বিটিবেগুন দরকার নাই
বেগুন একটি জনপ্রীয় সবজি। তবে জিন বিকৃতির সাহাযো বিটি বেগুন গঠন করা হয়েছে। পৃথিবীতে সর্ব প্রথম ২০১৩ সালে বাংলাদেশে বিকৃত গঠনের এ বিটি বেগুন ছাড় করা হয়েছে। স্মরণযোগ্য ২০০৫ সালে ভারত, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশে বিটি বেগুনের গবেষনা শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে নানা দোষে দুষ্ট বিটি বেগুন ভারত ও ফিলিপাইনে নিষিদ্ধ হয়েছে। আমেরিকা ভিত্তিক বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনসান্টো এবং তাদের ভারতীয় দোসর মাহিকো বাংলাদেশকে বিকৃত বীজ ব্যবসার আকর্ষণীয় ঘাটি হিসাবে বেছে নিয়েছে। বিকৃত বীজ ব্যবসার এ অপতৎপরতা বন্ধ করা প্রয়োজন। কারণ:
১. মানুষের স্বাস্থ্যহানির আশংকা
ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস (বিটি) থেকে জিন নিয়ে সংযোজন করে বিটি বেগুন গঠন করা হয়েছে। দাবী করা হচ্ছে বিটি বেগুনের গাছও ফলের রস খেলে কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা মারা যাবে। এ বেগুন খেলে আমার কি হবে? তা ভেবে আমি চিন্তিত।
২. প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্ত হবে
বিটি বেগুন স্থনীয় জাতের বেগুনের চরিত্রহানি করে বিলুপ্তি ঘটাবে। বাংলাদেশ বেগুনের আদি উৎপত্তিস্থল। এখন ও বাংলাদেশে ২৪৮ টি জাতের বেগুন আছে। ধারত্রি সম্মেলনের শর্ত মোতাবেক বাংলাদেশে ট্রান্সজেনিক বিটি বেগুন প্রবর্তন করা হলে আন্তর্জাতিক চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হবে। বেগুনের প্রাণ বৈচিত্র্য ধবংসের পথ প্রশস্ত করা হবে।
৩. কৌলিক সংকির্ণতা
বেগুনে পোকা, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ক্ষুদ্র মাকড় ও শিকড়ে গীট (নেমাটোড) সহ ৩৮টি বালাই আছে। তবে বিটি বেগুন শুধু মাত্র কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ করবে বলে উচ্চ স্বরে হাকাহাকি করা হচ্ছে। তবে অন্যান্য রোগ বালাইয়ের ক্ষেত্রে বিটি বেগুন কতটা সহনশীল? তা অজানা।
৪. গুণাগুণের অবক্ষয়
বেগুনের জেনমে ১২ জোড়া ক্রোমোজমে ৩৬,৩৬৪ টি জিন আছে। এর মধ্যে বিটি একটি জিন সংযোজন করা হয়েছে। একটি ভিন্ন জিন সংযোজনের ফলে বেগুনের অন্য সকল জিন তথা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়েছে। আমরা জানি, গাছপালা ও প্রাণী কোষে ক্রোমোজোমে জিন শিকলে সাজানো রয়েছে। এর মধ্যে বাহির থেকে অন্য প্রজাতির একটি জিন সংযোজন করলে সকল জিনের অবস্থান ও বিকাশ পরিবর্তন হয়। জৈব গঠনকে ইট কাঠের দালান কোঠা ভাবলে ভুল হবে। চারটি স্থানীয় বেগুন যেমন উত্তরা, কাজলা, নয়নতারা এবং ঈশ্বরদী জাতকে বিটিবেগুন ১,২,৩,ও ৪, নামে ছাড়া হয়েছে। নামের এ রূপান্তর শুধু আক্ষরিক পরিবর্তন বা নাম খারিজ নয়। বাস্তবিকই মিউটেশন। স্থানীয় জাতের বেগুনের বহু মূল্যবান গুণাগুণের অবক্ষয় ঘটানো হয়েছে।
৫. চারিত্রিক অধঃপতন
বেগুনে বিটিজিন সংযোজন করা হয়েছে। বিটি জিন ব্যাবটেরিয়ার জিন। বেগুন যে কোন পর্যায় বিটি জিন পরিত্যাগ (রিজেক্ট ) করতে পারে। তখন বেগুন কান্ড ও ফল ছিদ্রকারি পোকার ক্ষেত্রে আরো বেশী সংযোদনশীল হবে।
৬. পোকার বিবর্তন
ফসল ও রোগ বালাইয়ের মধ্যে সব সময় সমান্তরল প্রতিযোগীতা ও বিবর্তন হতে থাকে। বিটি বেগুন কান্ড ও ফল ছিন্দ্রকারী পোকা প্রতিরোধী জাত হওয়ার ফলে প্রতিরোধ ভাঙ্গার জন্য পোকার বিবর্তন হবে। আরো শক্তিশালী পোকার আবির্ভাব ঘটবে। তখন বেগুন পোকার আক্রমণে অসহায় হবে।
৭. বেগুনের বীজ ডাকাতি
বাংলাদেশের কৃষকদের সম্পদ ৯ টি বেগুনের (উওরা , কাজলা, নয়নতারা, ঈশ্বরদী, দোহাজারী, শিংনাথ, চ্যাগা, ইসলামপুরী ও খটখটিয়া) জাত ইতিহ্যগত সম্পদ। বেগুনের প্রাণ সম্পদ মাহিকো- মনসান্টো কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এদেশের প্রাণ সম্পদে কোম্পানির মেধাসত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কৃষকের নিজের বীজ কোম্পানিকে রয়ালটি দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে নগদ অর্থে কিনতে হবে। স্থায়ীভাবে কৃষককে কোম্পানি নির্ভর করা হচ্ছে।
৮. কৃষকের ক্ষতি
বিটি বেগুন চাষ করে পরপর তিন মৌসুমে (২০১৪, ২০১৫, ২০১৬) কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। একই কৃষক দ্বিতীয় বার বিটি বেগুন চাষ করেন নাই। কৃষককে আর ক্ষতিগ্রস্থ করা চলবে না।