মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া এখনো মুশকিল
পোশাক শ্রমিক আলেয়া গার্মেন্টসে কাজ করছেন ১২ বছর ধরে। বিয়ে হয়েছে ৩ বছর হয়। স্বামীও গার্মেন্টসে কাজ করে তবে গার্মেন্টস ভিন্ন। শ্রমিক আলেয়া প্রথমবারের মত মা হয়েছেন। বাচ্চা হওয়ার আগে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির জন্য গেলে তাকে ২ মাসের বেতনসহ ছুটি দেয়া হয় ঠিকই কিন্তু তাকে বলা হয় বাচ্চা বড় হলে পরে কাজে জয়েন করো। এ ক্ষেত্রে আলেয়ার বক্তব্য হচ্ছে আমি কি মা হওয়ার জন্য চাকরিটা হারালাম। আমাদের মত গরীব মহিলাদের কি মা হওয়া অপরাধ? আমার কারখানার জিএম স্যার আমাকে তো একভাবে না-ই করেছে। আমি এ কথা কোন সাংবাদিকের কাছে বলতেও পারবো না। সাংবাদিকের কাছে বললে পরে জিএম স্যার জানলে পরে আমার নামে অন্য সব গার্মেন্টসে ছবি দিয়ে নানান কথা ছড়াবে, এরপর আমি আর কোন গার্মেন্টসে কাজ করতে পারবো না। এর চেয়ে চুপচাপ থাকাই ভাল। আমরা তো গরীব মানুষ তাই অন্যায়-অবিচার সহ্য করে-ই এত বছর ধরে গার্মেন্টসে কাজ করছি।
অথচ একজন মা শ্রমিক বর্তমান শ্রম আইন অনুযাযী তার প্রাপ্য অধিকার ভোগ করতে পারে। মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ যাবতীয় বেতন ভাতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে মা শ্রমিকের।
২২ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এই সংশোধনী প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। বর্তমান আইনের কয়েকটি ইতিবাচক দিক হল নিয়োগপত্র এবং ছবিসহ পরিচয়পত্র পাওয়ার অধিকার, মালিক কর্তৃক সার্ভিস বুক সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা, সম-কাজে সম-মজুরি দেয়ার বাধ্যবাধকতা, ৬ মাস কাজ করলেই মোট বেতনে ষোল সপ্তাহ প্রসুতিকালীন সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার, পূর্ণ বেতনে অসুস্থতা ছুটি ভোগের অধিকার, মৃত্যূজনিত সুবিধা, ক্ষতিপূরণের পরিমান বৃদ্ধি, ভবিষ্যত তহবিল বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি অশালীন এবং অভদ্র আচরণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে শাস্তির বিধান রয়েছে। আসলে কথায় আছে,“গাজির গরু খাতায় আছে গোয়ালে নাই” বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধনীর অবস্থাও ঠিক একই। বাস্তবে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ নাই।
নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে বর্তমান সরকার। বর্তমান সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন এবং সার্বিক উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে নারী শ্রমিক রক্ষা অন্যতম কর্মসূচী।
এদিকে বিজিএমইএ আন্তর্জাতিক সংস্থা এনজেন্ডার হেলথ বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মায়ের হাসি নামে একটি প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। মায়ের হাসি এই প্রকল্পের অধিনে আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ৪৪ লাখ শ্রমিককে পরিবার পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা। বিজিএমইএ-ও পক্ষ থেকে পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে আসরা নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস দিয়ে থাকি তবে দুইটি সন্তানের জন্য। বিজিএমইএ এবং শ্রমিকদের কথায় কতটা তফাত সেটা শ্রমিক আলেয়ার প্রসঙ্গটি-ই যথেষ্ট।