নবজাতক ও দাইমায়ের কথা


নবজাতক শিশুর জীবন রক্ষায় দাইমাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামনে শীতকাল এ সময়ে নবজাতক শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।

নবজাতককে জন্মের পর দাইমারা যা করেন তা হচ্ছে প্রথমেই লক্ষ্য করেন নবজাতক শিশুর গায়ের রং কেমন, নীল হয়ে গেছে নাকি লালচে রংগের আছে। ঠিকমত শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে কিনা। নবজাতক যদি সুস্থ থাকে তা হলে নাভী কাটার পর নবজাতক শিশুকে বাহিরের আবহাওয়া থেকে রক্ষার জন্য নরম সূতি কাপড় দিয়ে পর পর তিন বার হালকা ভাবে চেপে মুছে দেন। তার পর আরেকটি নরম কাপড় দিয়ে শিশুকে ভাল করে মুড়িয়ে মায়ের বুকে দেন।

নবজাতকের গা মোছানোর সময় লক্ষ্য রাখেন যেন নবজাতকের গায়ে যে সাদা আবরণ থাকে তা যেন উঠে না আসে। ভালোভাবে শরীরে পানি গা থেকে মুছে দেন। জন্মের পর পর গোসল করালে শিশুর ত্বক থেকে গায়ের পাতলা সাদা ক্রিমের মতো আবরণ উঠে যায়। যাতে এ আবরণ উঠে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখেন । এ পাতলা সাদা আবরণ শিশুকে বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে এবং শিশুর শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। তা ছাড়া নবজাতককে নাভি না শুকানোর আগে যদি গোসল করানো হয় তা হলে নাভিতে ইনফেকশন হতে পারে। তাই নবজাতককে ৭২ ঘণ্টা তথা তিন দিন পর গোসল করানোর পরামর্শ দেন দাইমারা। সামনে আসছে শীতকাল এ সময় নবজাতককে গোসল করালে তার ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে অথবা ঠাণ্ডাজনিত রোগে (যেমন নিউমোনিয়া) আক্রান্ত হতে পারে।


নবজাতক


শিশুকে গরম রাখার ব্যাপারে প্রথম থেকেই যত্নবান না হলে নবজাতক শিশু নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। মায়েদের একটু সচেতনতা ও যত্নে অসংখ্য নবজাতকের জীবন বাঁচাতে পারে।

বেশি মোটা কাপড় দিয়ে শিশুকে ঢেকে রাখলে শিশুর শরীর ঘেমে গিয়ে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই নরম হালকা কাপড় দিয়ে শিশুকে জড়িয়ে দিতে হবে। জন্মের পর অবশ্যই ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের শাল দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন দাইমারা। শিশুর ৬ মাস বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট-এ সময় এক ফোঁটা পানি দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। জন্মের পর শিশুকে মধু, পানি বা অন্য কিছু না দিয়ে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

তামাক বিরোধী নারীজোট ২ ডিসেম্বর,২০১৫ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য এবং তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে নারীর ভূমিকা শীর্ষক এক সম্মেলনের আয়োজন করে। ডা.সৈয়দ ইবনে সাঈদ, সিভিল সার্জন, টাংগাইল তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন তা হচ্ছে গভর্বতী মা যিনি পত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে তামাকের শিকার সেই সব মায়েরা অপরিণত শিশুর জন্ম দিচ্ছেন। যে বাচ্চা অপরিণত বয়সে জন্ম নেয় সেই বাচ্চা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ থাকে । এই কারণে নবজাতক শিশু মৃত্যহার বেড়ে যায়।

টাংগাইল জেলার মৌশাকাঁঠালিয়া গ্রামের দাইমা জায়েদা বেগম বলেন,আমি আগে পান ,জর্দা, সাদাপাতা খেতাম কিন্তু এখন খাইনা। দেখা যায় জন্মের পর বাচ্চা কান্না করছে না। তখন নবজাতককে মুখ দিয়ে অক্সিজেন দিতে হয়। আমরা দাইমারা যদি জর্দা, গুল, সাদা পাতা খাই তা হলে আমাদের মুখ থেকে জীবানু বাচ্চার মুখে ঢুকে গিয়ে মারাত্বক ধরণের রোগ হয়ে নবজাতকের শিশুর মৃত্যু হতে পারে। তাই জর্দা, গুল, সাদা পাতা খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নবজাতকের মৃত্যুরোধে ভুমিকা রাখছে এই দাইমারা । একজন দাইমার মুখে এধরনের কথা শুনতে পাওয়া আমাদের জন্য আশার আলো।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter