একটি বীজ বাঁচার পথে বাধা


গাছের যে অংশ পরবর্তী বংশ বিস্তারের বা ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় তাই বীজ। কোন গাছের ফল বা দানা যেমন- ধান, গম, ডাল জাতীয় ফসল; কোন গাছের কন্দাল যেমনÑ গোল আলু, কান্ড, যেমনÑআখ বা লতা যেমন- মিস্টি আলু আবার কোন গাছের মূল যেমন- হলুদ, পটল ইত্যাদি বীজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

বীজ একটি জীবন্ত উপকরণ যা অঙ্কুরোদগম ক্ষমতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সময়ের সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বীজ ধীরে ধীরে তার অঙ্কুরোদগম ক্ষমতার হারাতে থাকে। এ প্রক্রিয়া একেবারে বন্ধ করে রাখা না গেলেও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সংরক্ষণ করে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নির্ধারিত নুন্যতম মাত্রায় কাক্সিক্ষত সময় পর্যন্ত বজায়ে রাখা যায়। 

বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য প্রয়োজন তাপ, আর্দ্রতা, বাতাস এবং আলো। তাপ ৫ºঈ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমালে বীজের আয়ু দ্বিগুণ হয়। যদি শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা ১% কমানো যায় তাহলে বীজের আয়ু দ্বিগুণ হয়। বীজ সংরক্ষণ করতে হলে এর বিপরীত অবস্থায় রাখতে হবে। বীজ ঘরের তাপ মাত্রা কমাতে হবে এবং বীজের আর্দ্রতা কমাতে হবে।

আর্দ্রতা হ্রাস করা বীজ সংরক্ষণের মূল চাবিকাঠী। বীজ সংরক্ষণের আগে বীজ ভালভাবে শুকাতে হবে। লক্ষ্য হবে প্রায় ৭% আদ্রতা। বীজ পরীক্ষা করে বীজের আর্দ্রতা অনুমান করা যায়। বীজের ্উপর নমনীয় চাপ দিয়ে দেখতে হবে, বীজ বাঁকায় বা ভেঙ্গে যায়। যদি বীজ ভেঙ্গে যায়, বুঝতে হবে বীজগুলো সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ঠ শুকানো। আর যদি বীজ বেকে যায়/চ্যাপ্টা হয়Ñবীজ আরও শুকাতে হবে।

বীজ ঠান্ডা যায়গায় রাখা প্রয়োজন। বীজ ঘরের তাপমাত্রা যত কম হবে বীজ তত ভাল থাকবে। স্থিতিশীল তাপমাত্রা ওঠানামার চেয়ে বেশী ভাল। বীজ অতি বেগুনি রশ্মির প্রতি সংবেদনশীল। অন্ধকার জায়গা বীজ সংরক্ষণের অন্যতম সেরা জায়গা।

দীর্ঘ সময় বীজ সংরক্ষণের জন্য হিমায়িত কক্ষ ভাল। শুধুমাত্র শুকানো বীজ হিমায়িত কক্ষে রাখা যাবে। একটি বীজ জিন ব্যাংকে অর্থডক্স বীজ ৫-৬% আর্দ্রতায় শুকানো হয় এবং Ñ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপ মাত্রায় সিলযুক্ত পাত্রে রাখা হয়। অর্থডক্স বীজের দীর্ঘায়ু বৃদ্ধি শুকানো এবং হিমায়িত হওয়ার উপর নির্ভর করে।

পরিপক্কতার পর বীজ অনির্ধষ্ট কাল কার্যকর থাকে না। বীজের নির্দিষ্ট জীবন আছে যার মধ্যে অবশ্যই অঙ্কুরিত হতে হবে। অন্যথায় ধীরে ধীরে এবং শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে কার্যকারিতা হারাবে। বীজে জীবনকাল প্রজাতি এবং বীজ সংরক্ষণের পরিবেশগত অবস্থার উপর নির্ভর করে।

সাম্প্রতিক কালে কিছু বীজ কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত কার্যকারিতা বজায় থাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। খেজুর (চযড়বহরী ফধপঃুষরভবৎধ) বীজ যা প্রায় ২০০০ বছর পুরানো। ইসরাইলে খনন করে উদ্ধার করা হয়েছিল। এ বীজ ২০০৫ সালে সফল ভাবে অঙ্কুরিত হয়েছিল।

আর একটি প্রাচীন কার্যকর বীজ প্রায় ১৩০০ বছর পুরানো পদ্ম (ঘবষঁসনড় হঁপরভবৎধ) বীজ, যা ১৯৯৫ সালে উত্তর পূর্ব চীনের একটি শুকনো হৃদ থেকে পাওয়া গিয়েছিল।

পুনজন্মের জন্য সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদটি ৩২, ০০০ বছর বয়সী। বীজ থেকে গজানো। রাশিয়ান গবেষক দল ঝরষবহব ংঃবহড়ঢ়যুষষধ বীজ আবিস্কার করেছেন। যা সাইবেরিয়ার একটি ফুল গাছ। যা কোলাইমা নদী তীরে একটি বরফ যুগে, সম্ভবত কাঠবিড়ালী লুকিয়ে রেখেছিল। রেডিও কার্বন ডেটিং নিশ্চিত করেছে যে বীজের বয়স ৩২, ০০০ বছর। পরিপক্ক এবং অপরিপক্ক বীজ পুরোপুরি বরফে ঢাকা ছিল। এ বীজ ৩৮ মিটার গভীর থেকে বের করা হয়েছিল। যার চার পাশে বাইসন এবং পশমী গন্ডারের হাড় ছিল। গবেষকদল হিমায়িত বীজ থেকে চারা গজিয়ে ছিলেন। গাছগুলি একে অপরের অনুরূপ ছিল। কিন্তু আধুনিক ঝরষবহব ংঃবহড়ঢ়যুষষধ থেকে একটু ভিন্ন ছিল। ফুল ফোটে। ফল হয়। এক বছর পর বীজ তৈরি হয় (যঃঃঢ়ং//:িি.িহধঃরড়হধষমবড়মৎধঢ়যরপ.পড়স )

বীজের অদম্য শক্তি ও বেঁচে থাকার পথে অজৈব ও জৈব বাধা রয়েছে। অজৈব বাধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, বাতাস এবং আলো। জৈব বাধার মধ্যে আছে ইঁদুর, পোকামাকড়, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি। এসব প্রতিবন্ধকতা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিয়ে বীজ সংরক্ষণ করলে বীজ বহুদিন বাঁচিয়ে রাখা যায়।

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter