পশু পালনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে


খাদ্যের জন্য মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি মানব জাতীর বেহেশতি উপহার। কৃষির সাফল্যেই সভ্য জীবনের শুভ যাত্রা। কৃষির হাতেই মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা এবং নিরাপদ খাদ্য। এখনও পৃথিবী ব্যাপী প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জনের জীবিকা কৃষির উপরই নির্ভরশীল। পৃথিবীতে সাত বিলিয়নের অধিক মানুষের জন্য চার বিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদিত হয়। মানুষের জীবন মান উন্নয়নের সাথে সাথে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যেমন-ডিম, দুধ, মাংস ও মাছের চাহিদা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বাড়াতে পশু পালনে প্রচুর পরিমাণ ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে এ সব ওষুধ ব্যবহারে প্রাণীর ওজন বাড়ে, পশু খাদ্যের কার্যকারীতা বাড়ে, রোগ-বালাই কম হয় এবং রোগ-বালাই নিরাময় হয়। স্বল্প মাত্রায় এন্টিবায়োটিক খাদ্যে মিশিয়ে খাওয়ালে পশুর অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে, খাদ্যের কার্যকারীতা বাড়ে এবং পশু দ্রুত বড় হয়। তবে ব্যবহৃত ওষুধের বাড়তি অংশ ভোক্তার নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

  • মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
  • ক্যান্সার রোধ প্রবনতা বাড়ায়।
  • অধিক পরিবেশ সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করে।
  • বংশগত পরিবর্তন ত্বরান্বিত হয়।
  • এলার্জি সৃষ্টি করে।
  • টেরাটোজেনেসিটি ঘটায় ফলে বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম হয়।
  •  আন্ত্রিক ক্ষমতা কমে যায়।

ব্যাপকহারে পশুখাদ্যে এন্টিবায়োটিক মিশ্রনের ফলে খাদ্য বাহিত জীবানু যেমন: ১. সালমোনেলা, ২. ক্যামপাইরোব্যাকটর ও ৩. ই-কোলাই সমূহের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এসব এন্টিবায়োটিক রেজিষ্টান্ট ব্যাকটেরিয়া মানব দেহে রোগ সৃষ্টি করে যা নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল। বর্তমানে বাংলাদেশে ইরিথ্রোমাইসিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, স্টেপটোমাইসিন সহ ৪০ টির অধিক এন্টিবায়োটিক পশু খাদ্যে ব্যবহার হয়।

পশু পালনে ব্যবহৃত ওষুধ নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্ত রেজিট্রেশন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রাণীজ উৎসের খাদ্য যেমন- দুধ, মাংস ইত্যাদি ব্যবহারের কত দিন আগে থেকে ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে সে বিষয় সঠিক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। পশু চিকিৎসা, পশুপালন এবং পশু চিকিৎসার ওষুধের সাথে যুক্ত সকলের সার্বিক বিষয় সচেতনতা অত্যন্ত জরুরী।

মানুষ ও পোশা প্রাণীর স্বার্থে পশু পালন ও পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের রেজিষ্ট্রেশন, লেবেলিং, মনিটরিং, ওষুধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, ওষুধ ব্যবহার সঠিক সময় নির্ধারণ করা তথা মাঠ থেকে টেবিল পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদনের নিরাপদ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন প্রায়োজন। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য পশু খাদ্যে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

১. বন্ধু অনুজীব, প্রবায়োটিক, প্রিবায়োটিক এবং উৎসেচক সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২. সংক্রামক রোগ জীবানু মুক্ত পরিবেশে পশু লালন পালন করা এবং ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৩. পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পশু পালন এবং খোলা মেলা পরিবেশে পশুর বিচরণের ব্যবস্থা করা।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত লালন পালন করা।
৫. বৈচিত্র্যপূর্ণ জাতের পশু পালন করা।

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter