তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ এক্ষুণি দরকার
দেশের বিভিন্ন এলাকায় রবি ফসলের মৌসুমে আমাদের দেখার কথা খাদ্য ফসলের চাষ। নানা রকম সব্জি, সরিষা, ডাল, ধান, যেখানে যা হয়। আমন ধান ঘরে তুলে কৃষক খুশি, গ্রামে গেলেই তা টের পাওয়া যায়। এই দৃশ্য দেখেই আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু এখন কুষ্টিয়া, তার আশে-পাশের জেলা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, উত্তরের জেলা লালমনির হাট, আর দক্ষিণে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা এবং বান্দরাবানের দুটি উপজেলা লামা ও আলী কদমে দম বন্ধ হয়ে আসে। এই জমিগুলোতে খাদ্য ফসল হচ্ছে না, সেখানে দখল করে আছে মরণঘাতি তামাক। তামাক জমিতে থাকলেও বিষ, এই পাতা থেকে সিগারেট-বিড়ী, জর্দা-গুল যাই হোক সবই বিষ।
এই মাসে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) কুষ্টিয়া, বান্দরবানসহ অনেক জেলাতে গেলে দেখা যাবে বাড়ীর ছেলে মেয়ে স্বামী-স্ত্রী সবাই মিলে তামাক পাতা ঘরে এনে পোড়াচ্ছেন। গাছ কাটা হয়েছে নির্বিচারে, পাতা পোড়াতে অনেক কাঠের দরকার। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো হচ্ছে না। কারো এসএস সি পরীক্ষা থাকলেও সেই ছেলে-মেয়েকেও তামাক পাতা পোড়ানোর আগে ও পরের কাজগুলো করতে হচ্ছে। পরীক্ষা আর দেয়া হচ্ছে না। পোড়া পাতা থেকে যে তীব্র ঘ্রাণ বের হয় তাতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। নারীদের অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু সেটা বলারও সুযোগ নাই, কারণ কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। তাতে বিরাট আর্থিক ক্ষতি হয়ে যাবে।
একবার কল্পনা করে দেখুন। যে জমিতে তামাক হচ্ছে সেখানে থাকার কথা ছিল খাদ্য ফসল। এই ফসল ঘরে আসলে পরিবারের সবাই তাজা সব্জি খেতে পারতো। সুস্থ থাক্তো। বাড়তি ফসল বিক্রি করে আয় আসতো। মাটি ভাল থাকতো, মানুষ সুস্থ থাকতো। দেশেও খাদ্য সংকট হতো না। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ নেয়া খুব জরুরী। প্রথমত সরকার কৃষি জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ্ব করতে পারে। তাছাড়া কৃষকরা যারা তামাক চাষ করতে চায় না তাদের খাদ্য ফসলের বীজশ সকল প্রকার উপকরণ ন্যায্য মুল্যে দিতে পারে। সবচেয়ে দরকার হচ্ছে খাদ্য ফসল বাজারজাত করণের সুবিধা নিশ্চিত করা। তামাক কম্পানি পাতা কিনে নিয়ে ভান করে তারা অনেক উপকার করছে অথচ পাতার দামের ক্ষেত্রে চাষীদের তারা নিয়মিতভাবেই ঠকায়। একবার তামাক চাষে ঢুকে কৃষক কোম্পানির ফাঁদে পড়ে যায়, বের হবার পথ পায় না। সরকারের একটু সহযোগিতা পেলেই অনেক কৃষক বেঁচে যেতো। সরকার কি কৃষকের এই দুর্দশা চেয়ে চেয়ে দেখবে?
২০০৬ সাল থেকে উবিনীগ তামাক চাষের ক্ষতি ও এর থেকে কি করে আবার খাদ্য ফসলে ফেরা যায় তা নিয়ে গবেষণা করছে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে তামাকের শৃংখল থেকে মুক্তি গবেষণা গ্রন্থে। সংগ্রহ করতে চাইলে উবিনীগ কিংবা নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় যোগাযোগ করুন।