বন্যার সময় দাইঘরের সেবা নিয়েছে গর্ভবতী মহিলারা


হাদিছা বেগম, বয়স: ২৪ বছর, স্বামী : আমীর উদ্দিন, বয়স: ৩২ বছর গ্রাম: ঢেমুশিয়া পাড়া ইউনিয়ন: বদরখালী, উপজেলা: চকরিয়া জেলা: কক্সবাজার। হাদিছা বেগমের বিয়ে হয়েছে ৫ বছর। তার ৩ বছর ৪ মাসের একটি মেয়ে আছে। তিনি বর্তমানে ৮ মাসের গর্ভবতী।

গত জুন-জুলাই, ২০১৫ মাসে বন্যার কারনে ঢেমুশিয়া পাড়া গ্রামের প্রত্যেকটি ঘর-বাড়িতে এবং রাস্তাঘাট ৩-৪ ফুট পানিতে ডুবে যায়। হাদিছা বেগম বলেন, তখন আমার পেটে ৩ মাসের সন্তান। আমার ঘরের মধ্যে ১ বুক পানি ছিল। আমরা খাটের নিচে ৬/৭ টা ইট দিয়ে উচু করে সেখানে অনেক কষ্ট করে দিন কাটিয়েছি। তখন ৩ মাসের গর্ভবতী হলেও আমাকে নিজে নিজে সংসারের সব কাজ করতে হয়েছে। কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তখন দাইঘরেও অনেক পানি হয়েছিল। দাইঘরের কি অবস্থা তা দেখে আসার জন্য আমার স্বামীকে পাঠিয়ে ছিলাম। আমার স্বামী এসে যখন বলল দাইঘরে অনেক পানি হয়েছে দরজা বন্ধ তখন আমার অনেক খারাপ লেগেছে। কারন এখানে যখন দাইঘরে প্রথম কাজ শুরু হয় ঠিক তার ২ মাস পরে আমার প্রথম মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। দাইমা আনছারা বেগম আমার খালা হয়, তিনি আমাকে দাইঘরে নিয়ে গিয়ে ওজন, প্রেসার মাপায়। তখন থেকে আমি প্রায়ই দাইঘরে যেতাম। বন্যার সময় আমি ৩ মাসের গর্ভবতী ছিলাম। দাইঘরে পানি উঠার কথা শুনে আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। কারন এ সময় যদি আমার কোন সমস্যা হয় তাহলে আমি প্রেসার, ওজন মাপার জন্য কোথায় যাবো। তখন দাইমাদের সাথে যোগাযোগ করাও ছিল কষ্টকর। দাইঘরের খাতায় আমার নাম আছে। তখন আমার চিন্তা হতো যদি দাইঘরটি আর ঠিক না করা হয় তাহলে আমাদের মতো গরীব মানুষেরা কোথায় যাবে। সামান্য কিছু হলেই ১০০/২০০ টাকা খরচ করে বদরখালী না হলে চকরিয়া যেতে হয়। আমার স্বামী দিনজমুজুরের কাজ করেন সব সময় আমাদের হাতে টাকা-পয়সা থাকে না।


গর্ভবতী মা


বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকেই আমি প্রায়ই প্রতিদিন এববার হরে দাইঘরে এস দেখতাম দাইঘরটি আবার মেরামত করা হয়েছে কিনা। যখন দেখলাম দাইঘরটি ঠিক করা হয়েচ্ছে তখন আমার খুব ভাল লেগেছে। কারন আমার মতো অনেক মহিলা আছেন যারা পেটে বাচ্চা আসলে যে ৪ বার চেকআপ করতে হয় তা জানতো না। দাইঘরটা থাকার কারনে আমি আমার শারীরিক যে কোন সমস্যা হলে আগে দৌড়ে দাইঘরে চলে আসি এবং দাইমারা যারা থাকেন তাদের কাছে পরামর্শ নেই। দাইঘর মেরামত করার পর আমি এর মধ্যে ৩ বার এসে চেক আপ করিয়েছি।

দাইঘরের পাশাপাশি ভ্যানটা মেরামত করার জন্য আমি অনেক খুশি হয়েছি। কারন অনেক সময় দেখা যায় রাতে কোন সমস্যা দেখা দিল কিন্তু রাস্তায় তখন কোন গাড়ি নেই সে সময়ের জন্য ভ্যানটাই আমাদের অনেক কাজে লাগে।

দাইঘরে গেলে অনেক গর্ভবতী মায়েদের সাথে দেখা হয়। তাদের সাথে অনেক বিষয়ে কথা বলতে পারি সেজন্য আমার অনেক ভাল লাগে। আমি আমার গ্রামের মানুষের পক্ষ থেকে দোয়া করি দাইঘরের আরো উন্নতি হোক। আমরা গ্রামের মহিলারা আমাদের সন্তানদের নিয়ে ভাল থাকতে পারি।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter