আরশিনগর বিদ্যাঘরে কৃষকের হারিয়ে যাওয়া সীম গবেষণা এবং বীজ বিতরন


সীম বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি পুষ্টিকর সব্জি। সীম সাধারনত এলাকা ভেদে ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিন মাসের মধ্যে চারা করে বা সরাসরি মাধা করে বীজ বপন /রোপন করা যায়। সীমের বীজ সংগ্রহ করা যায় ফাল্গুন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত। সীম ছাড়াও সীমের বীজ কাচা এবং পাকা অবস্থায় বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রতিটি জেলায় কম-বেশি সীম হয়। সীম রবি মৌসুমে গ্রামের কৃষকের প্রতিটি বাড়ির চালে, বিশেষ করে রান্না ঘরের চালে,বড় গাছে এবং ঝাংলা দিয়ে করে থাকেন। সীম আবাদ করতে পরিচর্যা খুবই কম করতে হয়। সীম গাছে পোকা মাকড়ের আক্রমন তেমন হয় না,হলেও শুধুমাত্র ছাই ছিটিয়ে ব্যবহার করলেই হয়।

বাংলাদেশে এক সময় অনেক সীমের জাত ছিল, জাতগুলোর মধ্যে এলাকা ভেদে বিভিন্ন বৈচিত্র্যর ছিল যেমন কোনটা ছুড়ির মতো দেখতে তার নাম ছুড়ি সীম,কোনটা পুঁটি মাছের মতো দেখতে তার নাম পুঁটি সীম,কোনটা বগার ঠোটের মতো দেখতে তার নাম বগার ঠোট সীম এছাড়াও স্থান,মৌসুম এবং সময়কাল ভেদেও কিছু সীমের জাতের নাম শুনা যেত যেমন আশ্বিনী সীম,কার্তিক সীম,যশোরী সীম,চিটাগাং সীম,রুপবান সীম ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিক কৃষি এবং বান্যিজিক একক চাষাবাদের ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিটি স্তরের মানুষের খাবারের অন্যতম এই সীমের জাতগুলো আজ বিলুপ্তির পথে।

আরশিনগর বিদ্যাঘরে গত বছর ১৫ টি স্থানীয় জাতের সীম গবেষণা করা হয়েছিল। ফলাফলে দেখা গিয়েছিল স্বাদ এবং উৎপাদনশীলতায় খুবই ভাল।  এবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষ করে নোয়াখালি, সীতাকুন্ড এবং চট্রগাম থেকে আরও ৮ টি জাত সংগ্রহ করে বিদ্যাঘরের ভিতরে গবেষণার কাজ চলছে। এই জাত গুলোর বীজ গজানোর হার ১০০% এবং প্রতিটি জাতের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি এই জাতগুলোর বীজ নয়াকৃষি গ্রামে মৌসুমের শুরুতেই কৃষক পর্যায়ে বিতরন করা হয়েছে।

গবেষণা করা জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১.নলডোক সীম ২.কার্তিক সীম ৩.পুঁটি সীম ৪.কাতলা সীম ৫.আশ্বিনী সীম ৬.ফুটকা সীম ৭.বীছি সীম ৮. কাইকা সীম ৯.বগার ঠোট সীম১০.ছুড়ি সীম ১১. চিটাগাং সীম ১২.বাইগ সীম ১৩. আইকুই সীম ১৪. গিরাগান্ডি সীম ১৫.খেইয়া সীম ১৬. মুগুরিয়া সীম ১৭.বালি সীম  ১৮.কাতিকোটা সীম ১৯.চিট্রংগা ২০.এবং বারিয়া সীম। এছাড়াও পাবনা -নাটোর এলাকা থেকেও যশোরী সীম, অটো সীম, এবং রুপবান সীমের জাত সংগ্রহ করে গবেষণা জন্য ৫০০০ (পাচঁ হাজার) প্যাকেটে বীজ দেয়া হয়েছিল।

পাবনা জেলা মূলত খড়া প্রবন এলাকা। বর্তমানে জলবায়ুর অনেক পরিবর্তন হয়ে অসময়ে বৃষ্টি, অতি খড়া, অতি কুয়াশা, অসময়ে বন্যা হচ্ছে এর ফলে চাষাবাদে কৃষকের অনেক পরিবর্তন আসছে,এই জলবায়ু মোকাবেলা করতে উবিনীগ-নয়াকৃষি আন্দোলনের বীজ সম্পদ কেন্দ্র বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে কৃষকের চাহিদা অনুসারে মৌসুম অনুপাতে বিভিন্ন স্থানীয় বীজের জাত নয়াকৃষির কৃষকরা নিয়ে করতে পারছে এবং আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারছে।

আরশিনগর বিদ্যাঘরে রবি মৌসুম,খরিপ ১, এবং খরিপ ২ এ ধান এবং শাক-সব্জির গবেষণা করা হয়। গবেষণায় অন্যতম হচ্ছে ধান গবেষণা, মরিচ,বেগুন,সীম, মসলা জাতীয়,ডাল জাতীয়, কম সময়ে ফলন আসে, কুড়িয়ে পাওয়া শাক- সবজি সহ বিভিন্ন জাত নিয়ে। এবং জাত গুলো কৃষক পর্যায়ে বিনীময় করে বীজের পরিমান বৃদ্ধি এবং জাত বৃদ্ধি করে বৈচিত্র্য বাড়ছে।

ভাইয়ার পরামর্শে সীমের জাতের উপর রেটিং করা হয়।

কেন্দ্রের কর্মী এবং নয়াকৃষি কৃষকরা রেটিং করতে সহযোগিতা করেন।

 রেটিং ১-১০

নং

জাতের নাম

উৎপাদন

খেতে ভাল

রান্না করতে সুবিধা

বাজার চাহিদা

১.

পুঁটি সীম

২.

নলডোক সীম

৩.

কাতলা সীম

৪.

কার্তিক সীম

১০

৫.

আশ্বিনী সীম

১০

৬.

ফুটকা সীম

১০

৭.

কাইকা সীম

১০

৮.

বগার ঠোট সীম

১০

১০

১০

৯.

ছুড়ি সীম

১০

১০

১০.

বীছি সীম

১০

১০

১০

১১.

চিটাগাং সীম

১২.

বাইগ সীম

১৩.

আইকুই সীম

১০

১৪.

গিরাগান্ডি সীম

১০

১৫.

খৈইয়া সীম

১৬.

মুগুরিয়া সীম

১০

১৭.

বালি সীম

১০

১৮.

কাতিকোটা সীম

১০

১৯.

বারিয়া সীম

১০

২০.

চিট্রংগা সীম

২১.

যশোরী সীম

১০

১০

২২.

অটো সীম

২৩.

রুপবান সীম

১০

আমাদের ধান-সব্জি, তেল, ডাল সহ খাদ্য ফসলের যে বিশাল বীজ সম্পদ আছে তা রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য। কারন স্থানীয় জাতের বীজ ছাড়া কৃষি অসম্ভব।  বীজ সম্পদ, স্থানীয় জাতের বীজ আমাদের নিজেদের রক্ষা করা এবং রক্ষা করতে নিজ নিজ স্হান থেকে সহযোগিতা করা খুবই জরুরি।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter