সামাজিক বীজ উৎপাদন এবং বাজারজাত করণ
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভরশীল দেশ। আর সেই কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে হলে কৃষকের হাতে স্থানীয় জাতের বীজ অবশ্যই থাকতে হবে। স্থানীয় বীজ সম্পর্কে নয়াকৃষি কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাল বীজ দিয়েই ভাল কৃষিসমাজ গড়া সম্ভব। নিজেদের হাতে বীজ থাকলে সামাজিক ভাবে বীজ কেন্দ্রিক কোন ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। বিভিন্ন দুর্যোগ সময়ে বীজ থাকার অর্থ অনায়াসে দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা।
সামাজিক ভাবে অর্থাৎ সকলে মিলে বীজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়া এবং কৃষকের ক্ষেতে এবং মাঠে বীজ রাখার কাজ নয়াকৃষির শক্তির ভিত্তি। নয়াকৃষি আন্দোলনে এই দায়িত্ব ও কাজ প্রাণবৈচিত্রের সামাজিক ব্যবস্থাপনা হিসাবে পরিচিত। এ কাজের জন্য সম্প্রতি পাবনা এবং নাটোর জেলায় বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৩টি দল গঠন করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে কৃষকের চাহিদা অনুসারে স্থানীয় জাতে বীজ এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষন। এই দল গুলোতে সদস্য রয়েছে ৩০ জন। দলগুলো বীজ কেন্দ্রিক চাষাবাদ করে। দলের কৃষকদের মূল লক্ষ্য স্থানীয় বীজগুলো রক্ষা, পুনরুৎপাদন ও বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রত্যেকের হাতে স্থানীয় বীজ পোঁছানো এবং দেশীয় জাতের ফসল চাষাবাদ নিশ্চিত করা। নয়াকৃষি ছাড়াও অন্যান্য কৃষক এমনকি আধুনিক চাষাবাদের অভ্যস্ত কৃষদের কাছেও বর্তমানে নয়াকৃষি কৃষকের স্থানীয় হাতের বীজের কদর বাড়ছে। কারন নয়াকৃষির কৃষকের বীজ মানেই সুস্থ-সবল বীজ এবং গজানোর হার থাকে প্রায় ১০০% নিশ্চিত। যারফলে বাজারে এই বীজের দামও বেশি। নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকরা নিয়মিত চাষাবাদের পাশে এক খণ্ড জমি শুধুমাত্র বীজ উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত রাখে। যার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়। বীজকেন্দ্রিক চাষাবাদের জন্য অনেক কৃষকই জমি ব্যবহার করছে। একদিকে নিজের বীজের জন্য কৃষককে কোন চিন্তা করতে হচ্ছেনা অন্যদিকে বাজারে স্থানীয় বাজার স্থানীয় কৃষকদের নিকটও তারা বীজ বিক্রয় করতে পারছে। বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে আগের চেয়ে বীজের পরিমান দ্বিগুন হয়েছে। কৃষকরা বাজারজাত করণের লক্ষ্যে কৃষক দল গঠনের মাধ্যমে বাজারে বিক্রয় করছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায় দলগুলোর পরিকল্পনায় আছে যৌথভাবে গ্রামের হাটগুলোতে একটি করে নয়াকৃষি বীজের বিক্রয় কেন্দ্র (দোকান) তৈরি করা। বীজ উৎপাদন কেন্দ্রিক চাষাবাদ এবং দানাদার শস্য উৎপাদন বাড়ানো। কৃষকদের মতে প্রতিটি গ্রামে ১৫-২০ জন করে বীজ উৎপাদনকারী কৃষক থাকলে সেই গ্রামে স্থানীয় জাতের বীজের আর কোন অভাব থাকবে না। এরফলে বাহর থেকে কম্পানির বীজগুলোও গ্রামে আর ঢুকতে পারবে না।
কৃষকদের প্রচেষ্টা এবং ইচ্ছা শক্তিই পারে একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানির বীজ এবং আধুনিক কৃষির বিপক্ষে রুখে দাড়াতে। নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকদের এই হাতের বীজ ধরে রাখার সুন্দর চেষ্টা কে সাধুবাদ জানাই। আমরা নয়াকৃষি কৃষকদের সাথে আছি। আপনি আছেন তো ?