শীতকালে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন


শীত এলেই বাড়ে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ এর মধ্যে নিউমোনিয়া একটি বড় ঝুঁকি। জ্বর,কাশি ও শ্বাসকষ্ট-এ তিনটি হলো নিউমোনিয়ার লক্ষণ। শিশুর শ্বাসকষ্ট বোঝার কিছু উপায় আছে। দুই মাসের কম বয়সী শিশু মিনিটে ৬০ বারের বেশি,দুই মাস থেকে ১১ মাস ২৯ দিনের শিশু মিনিটে ৫০ বা তার বেশি এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মিনিটে ৪০ বা তার বেশিবার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। এর সাথে বুকের পাঁজরের নিচের অংশ দেবে যেতে থাকে।

সব কাশি-জ্বরই আবার নিউমোনিয়া নয়। তাই প্রথমে বাড়িতেই শিশুর যত্ন নিন। (তথ্যসূত্র নয়াদিগন্ত ৩০ ডিসেম্বর)

গ্রামের দাইমারা শিশুর ঠান্ডা, কাশি, জ্বর দেখলেই নিউমোনিয়া যাতে না হয় তার জন্য বিশেষ যত্ন নেন।

সরিষার তেল ও রসুন ছেঁচে গরম করে শিশুর বুকে, পিঠে, পায়ের তলায় মালিশ করে দেন। মায়ের বুকের দুধের সাথে দন্ডকলস পাতা ছেঁচে বাচ্চার মাথার নরম যে অংশ সেখানে বসিয়ে দেন। এতে ভাল উপকার পাওয়া যায়।

তাছাড়া ৩ -৫ বছরের শিশুদের ঠান্ডা কাশি কমাতে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস,তুলসী পাতার রস বা আদার রস দিয়ে থাকেন। বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই বারবার বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কাশির জন্য শিশু ঘুমাতে পারছে না বা কাশির সাথে বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে-এমন বোধ হলে দ্রুত উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে দেন।

জন্মের পর করণীয়

নিউমোনিয়ার হাত থেকে নবজাতককে রক্ষা করতে হলে এই শীতের সময়ে আমাদের সচেতনতা খুবই জরুরী।

ঠান্ডাজনিত কারণে অনেক নবজাতকের মৃত্যু হয়। ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ প্রথম আলোর একটি তথ্য থেকে জানা যায় ২০১৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়ায়ি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭১ জন শিশু।

শিশু মায়ের গর্ভে যে গরম পরিবেশে থাকে,ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে সে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তাই নবজাতককে জন্মের পর পরই গরম রাখা প্রয়োজন। যত দ্রুত সম্ভব নবজাতককে জন্মের পর পরই মাথা থেকে শুরু করে সারা শরীর পরিষ্কার শুকনো নরম সূতি কাপড় দিয়ে হালকাভাবে চেপে মুছিয়ে শুকনো করা জরুরি। এক্ষেত্রে পর পর পরিষ্কার শুকনো তিনটি নরম সূতি কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। এরপর নবজাতককে মায়ের বুকের গরমে রাখতে হবে এবং ত্বকে-ত্বক-স্পর্শ করে পরিচর্যা অন্তত ১ ঘণ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

মোছানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সাদা আবরণটি উঠে না আসে। জন্মের পর পর গোসল করালে শিশুর ত্বক থেকে গায়ের পাতলা সাদা ক্রিমের মতো আবরণ উঠে যায়। অনেকে ভাবেন এগুলো ময়লা তাই ঘষে তুলে ফেলেন। এই পাতলা সাদা আবরণ শিশুকে বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে ( রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে) এবং শিশুর শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। তাই নবজাতককে তিন দিন (৭২ ঘণ্টা) পর গোসল করানো উচিত।

নবজাতক শিশুর মাথা নরম কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে যাতে কোনোভাবেই তার ঠাণ্ডা না লাগে। জন্মের পর পর নবজাতককে গোসল করালে তার ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে অথবা ঠাণ্ডাজনিত রোগে (যেমন নিউমোনিয়া)আক্রান্ত হতে পারে। আবার অনেকে শিশুকে এমন ভাবে জড়িয়ে রাখে দেখা যায় শিশু ঘেমে ভিজে যায়। এটাও শিশুর বিপদ ডেকে আনে। ঘাম শরীরে বসে গিয়ে ঠান্ডা লেগে যায়। তাই শিশুকে হালকা কাপড় পড়ানো ভাল।

শিশুকে উষ্ণ রাখার ব্যাপারে প্রথম থেকেই যত্নবান না হলে নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের শীতজনিত রোগ হতে পারে। এর ফলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। আমাদের একটু সচেতনতা ও যত্ন অসংখ্য নবজাতকের জীবন বাঁচাতে পারে।

 

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter