ওষ্টিওপোরোসিস বা বাত নিয়ন্ত্রণ
ওষ্টিওপোরোসিস হাড়ের ক্ষয়জনিত শারীরিক সমস্যা। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এ সমস্যা বাড়তে থাকে। লবন, সোডাওয়াটার এবং অন্যান্য কোমল পানীয় হাড়ের ক্ষয় ত্বরান্বিত করে। ফলে ওষ্টিওপোরোসিসের লক্ষণ প্রকাশ পায়। হৃষ্টপুষ্ট শারীরিক কঙ্গাল কাঠামোতে লবণ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। হাড় ভঙ্গুর হয়। হাড় পাতলা হয়। হাড়ের ওজন কমে যায়। বাহ্যিক কোন আঘাৎ ছাড়াই যে কোন হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে।
সাধারণ লবনের সোড়িয়াম ক্যালশিয়ামের ঘাটতি ঘটায় এবং হাড় দূর্বল করে। বাংলাদেশের জনগণের লবণ সেবন সম্পর্কে ব্যাপক ভিত্তিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ন্যাশনাল হার্টফাউন্ডেশান হসপিটাল এ- রিসার্স ইনষ্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের মানুষ জনপ্রতি দৈনিক ১০-১১ গ্রাম লবণ সোবন করেন। অন্য আর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে জনপ্রতি দৈনিক লবণ সেবনের পরিমাণ ১৭ গ্রাম।
অথচ স্বাস্থ্য সম্মতভাবে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ২.৩ গ্রাম অর্থাৎ চা চামচের এক চামচ লবন খাওয়াই যথেষ্ঠ। হাড়ের ক্ষয় পূরণ করতে এবং অতিরিক্ত লবনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি সমূদ্ধ খাবার খেতে হবে।
পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত বয়স্ক একজন মানুষের দৈনিক ১ গ্রাম ক্যালশিয়াম খাওয়া প্রয়োজন। আট আউন্স পরিমাণ গ্লাসের তিন গ্লাস দুধ খাওয়া উচিৎ।এর চেয়ে বয়স্ক ব্যাক্তিদের ১.২ গ্রাম ক্যালশিয়াম সেবন করা প্রয়োজন। অর্থাৎ আরো আধা গ্লাস দুধ বেশি খেতে হবে।
পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত একজন মানুষের দৈনিক ২০০ আন্তার্জাতিক ইউনিট ভিটামিন ডি সেবন করা উচিৎ। একান্ন থেকে সত্তর বছর পর্যন্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের দৈনিক ৪০০ আন্তর্জাতিক ইউনিট ভিটামিন ডি সেবন করা উচিৎ। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর উৎকৃষ্ঠ উৎস। এছাড়া দুধ, দুগ্ধজাত অন্যান্য খাদ্য,ডিমের কুসুম,সামদ্রিক মাছ ও কলিজা ভিটামিণ ডি এর উত্তম উৎস।
হাড় ক্ষয়ের প্রধান কারণ অতিরক্ত লবন। সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণ লবন থাকে। লবন ছাড়া রান্না করলে, পাতে লবন না খেলে লবন সেবনের পরিমাণ কমানো যায়। আমরা যে লবন খাই তার বেশীর ভাগই আসে প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খেলে লবনের পরিমাণ কমবে।
ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে লবনের ক্ষতিকর প্রভার কাটিয়ে ওঠা যায়। গাঢ় সবুজ শাকসবজি যেমন ব্রকলি, শালগম, ঢ্যারশ,পালংশাক, মটরশুটি, মিষ্ঠিকুমড়াশাক, শরিষা শাক, বিট, পিঁয়াজ শাক, চিচিংগা, বাধা কপি, মিষ্ঠিআলু, লেটুস, গাজর, কুড়িয়ে পাওয়া শাক যেমন তেলাকুচা, হেঞ্চি, বথুয়া, হেলেঞ্চা, গিমা, কলমি শাক, ঢেকিশাক, নটে, থানকুনি, খারকোন, শুশনী, বনপাট, সাজনা পাতা, ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমান ক্যালশিয়াম আছে। ক্যাশিয়াম সমূদ্ধ মসলার মধ্যে আছে জিরা, লবঙ্গ, গোলমরিচ ও মৌরি। তিষির বীজ, সূর্য মুখীর বীজ, কুমড়ারবীজ, শতমূলি ও তুলসিতেও প্রচুর পরিমাণ ক্যালশিয়াম আছে। কমলালেবু, মালটা, ডুমুর, লেবু, কালোজাম,জাম্বুরা, পেঁপে, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, খেজুর,এভোকাডো ও আমে প্রচুর পরিমান ক্যালশিয়াম আছে। মাছ (সার্ডিন, সালমন, টুনা), ডিম ও দুধ ক্যালশিয়াম সমূদ্ধ খাবার।
কফির সাথে দুধ না খাওয়াই ভালো। কারণ কফির মধ্যে ক্যাফেইন রয়েছে যা ক্যালশিয়াম হজমে বাধা সৃষ্ঠি করে।
প্রচালিত ব্যাবস্থায় ওযুধের মাধ্যমে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরনে ওষ্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা করা হয়। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ধমনীতে, কিডনীতে, ব্রেষ্ঠে এবং অন্যান্য অঙ্গে ক্যালশিয়াম জমাট বেঁধে ( ক্যালসিনেশন ) ব্লক সৃষ্টি করে, জটিলতা বাড়াচ্ছে এবং মূত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ঝুঁকি মুক্ত থাকার জন্য ওষুধের চেয়ে ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ, ওষ্টিওপোরোসিস নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ভারসাম্য রক্ষা করা অধিক শ্রেয়।