সজীব এবং শানু: এখনো মায়ের অপেক্ষায়


সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় কোন শিশু মা হারিয়েছে, কেউবা বাবা হারিয়েছে। যে শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করতো, মায়ের আঁচলের নিচে শুয়ে থাকতো, তাকে দেখাশুনা করছে তারই শিশু ভাই বা বোনটি। রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে এসব শিশু চিরদিনের জন্য তাদের নির্ভরতার স্থান মা কিংবা বাবাকে হারিয়েছে। দিনভর হাড় ভাঙ্গা খাটুনির শেষে রাতে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরেই যে সব মা সন্তানকে বুকে টেনে নিতেন, আজ সেই মা নেই। যে সব বাবা সন্তানকে দেখেই সারাদিনের ক্লান্তির কথা মুহুর্তেই ভুলে যেতেন, তারা আজ না ফেরার দেশে। ইতিমধ্যে অনেক শিশুর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। স্বজনদের কেউ কেউ আতœীয়ের কাছে অনাথ শিশুদের দেখভালের জন্য রেখেছেন। অনেক স্ত্রীহারা স্বামী দুধের শিশুকে লালন-পালনে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির শিকার আতাউর রহমান। স্ত্রী গুলশানে জান্নাত শাবানা বয়স আনুমানিক ২৯ বছর, সাভারে রানা প্লাজার ৬ষ্ঠ তলায় এক গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক ছিলেন। দিনাজপুরের ফুলবাড়ির বাসিন্দা শাবানা। আজও শাবানার সন্ধান মেলেনি। দূর্ঘটনার পর ধ্বংসস্তুুপের পাশে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থেকেও জীবিত অথবা মৃত্যু কোন অবস্থাতেই শাবানাকে পায়নি তার স্বামী আতাউর রহমান ও ভাই ওয়াসিম আলী। শাবানার দুই অবুঝ শিশু সন্তান সজীব বয়স ৭ বছর এবং শানু বয়স ৪ বছর, দুই ভাই বোন এখনো দিন গুনছে মায়ের অপেক্ষায়।

তবে পরিবারের সবাই নিশ্চিত হয়েছে যে শাবানা জীবিত নাই। কিন্তু তার দুই অবুঝ সন্তানরা এখনও জানে না তাদের মা এ পৃথিবীতে নেই, আর কোনদিন তাদের কাছে ফিরে আসবে না। কোন নারীর গলা শুনলেই দুই ভাইবোন ছুটে যায় বাড়ির বাইরে মা এসেছে বলতে বলতে। শিশু দুইটির এ আর্তনাদ এবং দুই ভাইবোনের ছবি দৈনিক পত্রিকায় দেখে আমার নিজের চোখের পারি ধরে রাখতে পারি নাই, মনে হচ্ছিল ওরা আমারই সন্তান।

যাদের কারণে এই অবুঝ শিশুরা মা হারা হলো, আতাউর এবং শাবানার সোনার সংসার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে শাবানার মতো নিতহ শ্রমিকদের আত্না শান্তি পাবে না।

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter