ধেয়ে আসছে ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার
বিশ্বব্যাপি এইডস এবং ম্যালেরিয়া মিলে যত মানুষ মারা যায় তার চেয়ে বেশী মানুষ মারা যায় ক্যান্সারে। এ চিত্র বাংলাদেশে আরো ভয়াবহ। এখন দেশে ১৩-১৫ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী আছে। বছরে প্রায় দু’লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। দিনে দিনে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০০৫ সালে মৃত মানুষের ৭.৫% ছিল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। যে হারে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এ হারে বাড়লে ২০৩০ সালে এ হার হবে ১৩%। ক্যান্সার মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গে দেখা যায়। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে ফুসফুসে ও মুখের ক্যান্সার সব চেয়ে বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ু এবং ব্রেষ্ট ক্যান্সার সবচেয়ে বেশী হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয় বহুল।
মানব দেহে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন ও বর্ধনের ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বিষন্নতায় (emotional stagnation) ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। যখন কোন ব্যাক্তির দেহে উৎসেচক (enzyme) এর ঘাটতি হয় তখন শরীরে এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ উৎপাদিত হয়। ফলে ক্যান্সার হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শরীরে ঋনাতœক শক্তি সৃষ্টি হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধির সূচনা হয়। আরো যে সব কারণে ক্যান্সার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অলস জীবন যাপন, আধ্যাত্বিক চিন্তা-চেতনা বিহীন জীবন, বিষাক্ত খাদ্য ও পানীয় সেবন, ইত্যাদি।
বিষাক্ত খাদ্য ও পানীয়:
ক. কোমল পানীয়-
ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বাজারে প্রচলিত কোমল পানীয় যার মধ্যে থাকে পোড়া চিনি, ঘন চিনি, প্রিজারভেটিভ এবং আরো অনেক মারাত্বক রাসায়নিক দ্রব্য। এসব পানীয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
খ. নেশা দ্রব্য:
নেশাজাতীয় দ্রব্য যেমন তামাক, মদ, ড্রাগ, ইত্যাদি। এসব নেশা দ্রব্য কোষের মৌলিক উপাদান ডি এন এ ভেঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত বর্ধন প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটায়, ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়।
গ. পটেটো চিপস্:
চাক চাক করে কাটা আলুর টুকরোর সাথে টেস্টিং পাওডার, লবণ, তেল, চর্বি বিষাক্ত রং ও গন্ধ মিশিয়ে ভাজা হয়। সস্তা পলিথিন প্যাকেটে ভরে এসব চিপস বাজারজাত করা হয়। লবণ, তেল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য যখন পলিথিনের মধ্যে রাখা হয় তখন তেলে দ্রবনীয় পলিথিনের ক্ষতিকর পদার্থ চিপসের সাথে মিশে ক্ষতিকর যৌগিক পদার্থ সৃিষ্ট হয়। এ চিপস খেলে ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বাড়ে।
ঘ. বার্গার, হটডগ:
প্রক্রিয়াজাত মাংস ভিত্তিক খাদ্য যেমন হটডগ, বার্গার, বিফরোল, গ্রিল, বার্বিকিউ, ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে টেস্টিংসল্ট বা মনো সোডিয়াম গ্লুটামেট থাকে যা মানব দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
ঙ. বালাইনাশক যুক্ত খাদ্য শস্য:
ফল মূল, শাকসবজিসহ সব রকম খাদ্যশস্য-যা বালাইনাশক প্রয়োগ করে উৎপাদন করা হয় তার মধ্যে মারাত্বক বিষ থাকে। অধিকাংশ বালাইনাশক বিষই কার্সিনোজেন যা মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
চ. পোড়া তেল:
সিঙ্গারা, সামুচা, পুরি, পেঁয়াজু, বুটভাজা, বেগুনী, জিলাপি, বুনদিয়া, আমৃতি, ইত্যাদি তেলে ভাজা হয়। একই তেল বার বার ব্যবহার করা হয়। পোড়া তেলে ভাজা খাবার খেলে ক্যান্সার হতে পারে।
ছ. শরবত:
বাজারের খোলা শরবতে থাকে বিষাক্ত রং যা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
জ. প্রিজারবেটিভ: ফরমালিন এবং অন্যান্য প্রিজারভেটিব ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধি প্রাকৃতিক উপায়:
ক. বিষমুক্ত তাজা খাবার যেমন ফলমূল, শাক সবজি, দানা শস্য ইত্যাদি।
খ. নিম্ন গ্লাইসেমিক ও কম মিষ্টিযুক্ত খাদ্য।
গ. কম পরিমার্জিত খাবার গ্রহণ।
ঘ. গাঢ় সবুজ শাক সবজি যেমন পালংশাক, বাঁধা কপি, পুঁইশাক, লেটুস, ব্রকলি, ইত্যাদি।
ঙ. তাজা খাবার গজানো ছোলা বীজ, কচি শসা, ইত্যাদি উৎসেচক (বহুুসব) সমৃদ্ধ খাবার।
চ. কম রানা করা শাক সবজি।
ছ. তেলে ভাজা খাবার বর্জন করা।
জ. রোজা রেখে শরীর হালকা করা এবং লিভার ও পিত্তের বোঝা হালকা করা।
ঞ. যখন যেমন শরীরের চাহিদা বুঝে পরিমাণ মত পানি ও খাবার খওায়া।
ট. নিয়মিত শরীর চর্চা ও অনুশীলন করা।
ঠ. হাসি খুশী ও আনন্দময় জীবন যাপন করা।
ড. ত্রিফলা (আমলকি, হরিতকি, বহেরা) সেবন করা।
ঢ. অস্থির লাগলে স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখার জন্য অশ্ব গন্ধা ও তুলসী সেবন করা।
ণ. রক্ত পরিস্কার করার জন্য কাঁচা হলুদ সেবন করা।
ত. কাশি তুলিয়া ফেলার সহায়ক খাদ্য আদা, গোল মরিচ, বাসক, তুলসী সেবন করা।
থ. শরীর সার্বিক ভাবে বিষমুক্ত করার জন্য রসুন, গাজর, টমাটো, লেবু এবং গাঢ় সবুজ শাক সবজি নিয়মিত সেবন করা।
দ. কম লবণ, কম চিনি এবং কম প্রাণীজ চর্বি খাওয়ার অভ্যাস করা।
পরিশেষে বলা যায় যে, হালাল খাদ্য ক্যান্সার মুক্ত সু-স্বাস্থ্যের চাবি।সু-স্বাস্থ্য শুধু দীর্ঘ জীবনেরই পূর্ব শর্ত নয় বরং মান সম্মত জীবন ও নিশ্চিত হয়।