সাধারণ লবনের অসাধারণ গুরুত্ব
লবন জীবনের জন্য অপরিহার্য। লবন ছাড়া মানব দেহ অচল। ঘাম, থুথু, লালা, রক্ত, অশ্রু সহ শরীরের যাবতীয় তরল পদার্থের অবিচ্ছেদ্য অংশ লবন। তবে বিশেষ কোম্পানির লবন সেবনে মেধা বিকাশ হয় এ কথা বিভ্রান্তি মূলক এবং বিরক্তি কর।
প্রধানতঃ তিন ধরনের লবন মানুষ সেবন করে, যেমন সাধারন লবন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড, টেষ্ঠিং পাউডার বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট এবং টেষ্ঠিং সল্ট বা সোডিয়াম গ্লুটামেট।
সাধারণ লবনঃ
সাধারণ লবন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড এতো ব্যাপক ভাবে ব্যবহার হয় যে এর আসল ব্যবহার জিজ্ঞাসা করলে ধাঁধাঁয় পড়তে হয়। যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে এমন একটি বস্তুর নাম করুন যা মসলা হিসাবে বেশি ব্যবহার হয় অথচ মসলার তালিকায় এর নাম নাই। সে বস্তুটি কি? চিন্তার বিষয়! চট করে নামটা মনে আসেনা। তবে একটু ভাবলেই যে নামটি মনে হয় তা লবন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড ছাড়া আর কিছু নয়। খাদ্য সাংরক্ষন এবং আরো অনেক শিল্পে লবন ব্যবহার হয়। এমন কি শীত প্রধান দেশে রাস্তায় বরফ গলাতে ও লবন ব্যবহার হয়।
এ পৃথিবীকে সকল জীব অণুজীব ও উদ্ভিদের বস-বাসের উপযোগী করতে লবনের ভূমিকা অতূলনীয়। সমুদ্রের উপরে মুক্ত আকাশে বায়ুতে ভাসমান জলীয় বাস্প ঘনিভূত করে মেঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের আর্শীবাদে এ পৃথিবীকে সুজলা সুফলা করছে লবন। তাইতো সুকন্যা যথার্থই পিতাকে লবনের মতো ভাল বাসতেন। কিন্তু কথায় বলেনা-বেশী ভাল, ভাল-না। লবন ছাড়া যেমন আমাদের এক মূহুর্ত ও চলেনা, তেমনই বেশী লবন মারাক্তক স্বাস্থ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক সবের্বাচ্চ পাঁচ গ্রাম লবন প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের মানুষ একটু বেশী লবন সেবন করেন। গড়ে দৈনিক মাথা পিছু ১২ গ্রাম লবন সোবন করেন। যা প্রযোজনের তুলনায় দ্বিগুনের ও বেশী। মাত্রাতিরিক্ত লবন সোবনের ফলে হৃদ রোগ, কিডনি ষ্টোন, ষ্ট্রোক, পাকস্থলীর ক্যাান্সার, অষ্টিওপোরোসিস, ডায়াবেটিস, গাউট, অবিসিটি ইত্যাদি অসংক্রামক রোগ হতে পারে। তাই রোগ মুক্ত সুস্থ জীবন যাপনের জন্য মাত্রাতিরিক্ত লবন সেবন থেকে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়।
টেষ্টিং পাউডারঃ
টেষ্টিং পাউডার বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেটের আরো অনেক জনপ্রিয় নাম আছে যেমন বেকিং সোডা, বাইকার্বোনেট অবসোডা, ব্রেডসোডা, কুকিংসোডা ইত্যাদি। টেষ্ঠিং পাউডারের নামের সাথেই এর বহুল ব্যবহারের ইঙ্গিত ও পাওয়া যায়। পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, চিপস এবং অন্যান্য কনফেকশনারি দ্রবোর সাথে ব্যাপক ভাবে টেষ্টিং পাউডার ব্যবহার হয়। বুক জ্বালা, এসিডিটি, পেট ফাাঁপা ইত্যাদি সমস্যায় এন্টাসিড হিসাবে ও টেষ্টিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। তবে টেষ্টিং পাউডারের অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মাথা ধরা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, ঘন ঘন প্রশ্রাবের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, বমি বমি ভাব, মানসিক অস্থিতা, শ্বাসকষ্ট, শারীরিক দূর্বলতা, ইত্যাদি। দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়ায় লিভারের ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি পাথর ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুস্থ জীবন যাপনের স্বার্থে টেষ্টিং পাউডারের মত ঝুঁকি পূর্ণ এাডিটিভ থেকে দূরে থাকা উচিত।
টেষ্টিং সল্টঃ
টেষ্টিং সল্ট যা সোডিয়াম গ্লুটামেট সাধারনত খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধি বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। প্রায় সব ধরনের তৈরী খাবার যেমন কৌটাভার্তি স্যুপ, চিপস, ক্রেকার, নুডলস, পিঠা, কেক, সিঙ্গারা, জিলাপি, পাউরুটি, পান কেক, বনরুটি, তন্দুর, সালাদ, ইত্যাদি তৈয়ার করতে টেষ্টিং সল্ট ব্যাবহার করা হয়। এমন কি শিশু খাদ্যের মধ্যে ও টেষ্ঠিং সল্ট ব্যবহার করা হয়। চাইনিজ রেস্তোয়ায় প্রায় সব খাবারে টেষ্টিং সল্ট ব্যবহার হয়। টেষ্টিং সল্টের মধ্যে ৭৮% গ্লুটামিক এসিড, ২১% সোডিয়াম এবং ১% অন্যান্য পদার্থ রয়েছে। মূলতঃ টেষ্টিং সল্ট একটি উত্তেজনা সৃষ্টি কারি পদার্থ। এ বিষ মস্তিস্কের কোষের উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। স্মৃতি শক্তি বিনষ্ট করে। প্রাথমিক ভাবে যে সব স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ মাথা ধরা, ক্লান্তিভাব, বিষন্নতা, হত্তবুদ্ধি, শ্বাস কষ্ট, বমিবমি ভাব, হৃদকম্পন, তন্দ্রাভাব, ইত্যাদি। ১৯০৮ সালে জাপানে প্রথম টেষ্টিং সল্ট আবিস্কার হয়। আস্তে আস্তে বিশ্বব্যাপি এর ব্যবহার বিস্তার লাভ করে। টেষ্টিং সল্ট ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে বিশ্ব ব্যাপি ডায়াবেটিস রোগ বিস্তারের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা যায়। এ ছাড়া ও আলঝাইমার, পার্কিনসন, লুখেরিগ, ক্যান্সার, সহ আরো অনেক রোগ বিস্তারের সাথে টেষ্টিং সল্ট সেবনের সম্পর্ক দেখা যায়। সুস্থ্য জীবন যাপনের স্বার্থে টেষ্টিং সল্ট যুক্ত খাবার পরিহার করা প্রয়োজন।