বন্যা পরবর্তী বীজ সহায়তা প্রাপ্ত কৃষকের সফলতা
নূর খাতুন, বয়স ৫৫ বছর, স্বামী ইয়াকুব আলী,বয়স ৬৩ বছর গ্রাম: বহাদ্দার কাটা, ইউনিয়ন: বি এম চর, উপজেলা: চকরিয়া জেলা কক্সবাজার। স্বামী, ২ ছেলে এবং নূর খাতুন নিজে মিলে পরিবারে সদস্য মোট ৪ জন। ৪০ শতক জমির উপর তার বসত ভিটা এবং নিজস্ব চাষাবাদের জমির পরিমান ৬০ শতক। এ বছর তিনি নিজের জমির পাশাপাশি ৮০ শতক জমি লিজ নিয়ে মোট ১৪০ শতক জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ করেছেন।
জমিতে চাষাবাদ ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় তিনি বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলের গাছপালা রয়েছে। যেমন: সীম, লাউ, পেঁপে, কলা, বরই, আম, কাঠাঁল, পেয়ারা, নারিকেল ইত্যাদি। এছাড়াও নূর খাতুনের বাড়িতে গরু, মুরগী, হাঁস ইত্যাদি গৃহপালিত পশু-পাখি রয়েছে।
বীজ সহায়তা পেয়ে নূর খাতুনের ফসলের মাঠ এখন সবুজতায় ভরা
গত জুন-জুলাই ২০১৫ মাসে পরপর ২ বার বন্যায় বহাদ্দার কাটা গ্রাম পানিতে ডুবে যায়। প্রত্যেকটি বাড়ি এবং রাস্তাঘাটে প্রায় ২-৩ ফুট পানি হয়। বন্যার পানিতে আমার ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র ও বীজ (মূলা, রঙ্গিমা সীম, বরবটি, লালশাক, ফেলন, বীজ ধান, ঢেড়ঁস, মরিচ, বেগুন) নষ্ট হয়ে যায়। এমন কি পরপর পানি উঠার কারনে ৪ বার জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তখন জমিতে ক্ষিরা, ঢেড়শ, চিচিংগা, পাটশাক, আমন ধানের বীজ তলা সহ প্রায় ৯/১০ দিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় সব নষ্ট হয়ে যায়।
যখন বাড়ি এবং জমি থেকে পানি নেমে যায় তখন আমার হাতে কোন বীজ ছিল না। আশে পাশে কারো কাছ থেকেও বীজ সংগ্রহ করতে পরছিলাম না। অন্য এলাকার আত্বীয় স্বজনের কাছে খোজ-খবর নিয়েছি বীজের ব্যাপারে। বাজারের বীজের কোন বিশ্বাস নেই আর আমি বাজার থেকে বীজ কিনে কখনো চাষ করি নাই। সেজন্য সুদিন মৌসুমে ক্ষেতি-কূলা (শীতকালীন মিশ্র ফসলের চাষ) কিভাবে করবো এ নিয়ে টেনশনে পড়ে ছিলাম।
তখন উবিনীগের আপারা গ্রামে এসে আমাদের খোজ-খবর নেন এবং আমাদের বীজ দেওয়ার কথা বলেন। এরপর জমি থেকে সম্পূর্ন পানি নেমে গেলে জমি শুকালে গত অগ্রহায়ন মাসে আমরা উবিনীগ থেকে রঙ্গিমা সীম, ঢেঁড়স, মূলা, লালশাক, বরবটি, মিষ্টি কুমড়ার বীজ নিয়ে আবার নতুন করে মিয়াল্যা (মিশ্র) ফসলের আবাদ করি। নয়াকৃষির বীজ ছাড়াও আমি দেশী মরিচ, টমেটো ও গোল আলুর চাষ করেছি।
এবারের বন্যায় জমিতে নল (পলি) পড়ায় মাটি উর্বর হয়েছে ও ফসল ভাল হয়েছে। পোকামাকড় তেমন একটা লাগে নাই। আর আমি কোন সার, বিষ দেই নাই শুধু সামান্য কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করেছি।
এখন জমিতে বীজের মূলা, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি আছে এবং ফলনও ভাল হয়েছে। এ পর্যন্ত আমি লালশাক, মূলা শাক, ধনিয়া পাতা, নিজে খেয়েছি এবং বাজারে বিক্রি করে ২০০০/- টাকার মতো পেয়েছি। তাছাড়া টমেটো, কাচাঁ রঙ্গিমা সীম এবং আলু ঘরে তুলছি এবং নিজে খাওয়ার পরেও এ পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করেছি। পরবর্তীতে আরো বিক্রি করবো আগে আল্লাহ্ (ইনশাহ আল্লাহ্)। প্রতিটি জাতের ভাল বীজ গুলো আগামী মৌসুমের জন্য আমি ঘরে সংরক্ষন করবো। আশা করি নিজে চাষ করার পরও পাড়া প্রতিবেশীদের কেও দিতে পারবো এবং তাদের কাছ থেকে আনতে করবো।
বন্যার সময় সবাই রিলিফের কথা বলে এবং বিপদের সময় বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য দরকার। আমরা কৃষক মানুষ বীজ আমাদের মেইন সম্বল। এবারে ক্ষেতি-কূলার ফলন দেখে মনটা বেশী খুশি। নয়াকৃষি ও উবিনীগের কাছ থেকে বীজ সহায়তা পেয়ে আমরা অনেক উপকার পেয়েছি। "আরা অইয়িদে চাষাবুশা মানুষ, আতত বীজ থাইলে আরার মনত এককানা বল শক্তি পাইর” (আমারা হলাম চাষী হাতে বীজ থাকলে মনে শক্তি পাই।)