বাংলাদেশে যব বা বার্লি চাষের সম্ভাবনা
বহুকাল থেকে বাংলাদেশে বার্লি বা যবের (Hardeum vulgare) চাষ চলে আসছে। এই শস্য বাঙলাদেশে পায়রা নামেও পরিচিত। বর্তমানে আবাদি জমির প্রায় ০.১০% জুড়ে বার্লির চাষ হয়। বার্লি রবি মৌসুমের ফসল। তবে বর্তমানে বেরো ধান, গম, ভুট্টা এবং অন্যান্য ফসলের চাষ বিস্তারের ফলে বার্লির আবাদ কমছে। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ৮৯২ একর জমিতে বার্লির আবাদ হয় এবং ৩২০ মেট্রিক টন বার্লি উৎপাদিত হয় (বিবিএস ২০১১-২০১২)। সব চেয়ে বেশী বার্লির আবাদ হয় টাঙ্গাইল জেলায় (৪৮০ একর), এর পরে ঢাকা জেলায় (৩৬৩ একর) এবং পাবনা জেলায় (৪৯ একর)।
বার্লি দিয়ে রুটি তৈয়ার হয়। ছাতু, হিসাবে ও বার্লির ব্যবহার চলে আসছে বহুকাল থেকে। শিশু খাদ্য হিসাবেও রবিনসন বার্লি, ওভালটিন, হরলিক্স, হ্যামিলটনবার্লি এবং আলবার্টাবার্লির ও মূল উপাদান বার্লি বা যব।
বার্লি একটি পুষ্টিকর খাদ্য। বার্লির মধ্যে আছে ৬১.৮% শর্করা, ১৩.১% আমিষ, অদ্রবনীয় আঁশ ৮.৮৫%, আর্দতা ৭.৫৫%, দ্রবনীয় আঁশ ৮.৮৫% , পেনটোসান ৪.২৮%, গ্লুকান ৪.২৬%, লিপিড ২.৯২% এবং ছাই ১.৮৯% । ডায়াবেটিস রোগী এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বার্লি একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ পথ্য। বার্লির মধ্যে পানিতে দ্রবনীয় আঁশ বিটা গ্লুকান এবং করোনেল রয়েছে যা রক্তের কোলেষ্ট্রল কমাতে সহায়তা করে।
বিভিন্ন খাদ্য শিল্পে বার্লির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে উৎপাদিত বার্লিতে দেশের চাহিদা পূরণ হয়না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই এদেশে বার্লির চাষ বিস্তারের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে রবি মৌসুমে সেখানে অন্য কোন ফসল হয় না। সেখানে বার্লির আবাদ বিস্তার করা যেতে পারে। কারণ বার্লি ফসল যথেষ্ট লবণ সহ্য করতে পারে। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী,এবং বরগুনা জেলায় প্রায় একলাখ একর জমিতে বার্লি আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসে রোপা আমন ধান কাটার পরে এ জমিতে বার্লির আবাদ করা যায়। চৈত্র মাসে বার্লি ফসল কাটার পরে ঐ জমিতে আউশ ধানের আবাদ হতে পারে। আউশ ধানের পরে রোপা আমন ধানের আবাদ হবে। ফলে বর্তমানে প্রচলিত এক ফসল রোপা আমন ধানের জমি তিন ফসলা জমিতে (বার্লি-আউশ ধান- রোপা আমন ধান) রূপান্তরের সম্ভাবনা রয়েছে।
তাছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ইদানীংকালে বৈশ্বিক তাপ মাত্রা বৃদ্ধির ফলে গমের ফলন ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণ ভাবে খরা এবং উচ্চ তাপমাত্রায় পরিবেশে গমের চেয়ে বার্লি বেশী সহনশীল। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে গমের পরিবর্তে বার্লির উপযুক্ত জাত বাছাই পরীক্ষা পরিচালনা করা যেতে পারে।
খরা প্রবন চরাঞ্চলে কিছু কিছু স্থানীয় জাতের বার্লির চাষ হচ্ছে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সাতটি বার্লির জাত (বারি বার্লি ১- বারি বার্লি ৭) ছাড় করা হয়েছে। বৈশ্বিক তাপ মাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ূ পরিবর্তন জনিত সমস্যা মোকাবেলার জন্য বার্লির তাপ, খরা ও রোগ বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত বাছাই গবেষণা জোরদার করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংগ্রহে বার্লির ১৮৯ টি একসেশন আছে। এ সমৃদ্ধ সংগ্রহ থেকে বাছাই করা কিছু একসেশন নিয়ে কৃষকদের সহযোগিতায় অংশদারিত্ব মূলক জাত বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।
বার্লি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশজ চাহিদা পূরণ করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যায়। অন্যদিকে অষ্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান এবং সৌদি আরবে বার্লি রফতানির উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ভাবে বার্লি একটি উচ্চমূল্য ফসল হিসাবে গণ্য। বার্লির উৎপাদন বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
তা ছাড়া তামাক চাষ বাদ দিয়ে সে জমিতেও বার্লির আবাদ বিস্তার করা যেতে পারে।