তামাক পণ্য কারখানা দ্রত স্থান পরিবর্তন ও আইন
জর্দা এবং গুল কারখানা খুব দ্রত স্থান পরিবর্তন করে। কারখানার ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন বা ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ব্যবহার করে ব্যবসা করছে না। প্রচুর অনিয়ম রয়েছে এসব কারখানার উৎপাদন স্থানে। নাম, ঠিকানা, সাইনবোর্ড নাই। যে কোন ভাবে ব্যাপকহারে উৎপাদন করছে। তামাক পণ্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যে কোন পানের দোকানে কোন রকম বিধি নিষেধ ছাড়া জর্দা, গুল ও সাদাপাতা দেখা যায়। জর্দা, গুল ভ্যাট ও করের আওতাধীন পণ্য। এসব পণ্যের উপর ৬০% সম্পূরক শুল্ক, ১৫% ভ্যাট, ও ১% সারচার্জ নির্ধারীত রয়েছে। এ কর পরিশোধিত হবে কারখানার মাধ্যমে। প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো জর্দা, গুলের কারখানার নামে কর আদায় হচ্ছে কি না?
ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের ফলে ক্ষতি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য থেকে জানা যায় যে মুখের ক্যান্সারের প্রধান কারণ ধোঁয়াবিহীন তামাক। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এ রোগের প্রাদূর্ভাব সব চেয়ে বেশী। প্রতি বছর এ অঞ্চলে ৯৫,০০০ মানুষ আক্রান্ত হয়। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণার মতে মুখের ক্যান্সারে অর্ধেকই তামাক সেবনের সাথে যুক্ত। গরীবরাই মুখের ক্যান্সারে বেশী আক্রান্ত হয় কারণ এরাই ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনে বেশী অভ্যস্ত। এশিয়া মহাদেশে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে যে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সেবনকারী মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশী মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন। মৃত শিশু জন্মের সাথে গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের সম্পর্ক রয়েছে। ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের সাথে যুক্ত আন্যান্য রোগের মধ্য রয়েছে দাঁতের ক্যান্সার, মাড়ির ক্ষত, উচ্চ রক্তচাপ, ওরাল সাবকিউটিনাস ফাইব্রোসিস (ওএসএফ) মুখ এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল এর সংজ্ঞা অনুযায়ী “তামাক দ্রব্য” বলতে বুঝায় আংশিক আথবা পরিপূর্ণভাবে কাঁচামাল হিসাবে তামাক ব্যবহার করে ধূমপান, চুষে, চিবিয়ে অথবা নাকে শুকে সেবনীয় দ্রব্য। ২০০৩ সালে প্রণীত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল চুক্তিতে বাংলাদেশ ছিল প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। ২০০৪ সালে অনুস্বাক্ষরের পরেও বাংলাদেশ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০৫ মোতাবেক ২০০৬ সালে নীতি প্রণীত হয়। পূর্ববতী আইনের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা ছিল এ আইনে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য সম্পর্ক কোন ব্যবস্থা ছিল না। ফলে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যেমন-গুল, জর্দা এবং খৈণী যা অধিকাংশ মানুষ সেবন করে সে সব সম্পর্কে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোন সুযোগ ছিল না। ২০১৩ সালে নতুন আইন ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনী সহ) সংসদে পাশ হয়। সংশোধিত আইনে সব রকম ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ধোঁয়াযুক্ত তামাকসহ ধোঁয়াবিহীন তামাক যেমন-গুল, জর্দা, খৈণী এবং সাদাপাতাও তামাকজাত দ্রব্য হিসাবে গণ্য করা হবে। আইন সংশোধনের ফলে সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য একই আইনের আওতায় নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এর আলোকে আইনে নিম্নলিখিত ধারা নিয়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করা যেতে পারে বলে তাবিনাজ মনে করছে:
১. আইনের ৫নং ধারা: তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বিধান বলা আছে। তাবিনাজের সংগৃহীত তথ্য ও ছবিসহ জর্দা ও গুলের ছাপানো কাগজ (ক্যালেন্ডার), দেয়াল লিখনি দেখা গেছে। তাই আইনের মাধ্যমে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষেত্রেও বিধান মোতাবেক তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সর্ম্পূণ নিষিদ্ধ।
২. আইনের ৬ নং ধারা ক: অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির নিকট বা দ্বারা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আমরা প্রতিনিয়ত শিশুদের দ্বারা তামাক পণ্য ক্রয় বিক্রয় করতে দেখতে পাই যা আইনের সর্ম্পূণ নিষিদ্ধ রয়েছে। শিশুদের দ্বারা তামাক পণ্য জর্দা, গুল, সাদাপাতা, বিড়ি, সিগারেট, ক্রয় বিক্রয় আইনী ভাবে বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
৩. আইনের ১০ নং ধারা: তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষতি সম্পর্কিত সচিত্র সতর্কবাণী মূদ্রণ আগামী মার্চ ২০১৬ থেকে এ আইন কার্যকর হবে। এই ধারা জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক।
৪. আইনের ১২ নং ধারা: তামাক ও তামাক জাতীয় ফসল উৎপাদন ও ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণ। তামাক চাষ জমি, পরিবেশ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতি করে আসছে। সুতরাং তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরা ‘তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা’ প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
আইন বাস্তবায়ন এর সহায়তা করার পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের অনেক কিছু করার আছে যা অতি জরুরী-
- জেলা, উপজেলা টাস্কফোর্সের সভায় ধোঁয়াবিহীন তামাককে নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসাবে আনা
- ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যগুলি ধোঁয়াযুক্ত তামাকের মতোই স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং এগুলো নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।
- ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শহরে ও গ্রামের নারীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
- তামাক কোম্পানীর বাজরজাতকরণের কৌশল সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
- ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আইনের বাধ্যবাধকতাসমূহ শক্তভাবে প্রয়োগ করা।
- ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন প্রচারণা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা বিক্রির ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা।