাঁচজন আহত হয়েছে । রাঙ্গামাটির কাউখালীতে পাহাড় ধস,২ জন আহত হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গার জীবন নগরে দেওয়াল চাপা পড়ে আহত হয়েছে এক নির্মাণ শ্রমিক।

ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত: লামা উপজেলার আজিজনগরের মিশনপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে ৯ টি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাহাড় ধসের কারণে লামা সদরের মধুঝিরি এলাকায় ১২ টি কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এলাকায় বন্যার প্রবল শ্রোতে বেশ কিছু ঘরবাড়ি শঙ্খ ও ডলু নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অতি বর্ষণে সাতক্ষীরা কলারোয়া কপোতাক্ষ উপচে পড়া পানির চাপে একটি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় পানির চাপে বাড়িঘরও ধসে পড়েছে।

বীজতলা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি:কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক কৃষকের আমনের বীজতলা।পেকুয়ার ইউএনও মোঃ মারুফুর রশিদ খান জানানউপজেলার অন্তত ১০ একর আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শাকসবজির খেত ও আমন বীজতলা, মাছের ঘের, ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন ইউনিয়নে ধানের বীজতলা ও বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। পাবনা ঈদের আগের দিন রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে রবিরার সারাদিন রাত পাবনায় ভারি বৃষ্টি পাত হয়। ফলে পাবনা জেলার সব অঞ্চলেই বৃষ্টির পানিতে শতশত বিঘা ফসলি জমি ডুবে যায়। পাবনা শহরের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক জিনিষ পত্র নষ্ট হয়ে গেছে। শতশত মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়ে। ফেনীর ফুলগাজিতে পাঁটটি গ্রাম বন্যায় তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা।


চকরিয়া বন্যা


নোয়াখালী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক প্রণব ভট্টচার্য বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টর আমন বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে।

আমতলী: বৃষ্টির পানিতে মাঠের পর মাঠ তলিয়ে যাওয়াতে আউশের ক্ষেত ও আমনের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে কৃষকদের অভিযোগ। আমতলী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা এসএম বদরুল আলম জানান, এ বৃষ্টিতে আমন ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অমাবস্যার জোয়ার ও বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণে বরগুনার আমতলী উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

জীবন নগর (চুয়াডাঙ্গা) টানা বর্ষণে জীবননগর উপজেলার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। ধানসহ শাকসবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। ভেঙ্গে পড়েছে অনেক মাটির ঘর ।

সাতক্ষীরা কলারোয়া: অতি বর্ষণে কপোতাক্ষ উপচে কলারোয়ার কয়েকটি বিলে পানি ঢুকে পড়ায় নষ্ট হয়েছে ফসল ও আমন বীজতলা।

ত্রাণ বিতরণ: প্রতিবছরই কোন না কোন এলাকা বন্যা কবলিত হয়। বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যায়। এবারের বন্যায় সরকারি কোন ত্রাণের উদ্যোগ দেখতে পাওয়া যায়নি। এ বারের বন্যা পরিস্থিতি নিযে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই কেন? বুঝতে পাছি না। নাকি সরকার মধ্য আয়ের দেশ গড়তে ব্যস্ত।

বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রেড ক্রিসেন্টের উদ্যোগে খাবার সেলাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টে সোসাইটির পেকুয়া সদর ইউনিয়নের দলপ্রধান মনজুর আলম,ইউনিট দলপ্রধান জসিম উদ্দিন, মুজিবুল হক চৌধুরী প্রমুখ এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এস এসআরপিভি এর উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৫০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি ভোজ্য তেল ও ১ কেজি ডাল দেওয়া হয়।

বান্দরবানসহ কিছু এলাকায় সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। ফলে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জেলার বন্যার্তদের জন্যে নগদ ২৫ হাজার টাকা এবং ২৫ মেট্টিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি জেলায় বন্যায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানালেও প্রকৃত পক্ষে জেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

প্রথম পাহাড়ী ঢল শুরু হয় ২৩ জুন। এ সময়ে কক্সবাজার জেলার ৫ টি উপজেলার ৪৫ টি ইউনিয়নের পাঁচ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়ে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয় । বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে বান্দরবান, নোয়াখালী, বরিশাল, ভোলা ও হাতীয়া। পানিবন্দী হয়ে পড়ে লাখো মানুষ। অব্যাবহত বর্ষণের কারণে নগরীর বেশির ভাগ নিন্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। নগরীর কিছু এলাকা পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকাগুলি হচ্ছে নগরীর কাতালগঞ্জ, প্রবর্তকমোড়, নমুরাদপুর, দুইনম্বর গেট, হামজারবাগ, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর, হালিশহর, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, ষোলশহর, বাকলিয়া, খাজারোড, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ নীচু এলাকা কক্সবাজার সদর উপজেলা, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, ও মহেশখালিতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্বকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। চকরিয়া, ও পেকুয়ার ২৫ টি ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়ে। মাতামহুরী ও বাঁকখাল নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হয়ে শতশত একর ফসলী জমি ও চিংড়ঘের পানির নীচে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি ঢুকে পড়ে সুরাজপুর, মানিকপুর, কাকারা, লক্ষারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাংয়ের একাংশ ছাড়াও উপকূলীয় কোনাখালী, ডেমুশিয়া, সাহারবিল ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়। এছাড়া কক্সবাজার জেলার উখিয়ার ৭ টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পানি বন্দী হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। টানা বর্ষণের কারণে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি কর্ণফুলী, হালদা নদী, শঙখনদীর পানিও বৃদ্ধি পায়। চট্টগাম আবহাওয়া অফিস ২৫ জুন, ২০১৫ তারিখে ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের বিস্তির্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে যাওয়ায় ৩০ হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ে।

ভোলায় চারদিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ভোলার স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। অতি জোয়ারের চাপে চারটি উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের অন্তত ২৫ টি গ্রাম প্লাবতি হয়েছে। ভোলা পানি উন্নয় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশী আবদুল হেকিম, ২৪ জুন, নয়াদিগন্তকে জানান নদ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেশির ভাগ রাস্তা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। পানিতে ভেসে যায় প্রায় ২ হাজার পুকুরের মাছ। পড়ে যায় শতশত গাছ। বরিশাল ভারী বর্ষণে বরিশাল মহানগরের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যায়।

নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলায় অস্বাভাবিক জোয়ার ও ভারী বর্ষণে নিঝুমদ্বীপ তিন ফুট পানিতে ডুবে যায়। এই উপজেলার কমপক্ষে ৫০ টি মাছের ঘের বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারে নষ্ট হয়েছে কয়েক শ,বীজতলা, আমন ধানের চারা, আউশ ধান ও শাকসবজিসহ যাবতীয় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা ফলে পানি বন্দী হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। পাহাড়ী ঢল ও জেয়ারের প্রভাব চলে ২৩-২৭ জুন পর্যন্ত।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter