অংশগ্রহণমূলক গবেষণা পদ্ধতি (Participatory Action Research)


বড় বড় গবেষণায় যাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়, তাদের সরাসরি কোন অংশগ্রহণ থাকে না। তাঁরা অনেকেই জানেন না কেন এই গবেষণা করা হয়েছে এবং গবেষণার ফলাফল নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি করা হবে বা কিছু করা হয়েছে কিনা। যারা গবেষণা করেছেন একমাত্র তাঁরাই জানেন এর মর্ম কথা। সামাজিক গবেষণায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের অবস্থা জানার ও বোঝার চেষ্টা করা হয়, কাজেই তাদের নিজের অংশগ্রহণ জরুরী। 


SAS


সরাসরি গবেষণা পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনেক আগে থেকেই অনুভুত হয়েছে, ১৯৪০ সালে কুর্ট লেভিন ( Kurt Lewin, Tavistock Institute , London, United Kingdom) একজন মনোবিজ্ঞানী এই চর্চা শুরু করেছিলেন। তখন থেকে এর নাম Participatory Action Research (PAR) বা অংশগ্রহণমুলক গবেষণা। শুরু থেকেই PAR নিজেই অনেক ধরণের চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে পার হচ্ছে, কারণ মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, মনস্ত্বাত্বিক দিক নিয়ে কে কিভাবে দেখবে এবং সামাল দেবে, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে, এখনো হচ্ছে। অনেক পরীক্ষামুলক পদ্ধ্বতির আবিস্কার হচ্ছে। সামাজিক গবেষণায় সরাসরি মানুষের অংশগ্রহণ এবং তাঁদের নিজেদের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ এটাই প্রতিষ্ঠিত করে যে সামাজিক গবেষণায় গবেষক বনাম যাদের ওপর গবেষণা হচ্ছে তাদেরকে আলাদা করার দরকার নেই, বরং যাদের জন্যে এবং যাদের সমস্যা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, তাঁরা নিজেরাই এখানে গবেষণায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেন, তাঁরাই গবেষক হতে পারেন এবং তথ্য নেয়া এবং তার বিশ্লেষণ করতে পারেন। যারা বাইরে থেকে এসে গবেষণা করেন তাঁরা অনেক সময় কোন তথ্য গুরুত্বপুর্ণ আর কোনটি কম গুরুত্বপুর্ণ তা সঠিকভাবে নির্ণয় নাও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে যেসব গবেষণা সরাসরি মানুষের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে করা হয় সেক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের বিকল্প আর কিছুই নেই।


SAS


প্রায় ১০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম করে কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যাক এম. শিভালিয়ার (Prof. Jacques M. Chevalier) এবং ড. ডানিয়েল জে বাকলস (Dr. Daniel J. Buckles) এই পদ্ধতির চুড়ান্ত রূপ তৈরি করেছেন। প্রথমিক প্রকল্পের নাম ছিল SAS2 (Social Analysis System2) যা প্রথমে বাংলাদেশেই চর্চা করে শুরু হয়েছিল। এরপর ভারত, নেপাল, হন্ডুরাস, বলিভিয়া, চিলি, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের ২২টি দেশের ২,০৮০ জন এই পদ্ধতি চর্চা করছেন। শুরু থেকেই প্রশিক্ষণ এবং ডায়ালগের মাধ্যমে চর্চা করা হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে, কর্মক্ষেত্রে ও মানুষের জীবনে কাংক্ষিত পরিবর্তন আনা।

উবিনীগ SAS2 (Social Analysis System2) এর শুরু থেকেই জড়িত এবং বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি গবেষণায় এই পদ্ধতির প্রয়োগ করেছে। এই প্রয়োগের কিছু উদাহরণ Participatory Action Research: Theory and Methods for Engaged Inquiry by Prof. Jacques M. Chevalier and Dr. Daniel J. Buckles, Published by Routledge, UK এই বইয়ের অধ্যায় ১৮ এবং ১৯ এ আছে।


SAS


অংশগ্রহণমুলক গবেষণা Participatory Action Research (PAR) বাংলাদেশে খুব ব্যাবহার হয় না। কিন্তু এই পদ্ধতি খুব সহজেই সংগঠনসমূহ নিজেদের সমস্যা চিহ্নিত করা, সমাধানের পথ বের করা, কাজের পরিকল্পনা এবং কাজের মূল্যায়নের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। উবিনীগ এরই মধ্যে নয়াকৃষি আন্দোলনের বীজ গবেষণা, তামাক চাষ বন্ধ করে খাদ্য উৎপাদনে ফেরার উপায় নির্ধারণ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য সেবার পরিস্থতি ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য অবস্থা নিয়ে কাজ করেছে। উবিনীগ নিজেরা গবেষণা করে এবং অন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে। এ ব্যাপারে জানতে হলে সরাসরি উবিনীগে যোগাযোগ করুন।

 

 


Click Here To Print


Comments Must Be Less Than 5,000 Charachter