ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সেমিনার


ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সেমিনার (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) অনুষ্ঠিত হলো টাঙ্গাইল, দেলদুয়ার, বিষ্ণুপুর গ্রামে “উবিনীগ রিদয়পুর বিদ্যাঘর” এ। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজের ৬ জন শিক্ষের নেতৃত্বে ১২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ টাঙ্গাইল, দেলদুয়ার, বিষ্ণুপুর গ্রামে “উবিনীগ রিদয়পুর বিদ্যাঘর” এ শিক্ষা সেমিনারে আসেন।

নয়াকৃষির কার্যক্রম বর্ণনা এবং দেখানোর মাধ্যমে শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সেমিনারের অনুষ্ঠান। প্রথমেই উবিনীগের পরিচালক সীমা দাস সীমু নয়াকৃষি আন্দোলন ও এর কার্যক্রম সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাথমিক ধারনা প্রদানকালে বলেন, নয়াকৃষি আন্দোলন হলো প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা। দেশীয় জাতের প্রায় আড়াই হাজার ধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে নয়াকৃষি কেন্দ্রে। এই বিদ্যাঘর কৃষকদের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরী করে। মানুষসহ গাছ, লতা-পাতা, পশু-পাখি, কীটপতঙ্গ প্রতিটি প্রাণীর প্রতি ভালবাসা ও মায়া মমতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে নয়াকৃষি।

ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সেমিনার

নয়াকৃষি কেন্দ্রের প্রতিটি গাছ-পালা, পশু পাখির আবাসস্থল, কেন্দ্রের বিভিন্ন ফসলের বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদন প্রতি বছরেই করা হয়। এই কেন্দ্রে রয়েছে বিভিন্ন ফলের গাছ, কাঠ জাতিও গাছ, ওষুধী গাছ। রয়েছে পরিবেশ উপযোগী গাছ যেমন-বট, পাকুর, জাম, হরিতকি, বহেরা। ঝড়ে পড়া পাতাকে কি ভাবে কাজে লাগিয়ে কম্পোষ্ট তৈরী করা হয় তা ছাত্র-ছাত্রীদের দেখানো হয়। দেখান হয় মাটি দিয়ে কিভাবে মাটি বৃদ্ধি করা যায়, গাছের নীচে পাতা পচে কি ভাবে মাটি তৈরী হয় এবং গাছগুলো এ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। ফলে গাছ-পালার জন্য বাড়তি কোন সার বা খাবারের প্রয়োজন হয় না।

ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সেমিনার

নয়াকৃষি বীজ সম্পদ কেন্দ্র, যেখানে সংরক্ষিত আছে নয়াকৃষি কৃষকদের ২৫০০ জাতের স্থানীয় ধানের বীজ। প্রতিবছর কেন্দ্র ভিত্তিক ধান পুনরুৎপাদন ও গবেষণা করা হয়। টাঙ্গালের নয়াকৃষি কৃষকেরা এই ধানের অনেকগুলো জাত নিজেদের জমিতে চাষ করে থাকে। নয়াকৃষি বীজ সম্পদ কেন্দ্রে ধানের বীজ রাখার পদ্ধতি, প্রতিটা ধানের মনোগ্রাফ, জমির ধরণ, চাষ পদ্ধতি, হেক্টর প্রতি উৎপাদন এবং বিশেষ বিশেষ ধানের পুষ্টি গুণ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়।

এরপর শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বীজঘর ঘুরে দেখেন যেখানে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন সব্জী বীজ, নানা ধরনের ফলের বীজ, কাঠ জাতীয় বিভিন্ন গাছের বীজ, ওষুধী গাছের বীজ ও এর গুণাগুণ এবং বীজ রাখার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করা হয়।

মিশ ফসল বা জমিতে নানা ধরণের ফসল একত্রে চাষ করে অধিক ফলন বাড়ান যায় ছাত্র-ছাত্রীদের মিশ ফসলের মাঠ দেখান হয়। দেখান হয় বিভিন্ন জাতের ফসল। যেমন- টমেটো ৯ জাত, মরিচ-১১ জাত এবং সীম-৩৮ জাতের।

ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সেমিনার

নয়াকৃষির মুরগী প্রাকৃতিকভাবে পালন করা তা দেখান হয়। নয়াকৃষির মুরগী পালন পদ্ধতি পরিবেশ ও প্রকৃতির সাথে সংগতিপূর্ণ। মোরগ বা মুরগী বদ্ধ ঘরে পালন করা হয় না। বরং উন্মুক্ত মাঠে পালন করা হয়। মুরগী ঘুরে ফিরে খাচ্ছে, খাবার হিসাবে ঘাস, লতা-পাতা, পোকা-মাকড় সহ প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। খোলা যায়গায় চলা ফেরা করছে। আবার ডিম দেওয়ার সময় মুরগী নিজেস্ব জায়গায় (মুরগী ঘরে) গিয়ে ডিম দিচ্ছে। মাংসের জন্য আলাদা মোরগ-মুরগী আছে, তারাও একই ভাবে খোলা জায়গায় চড়ে বেড়াচ্ছে। এভাবেই মুরগী বড় হচ্ছে।

নয়াকৃষি কৃষকদের উৎপাদিত ধান দিয়ে মুড়ি, খৈ ভাজা, ঢেঁকিতে চামারা (আমন ধান) চাউল ভানা, ঢেঁকিতে যবের ছাতু তৈরী এবং নিরাপদ শস্য ভান্ডারও দেখান হয়।

উবিনীগ রিদয়পুর বিদ্যাঘরে “নিরাপদ শস্য ভান্ডার” বিক্রয় কেন্দ্রে নয়াকৃষি কৃষকদের উৎপাদিত রাসায়নিক সার, বিষ ছাড়া নানা ধরনের শাক-সব্জী, মুড়ি, মুড়ির মোয়া, খৈ, চিড়া, মুরালী, যবের ছাতু, টেপা বোড়ো, চামারা,পাটজাগ ধানের ঢেঁকি ছাটা চাউল ছিল। বিক্রির জন্য আরও ছিল মুরগীর ডিম।

ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সেমিনারঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সেমিনার

নয়াকৃষি সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীরা আরো জানার আগ্রহ প্রকাশ করে।


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter