খর্বকায় শিশু অপুষ্টির শিকার


শিশুরা সমাজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। জাতির ভবিষ্যৎ। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪২ % খর্বকায়। শিশুদের সুস্থ শারীরিক এবং মানষিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা মাতা পিতা, সমাজের সকল বয়স্ক নাগরিক এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

দীর্ঘ দিনের পুষ্টি ঘাটতি খর্বাকৃতি হওয়ার প্রধান কারণ। পুষ্টি ঘাটতি ছাড়াও শিশু খর্বাকায় হওয়ার আরো যে সব কারণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, অন্ত্রে পরভুক জীবাণুর আক্রমণ, কম জন্মকালীন ওজন এবং গভীর মানসিক চাপ ইত্যাদি। এ সব কারণ আবার একটি অন্য আর একটির উপর ভর করে প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি করতে পারে। জন্মকালীন কম ওজন সরাসরি মায়ের পুষ্টি ঘাটতির সাথে যুক্ত এবং অপর্যাপ্ত পুষ্টির সাথে দীর্ঘকালীন অথবা বার বার সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া।

বয়সের সাথে সাথে স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি না হওয়ার প্রধান সমস্যা হচ্ছে বাড়ন্ত শিশুর প্রয়োজনীয় মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। যখন একটি শিশু বয়স অনুয়ায়ী পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় তখন সে

নিঃস্প্রাণ ও নিসপ্রভ হয় নিজেকে গুটিয়ে রাখে। লেখা পড়ায় মনোযোগী হয় না। এমন কি খেলা ধুলায়ও আনন্দ পায়না। অপুষ্টির শিকার শিশুরা শুধু তাদের বয়সের জন্যই ভাগ্য বঞ্চিত নয় তারা তাদের শরীর ও মনের দীর্ঘস্থায়ী অপূর্ণতার বোঝা বহন করেন। খর্বকায় শিশুরা নানা রকম রোগ ব্যাধিতে সংবেদনশীল হয়। পড়া লেখায় পিছিয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে পূর্ণ বয়স্ক ব্যাক্তি হিসাবে আয় রোজগারের ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে পড়েন।

জীবনের প্রথমে অপর্যাপ্ত পুষ্টি:

স্বাভাবিক বৃদ্ধির ঘাটতি শিশুর জীবনের ভ্রুণ অবস্থা থেকে দুবছর বয়স পর্যন্ত হতে পারে। খর্বকায় শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের চেয়ে উচ্চতায় কয়েক ইঞ্চি কম হয়। তাদের দেখতে বয়স কম মনে হয়। খর্বাকৃতি অপুষ্টির প্রধান লক্ষণ। তবে অপুষ্টির অন্যান্য ঘাটতির মধ্যে রয়েছে দূর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, সীমিত বোধ শক্তি, মুটিয়ে যাওয়ার আশংকা, উচ্চরক্ত চাপের প্রবনতা, সর্বপরি স্বল্প গড় আয়ু।

গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি ঘাটতি হলে খর্বাকৃতি শিশু জন্ম হতে পারে। গর্ভবতী মা যদি খর্বাকৃতি হন, ওজন কম হয়, গর্ভকালীন সময় প্রয়োজনীয় বৃদ্ধি না হয় তাহলে খর্বাকৃতি প্রবণতাসহ শিশুর জন্ম হতে পারে। জন্মের পরেও শিশুর খর্বাকৃতি প্রবনতা সৃষ্টি হতে পারে: নি¤œ মানের খাবার, সংক্রামক রোগ, এবং খাদ্যে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব। অণুখাদ্য যেমন আয়রন, জিঙ্ক , ভিটামিন-এ, ভিটামিন- সি এবং ভিটামিন -ডি এর অভাব। পরিবেশগত অবস্থা যেমন ক্রটিপূর্ণ স্যানিটেশন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেও শিশু খর্বাকৃতি হতে পারে।

শিশুর জীবনের প্রথম ১০০০ দিনের মধ্যে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। চিরদিনের জন্য খর্বকায় হয়ে যেতে পারে। খর্বকায় শিশুরা অতি সহজে রোগাক্রান্ত হয়। লেখা পড়ায় অন্যদের চেয়ে পেছনে পারে। সহজেই তারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে।

উপসংহার:

আজকের শিশু আগামি দিনের নাগরিক। খর্বাকায় অভিশাপ থেকে শিশুদের মুক্তি দিতে হলে মায়ের পুষ্টির কথা ভাবতে হবে সবার আগে। গর্ভবতী হওয়ার আগে, গর্ভকালীন সময়ে, সন্তান প্রসবের পরে মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। নবজাতকের বয়স ২ বছর হওয়া পর্যন্ত মাতৃ দুগ্ধ সেবন করতে হবে। শিশুর বয়স ৫ বছর পর্যন্ত পর্যাপ্ত পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। অণুখাদ্যের ঘাটতি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সম্মত সেনিটেশন ও পানীয় জলের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করার ব্যাপারে যথেষ্ঠ সচেতন হতে হবে।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter