অতুলনীয় তেঁতুল ও তার ওষধি গুণ


তেঁতুল শিম্বক গোত্রের গাছ। এ গোত্রের গাছ উদ্ভিদ জগতে আমিষের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ উদ্ভিদের শিকড়ে ব্যাকটেরিয়া বাস করে। নাইট্রোজেন সংশ্লেষন করে। মাটির উৎপাদিকা শক্তি বাড়ায়।

তেঁতুল গাছের সব কিছুই ব্যবহার করা যায়, এখানেই গাছটির গুরুত্ব। এর প্রতিটি অঙ্গে -- যেমন, কাণ্ড, শিকড়, ছাল, পাতা, ফুল, ফল ও বীজে পুষ্টি এবং ওষুধি গুণ রয়েছে। শিল্পে অথবা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হয়।

তেঁতুল বহুগুণে সমৃদ্ধ সুস্বাদু একটি ফল। নানা রকম খাবারে তেঁতুল ব্যবহার হয়। তেঁতুলের শাঁস খাদ্য সংরক্ষণ, খাবারের স্বাদ বাড়াতে, কনফেকশনারীতে, তরকারি রান্না করতে, টক আচার চাটনি বানাতে, খাবার সুগন্ধি যুক্ত করতে ব্যবহার হয়। তেঁতুলে ঘ্রাণ এবং স্বাদের ভিন্ন একটা আকর্ষণ আছে যাতে আমাদের জিহ্বায় পানি আসে।

খাবারে সুঘ্রান সৃষ্টি করতে তেঁতুল অনন্য। তেঁতুলের শাঁস যেমন তাজা ব্যবহার করা হয় তেমনই আবার সরবত, জ্যাম, জেলি, মিষ্টি ইত্যাদি তৈয়ার করতেও ব্যবহার হয়।


তেঁতুল


তেঁতুলের পাকা ফলে ৩০-৫০% শাঁস, আঁশ এবং খোসা ১১-৩০% এবং বীজ ২৫-৪০%। চিনির পরিমাণ ৩০-৪০%। শাঁসে সাধারণভাবে ২০.৬% পানি, ৩.১% প্রটিন, ০.৪% চর্বি, ৭০.৭% শ্বেতসার, ৩.০% আঁশ এবং ২.১% ছাই। অবস্থানও জাত ভেদে এ পরিমাণের ব্যতিক্রম হতে পারে।

তেঁতুলের শাঁসে নানা রকম খনিজ লবণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য হচ্ছে: এলুমিনিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যালশিয়াম, কপার, কোবাল্ট, ক্রমিয়াম, আয়রণ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম, সোডিয়াম, নিকেল, ফসফরাস, লেড, ষ্ট্রনশিয়াম, টাইটানিয়াম এবং জিঙ্ক।

তেঁতুলে শাঁস বিভিন্ন এমিনোত্রসিড সমৃদ্ধ খাদ্য। শুকনো শাঁসে (মিলিগ্রাম/গ্রাম) আছে প্রটিন ১১৬.০, এসপারটিক এসিড ১২.০০, গ্লুটামিক এসিড ১৬.৭০, সেরাইন ৬.৮৮, গ্লাইসিন ৫.১৫, হিসটাইডিন ৩.৩৭, আরজিনাইন ৮.৭৪, থিওনাইন ৬.০৫, এলানাইন ৬.২০, প্রলাইন ৭.৬১, র্টাইরোসিন ৪.৩৪, ভ্যালাইন ৬.১৭, মিথেনাইন ২.৪৮, ইসোলিউসাইন ৫.২০, লিউসাইন ৫.৮৯, ফিনাইলএলানাইন ৪৮.৭৮, লাইসিন ৮.২২, সিসটাইন ১.৩৫ এবং ট্রিপেেটাফেন ১.০৪।

তেঁতুলের শাঁস হজমি, বায়ুযোগহর (কারমিনাটিভ), ল্যাকজেটিভ, কাশিতুলিয়া ফেলার (একশপেকটোরান্ট) জন্য সহায়ক এবং রক্ত বর্ধক টনিক হিসাবে ব্যবহার হয়। গলা ব্যাথা নিবারনের জন্য গরম পানিতে মিশিয়ে কুলকুচি করতে হয়। রিউমটিজম চিকিৎসায় ক্রিম হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মাদকাসক্তির প্রমত্ততা ও ধুতুরার বিষ নিবারনের জন্য তেতুঁলের সরবত ব্যবহার করা হয়। পক্ষাঘাত ও কুষ্ঠরোগ চিকিৎসায় তেঁতুল ব্যবহার করা হয়।

তেঁতুলের পাতা ও ছালের রস রোগ প্রতিরোধ শক্তি (এন্টিঅকসিডেন্ট), যকৃতের প্রদাহ নিবারক (এন্টি-হেপাটিক), উত্তেজনা নিবারক (এন্টি-ইনফ্লামেটরি), পরিব্যক্তি প্রতিরোধক (এন্টি-মিউটাজেনিক), জ্বর এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধক (এন্টি-ডায়াবেটিক) উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তেঁতুলের বীজ টেক্সটাইল, কাগজ এবং পাট শিল্পে ব্যবহার হয়।

তেঁতুল বাংলাদেশের নিজস্ব গাছ। অমূল্য সম্পদ। নান্দনিক দৃষ্টি কোন থেকে ও এর আকর্ষণ বিদেশ থেকে আহরিত অন্য যে কোন গাছের চেয়ে বেশী। ঝড় তুফানেও তেঁতুল অন্য সব গাছের চেয়ে বেশী সহনশীল। তাই দেশের সর্বত্র তেঁতুল গাছ বিস্তারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter