সাধের লাউ
গ্রামের বাড়ীতে আর কিছু থাক বা না থাক একটি লাউয়ের মাচা অবশ্যই পাবেন। ছোট ভিটেতে এই সব্জি লাগিয়ে অনেক পরিবার খাদ্য চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানো যায়। একটু বেশি হলে বিক্রিও করা যায়। এই লাউয়ের গুণ কিন্তু কম নয়। নয়াকৃষি কৃষকদের কাছে লাউয়ের মোট ৯টি জাত পাওয়া গেছে। তার মধ্যে টাঙ্গাইল নয়াকৃষি কেন্দ্রে আছে ৪ জাত । এই জাতগুলো হচ্ছে: ১. বৈরাগী, ২. তবলা, ৩. ক্ষেত লাউ ও ৪. শিরা লাউ। ঈশ্বরদী নয়াকৃষি কেন্দ্রে আরো ৭টি জাত আছে। এগুলো হচ্ছে ১. বৈইরাগী, ২. তবলা, ৩. সাদা বাটিক, ৪. হাজারী লম্বা, ৫. জোড়া বৌচা, ৬. হাজারী গোল, ৭, বারি-৪।
তবলা লাউ, নয়াকৃষি টাঙ্গাইল
লাউ একটি বার্ষিক, আরোহনকারী লতানো গাছ। প্রায় সব এলাকাতেই পাওয়া যায়। লাউয়ের পাতা ৪০০ মি.মি.লম্বা এবং ৪০০ মি.মি.চওড়া, কান্ড, পুরু এবং কৌনিক পাঁজরযুক্ত,ভঙ্গুর এবং লোম যুক্ত যা ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। লতা হিসেবে বৃদ্ধি পায়, মাচাতেই আশ্রয় করে থাকে।
লাউ প্রধানতঃ শীত কালের ফসল হলেও বাড়ীর আঙ্গিনায় এবং উচুঁ জমিতে বারো মাসই লউ চাষ হয়। লাউ দিন নিরপেক্ষ ফসল। বারো মাসই ফুল ফল হয়। সারা দেশে গড়ে প্রতি বছর প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমিতে লাউ আবাদ হয়। রোপনের ২-৩ মাসের মধ্যে ফসল তোলা যায় । ফলন হেক্টর প্রতি ৩০-৪০ টন।
লাউ আমাদের কাছে সব্জি (শাক এবং ফল) হলেও প্রায় আট থেকে দশ হাজার বছর আগে থেকে লাউয়ের ব্যবহার বাদ্যযন্ত্র ও পাত্র হিশেবে হয়েছে। কাঁচা অবস্থায় শাক এবং সবজি হিসাবে ব্যবহার শুরু করে। প্রথমে আফ্রিকা, তারপর এশিয়া এবং আমেরিকায় লাউ চাষ সম্প্রসারণ হয়।
হাজারী লম্বা লাউ, নয়াকৃষি ইশ্বরদী
বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ফসল হিসাবে আবাদের বহু আগে থেকেই বাড়ীর আঙ্গিনায়, মাচায়, এবং ঘরের চালে লাউ চাষ শুরু হয়। এখনও গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় ঘরের চাল লাউ লতা দিয়ে ঢাকা। লাউ এর পাতা ও ডগা শাক হিসাবে এবং কচি ফল সবজি হিসাবে ব্যবহার হয়।
সাদা বাটিক লাউ: নয়াকৃষি ইশ্বরদী
পুষ্টিগুণ:
লাউ গাছের ফলে আছে কাবোর্হাইড্রেট (২.৫%), প্রোটিন-(০.২%), চর্বি (০.১%), আঁশ (০.৬%), ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস (০.০১%) এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানের মধ্যে রয়েছে আয়রন (০.৭ মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম), সোডিয়াম (১১.০ মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম)এবং আয়োডিন (৪.৫ মাইক্রগ্রাম/কেজি)।
ওষুধি গুণ:
ফল, পাতা এবং বীজ ডায়াবেটিস, আলসার, পাইলস, উন্মাদনা, উচ্চ-রক্তচাপ, হৃদরোগ, এবং চর্মরোগের চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হয়। পাতার রস টাক পড়ার চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। অনিদ্রা, মৃগীরোগ এবং স্নায়ুবিক রোগের চিকিৎসায় লাউ রস ব্যবহার করা হয়(https://www.ncbi.nlm.nih.gov)। এ ছাড়া লাউ রসে এন্টি স্ট্রেস, এন্টিমাইক্রবিয়াল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ গুণাগুণ রয়েছে।
স্বাস্থ্য উপকার:
সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতেও লাউ এর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। লাউ শরীরে বেশ শীতল প্রভাব ফেলে। এবং এটি হার্টের জন্যও বেশ উপকারী। এমন কি ঘুমের সমস্যা কমাতেও সহায়তা করে।