চিকুন গুনিয়া জ্বর
চিকুন গুনিয়া নামটি এসেছে তাঞ্জানিয়া, আফ্রিকা থেকে। সর্ব প্রথম ১৯৫৩ সালে এ জ্বর সনাক্ত করা হয়। মেরিয়ন রবিনসন প্রথম এ জ্বরের বিবরন দেন। বর্তমানে কুখ্যাত ডজন খানেক জীবানু অস্ত্রের মধ্যে চিকুন গুনিয়া অন্যতম। চিকুন গুনিয়া নামের নিহীত অর্থ হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি বেকে যায়। সোঝা ভাবে দাড়াতে পারে না। চিকুন গুনিয়া একটি ভাইরাস জ্বর। আক্রান্ত এডিস মশার মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। এ রোগের প্রধান লক্ষন হচ্ছে উচ্চ মাত্রার জ্বর এবং অস্থিসন্ধিতে প্রচন্ড ব্যথা। রোগী বসতে পারে না। রোগী বুঝতে পারেন পা থেকে মাথা পর্যন্ত কত গুলি হাড়ের সংযোগ স্থল রয়েছে। প্রতিটি জোড়ায় ব্যথা হয়। জোড়ার পরিধি যত বড় ব্যথা ততবেশী। জোড়া ফুলে যায় এবং শক্ত হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ব্যহত হয়। কোন কোন রোগীর চামড়ায় র্যা স বা ফুঁসকুড়ি পড়তে পারে। লাল বা খয়রি রং ধারন করে। রোগীর ক্ষুধা কমে যায়। বমিবমি ভাব হয়। চোখ জ্বালা করে। চোখ ফুলে যায়। মাথা ধরে। পিঠে, কোমড়ে, হাটু ও গোড়ালিতে প্রচন্ড ব্যথা হয়। জ্বরের প্রকোপ ৩-৪ দিনের মধ্যেই কমে যায়। তবে শরীরের ব্যথা কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস এমন কি বছরের পর বছর ও প্রলম্বিত হতে পারে।
বদ্ধ জলাশয় জন্মলাভকারী এডিস মশা চিকুন গুনিয়া জ্বর বিস্তার ঘটায়। এ মশা দিনে কামড়ায়। মশার কামড়ের এক সপ্তাহের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। উচ্চ মাত্রায় জ্বর এবং অসহনীয় অস্থি সন্ধি ব্যথা এ জ্বরের প্রধান লক্ষণ। এ ছাড়া ক্লান্তি, অস্থিরতা, বমি বমি ভাব, মাথা ধরা, অবসাদ, ঘুম না হওয়া, দুর্বলতা, গিটে ব্যথা, উচ্চ মাত্রায় জ্বর, পেশীতে যন্ত্রণা, অরুচিভাব, মুখে ঘাঁ, চোখে ঘাঁ এবং ক্ষুধা না হওয়া ইত্যাদি।
চিকুন গুনিয়া জ্বর ১০২ -১০৫ ডিগ্রি ফারেন হাইট হতে পারে। এ জ্বর ৩ দিন থেকে এক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। এ জ্বর দুই দফায় আসতে পারে। প্রথম ধাপের চিকুন গুনিয়া আক্রমনের এক থেকে তিন মাস পরে দ্বিতীয় ধাপের আক্রমণ হতে পারে। দ্বিতীয় ধাপের জ্বর ১০১-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে। এজমা হতে পারে। গিটে গিটে ব্যথা হতে পারে। দৃষ্টি শক্তি ঝাপসা হতে পারে। প্রস্রাব কমে যেতে পারে। রক্ত পরীক্ষার সাহায্যে চিকুন গুনিয়া রোগ নির্ণয় করা যায়।
চিকুন গুনিয়া রোগের কোন ভ্যাকসিন নাই এবং চিকিৎসার কোন এলোপ্যাথিক ওষুধ ও নাই। রোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে। পানি শূন্যতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি এবং তরল খাবার খেতে হবে। শরীরের ব্যথা ও জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। তবে লিভার অথবা কিডনি সমস্যা থাকলে প্যারাসিটামল ও খাওয়া যাবে না।
রোগীকে শাকসবজি ফলমূলসহ পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। আদাসহ চা সেবন করতে হবে। পরিপূর্ণর্ বিশ্রামে থাকতে হবে। ঘুমাতে হবে। গিড়ায় গিড়ায় নাড়কেল তেল মালিশ করতে হবে। ব্যথা কমানোর জন্য আইসব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। ফুঁসকুড়িতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিকুন গুনিয়া রোগীকে প্রচুর পরিমানে ডাবের পানি সেবন করতে হবে। ডাবের পানি ওষুধের কাজ করেনা তবে রোগীকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে। ডাবের পানি লিভারের জন্য খুব ভাল। চিকুন গুনিয়া ভাইরাস লিভারেই বৃদ্ধি পায়। লিভারের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী হলে রোগের প্রকোপ কম হয়।
ভেষজ মতে (১) গুলঞ্চ, (২) পেঁপেঁ পাতার রস, (৩) রসুন বাটা, (৪) হলুদ, (৫) মরিচ, (৬) দুধের সাথে আঙ্গুরের রস, (৭) তুলসী পাতার রস, (৮) ঠান্ডাজল পট্টি এবং (৯) তেল মালিশ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
গুলঞ্চ ১৮-২০ টি পাতাসহ লতা পাটায় পিসে পেষ্ট তৈরি করে চিপে রস বের করে দিনে তিন বার করে তিন দিন সেবন করতে হবে।
তিনটি পেঁপে পাতা শিড়া উপশিড়া গুলি বাদ দিয়ে পত্র ফলকের বাকি অংশ পাটায় বেটে পেষ্ট করে চিপে রস বের করে দিনে তিন বার, তিন দিন সেবন করতে হবে।
১৫-২০ টি তুলসী পাতা চিপে রস বের করে দিনে তিন বার, তিন দিন সেবন করতে হবে।
মশার কামর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। এডিস মশার কামড়ে চিকুন গুনিয়া রোগ বিস্তার লাভ করে। এ মশা দিনে কামড়ায়। বদ্ধ পানিতে মশার বংশ বিস্তার হয়। বদ্ধ পানির উৎস গুলি শুকিয়ে ফেলতে হবে। ফুলশার্ট এবং ফুলপ্যান্ট পড়তে হবে। ঘরের দরজা জানালা নেট দিয়ে মশার প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জীবানু যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মানব জাতিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।