পাট কেবল আঁশ আর শাক নয়, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উপকারীও বটে


পাট সাধারণত আঁশ হিসেবে পরিচিত। তবে আঁশ হিসেবে ব্যবহারের বহু আগে থেকে শাকের ব্যবহার চলে আসছে। পাটের পাতায় রয়েছে অনেক জানা অজানা পুষ্টি ও ওষুধি গুণ। পাট শাক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেমন হৃৎপিন্ডের দক্ষতা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শক্ত হাড় গঠন করে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে, অনুভূতি শক্তি বাড়ায়, ঘুমের অভ্যাস স্বাভাবিক করে, শরীর বৃদ্ধি ও গঠনের ভারসাম্য রক্ষা করে, রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে, এবং প্রদাহ ও জ্বালা কমায়।


Jute


আবাদি ও অনাবাদি মিলে পাটের (Corchorus spp) ৬০ টি প্রজাতি আছে। দেশী পাট (Corchrorus capsularis) এবং তোষাপাট (Corchous olitorius) প্রধানত আঁশের জন্য আবাদ করা হয়। তবে এ দুটি প্রজাতির কচি পাতা শাক হিসাবে ও ব্যবহার হয়। অন্যান্য অনাবাদি প্রজাতিগুলির পাতা কুড়িয়ে পাওয়া শাক হিসেবে ব্যবহার করা হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ।

মিশরীয় সভ্যতা বিকাশের সাথে পাট শাক ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। এক সময় ব্যাবিলনের রাজপথে পাট শাক ফেরি করে বিক্রী হতো। জানা যায় পাট শাক ফেরাউন এবং রানী ক্লিপ্রেট্টার পছন্দের তালিকায় ছিল। স্থান ভেদে পাট শাকের বিভিন্ন স্থানীয় নাম পাওয়া যায় যেমন mulukhiya,molohiya, mloukhiya ইত্যাদি।

পুষ্টি গুণ: পাট শাকে প্রচুর পরিমাণ খনিজ লবণ যেমন পটাশিয়াম,আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন যেমন ভিটামিন সি, ই, কে, বি- ৬ এবং নিয়াসিন রয়েছে। পাট শাকে আরো আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিন,এবং খাদ্য আঁশ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

স্বাস্থ্য উপকারিতা:

রক্তচাপ-আধুনিক জীবনে রক্তচাপ একটি চরম সঙ্কটপূর্ণ সমস্যা। এক্ষেত্রে পাট শাক লক্ষণীয় ভাবে রক্তচাপ কমিয়ে ভার সাম্যপূর্ণ স্থিতিশীল রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সহায়তা করে। পাটশাকে বিদ্যমান পটাশিয়াম মানব দেহের শিরা উপশিরার বিস্তৃতি বাড়িয়ে (dilate) রক্তসঞ্চালন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

শক্তি সঞ্চালন- পাটশাকে প্রচুর পরিমান আয়রন থাকে যা রক্তে হেমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ হেমোগ্লোবিন থাকায় স্বাভাবিক তাপমাত্রা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

হজম শক্তি: পাটশাকে বিদ্যমান পুষ্টি আঁশ খাবার হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং পুষ্টি অঙ্গীভূত করতে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য- রক্তের কোলেস্ট্রোল ভোজ্য আঁশের সাথে যুগল বন্দি হয়ে শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়। ফলে হার্ট এটাক এবং ষ্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

ঘুমের অভ্যাস: পর্যাপ্ত পরিমান ম্যাগনেশিয়াম শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন করে যা স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখে এবং নিরবচ্ছিন্ন নিদ্রা নিশ্চিত করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: পাট শাকের ভিটামিন এ, ই এবং সি শরীরের রোগ পতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন সি রক্তের শ্বেত কনিকা বৃদ্ধি করে এবং ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই চোখ, হৃদপিন্ড সহ অন্যান্য অঙ্গের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

হাড়ের বৃদ্ধিঃ প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান হাড় গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে এবং অষ্টিওপরোসিস রোগ নিরাময় করে।

প্রদাহ- ভিটামিন ই শরীরে প্রদাহ উপশমের শক্তি হিসাবে কাজ করে। গেঁটেবাত, আর্থরাইটস এবং প্রদাহ জনিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের জন্য পাট শাক একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য।

বাড়ন্ত শিশুর পথ্য: পাট শাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম আছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বৃদ্ধির জন্য শিশু খাদ্য তালিকায় পাট শাক থাকা জরুরী (https//www.organicfacts.net/health_benefits/other/health benifits-of-molokhia, html)।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter