রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা কেমন আছেন?
গত বছর ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সাভার রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে ১১৩৮ জন শ্রমিক নিহত-হন-যার অধিকাংশই ছিলেন ভবনটিতে থাকা গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক। প্রায় ২৪০০ শ্রমিককে ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে বের করা হয়-যাদের অনেকেই অঙ্গহানির শিকার হন। গত ২৪ এপ্রিল, ২০১৪ রানা প্লাজা ভবন ধসের এক বছর। এই উপলক্ষে ২২ এপ্রিল, ২০১৪ তারিখে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আহত শ্রমিকরা কেমন আছেন? কেউ কি তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন ? শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে শ্রমবিকাশ কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য আন্দোলন।
আলোচনা সভায় সাংবাদিকসহ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন এবং শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন এমন সংগঠনের ৬৭ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সঞ্চচালনা করেন সীমা দাস সীমু, শ্রমবিকাশ কেন্দ্র।
সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ফরিদা আখতার, নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ ও শ্রমবিকাশ কেন্দ্র, যুগ্ম আহ্বায়ক, স্বাস্থ্য আন্দোলন। শুরুতে তিনি বলে, বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ভবন ধসে পড়ার পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৪৩৮ জন, লাশ উদ্ধার ১১১৫ জন, হাসপাতালে মৃত্যু ৫৯ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ১১২৭ জন। এর পরেও যারা হাসপাতালে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ছিলেন তাদের মৃত্যু ঘটলে সংখ্যাটি গননায় উঠছে কিনা তা আমরা জানতে পারিনি। মারা গেছে কিন্তু আত্মীয়রা লাশ চিনতে পারেনি ২৯৩ টি, হস্তান্তর হয়েছে ৮৩৮ জনের লাশ। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, শ্রমিকদের সঠিক কোন পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। ভবন ধসের পর যে সব শ্রমিকের কোমড় ভেঙ্গে গেছে তারা হাটতে পারছেনা, পঙ্গু হয়ে গেছেন। যারা সেদিন ঐ ভবনটির নীচে চাপা পড়েছিল তারা পাশে সহকর্মীরা মরে যাচ্ছে তা দেখেছে। আটকা পড়া শ্রমিকরা বলেছে করাত দিয়ে কাটলে আমি বের হতে পারবো। এই ধ্বংস স্তুপে দুর্বিসহ দিন গেছে তা বর্ননা করা যায় না। যারা আহত অবস্থায় আছে তাদের অনেকের কিডনী সমস্যা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যারা মাথায় আঘাত পেয়েছে রক্ত জমাট বেঁধেছে হয়তো সাথে সাথে কিছু হয়নি কিন্তু এখন সে ট্রমাটাইজ হয়ে গেছে। অনেকের ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কোন মিটিং হয়েছে এ ব্যাপারে অন্তত আমরা দেখিনি। হাসপাতাল গুলোতে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা করতে দেখিনি। যার ওপর সংসার নির্ভর করতো সে এখন পরিবারের বোঝা হয়ে গেছে। ডিএনএ টেস্ট করে ৭৫ জনের লাশ শনাক্ত করেছে। এর আগে তাজরীন গার্মেন্টের আগুনের ঘটনায় আগুনে পুড়ে গেছে অনেকে কিন্তু অনেক আহৎ হয়েছে ভবন থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গিয়ে পেটে রড ঢুকেছে। সরকারের কাছে কোন উত্তর পাইনি শ্রমিকদের দায়িত্ব নিয়েছে কিনা। শ্রমিকদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। নিজের খরচে কেউ চিকিৎসা সম্পন্ন করেছে কিনা এই তথ্য আমাদের কাছে নাই। যারা আহত হয়েছে তা হলে কি ধরে নেবো তারা মরে গেছে?
সুলতানা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন:
রানা প্লাজা ভাঙ্গার পর শ্রমিকের কপাল ভেঙ্গেছে। গোল্ডেন কন্যা হিসেবে শ্রমিকরা বিশ্বে পরিচিত। শ্রমিকের নিরাপত্তা কোথাও নাই। ৬৪% শ্রমিকের এখন কাজ নাই। যারা আহত অবস্থায় আছে পরিবারের কেউ তাদের কষ্ট বোঝে না। পঙ্গুত্বের চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল। স্বাস্থ্য সেবার প্রতি সবার আগে মনোযোগ দেওয়া উচিত। রানা প্লাজা ধসের পর খবর পেয়ে সাথে সাথে সেখানে যাই। ভবন ধসের খবর পাওয়ার পর ঐ দিন ১১ টায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। আমাদের প্রথমে ঢুকতে দেয়নি। কার্ড দেখার পর ঢুকতে দিয়েছে। র্যামব, পুলিশকে ধাক্কায়ে ভিতরে ঢুকি। হাসপাতালের ভেতর ৭৬ টি লাশ দেখতে পাই। আইসিইউ অবস্থা এবং শ্রমিকের কান্না দেখে খুব কষ্ট হয়। ১১ দিন সেখানে কাজ করেছি। ৭৩ টি লাশ উদ্ধার করেছি। ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখেছি শ্রমিকরা বারান্দায় পড়ে ছিল। অনেক শ্রমিক তাদের ক্ষতিপূরণ পায়নি। একজন শ্রমিকের ২টি বাচ্চা আছে স্বামী নিখোঁজ। সে কোন সহযোগিতা পায়নি। তা হলে সরকার শ্রমিকের জন্য কি করলো? শ্রমিক সংগঠন গুলি কি করছে? বিজিএমইএ কি করেছে? কেউ তাদের দায়িত্ব নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে যে টাকা জমা হয়েছে তা কোথায় গেছে? কত দিয়েছে, কত আছে সরকারের কাছে তা পরিষ্কার ভাবে জানতে চাই। সরকার এবং বিজিএমইএর কোন জবাবদিহিতা নাই। এক শ্রমিকে শেষ সম্বল ছিল সোনার নাকের ফুল তা বিক্রি করে দুই দিন সংসার চলেছে। বিদেশী বায়াররা ৪০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা। বায়াররা এদেশে শ্রমিকের পরিশ্রমের বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ ডলার উপার্জন করছে। কোন দুর্ঘটনার সময় তারা কেন শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায় না। যত দ্রুত সম্ভব ২৪ তারিখের আগে শ্রমিকের হাতে টাকা দিয়ে দিতে হবে। যারা আহত অবস্থায় আছে তাদের চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ফেরদৌসী বেগম, সভাপতি বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন:
শ্রমিকরাা বলছে মরে গেলেই ভাল ছিল। আমরা এখন জিন্দা লাশ হয়ে আছি। চাকুরি হারা হওয়ায় শ্রমিক আতংকে আছে। পরিবারে যে উপার্জনকারী ছিল সে নাই সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। এদের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এক লক্ষ একশত ত্রিশ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। বাকী টাকা কোথায় গেছে। তা পরিস্কার ভাবে জানাতে হবে। সরকারের ত্রাণতহবিলে একশত ত্রিশ কোটি টাকা জমা হয়েছিল ২৭ কোটি বিতরণ করা হয়েছে মাত্র। বাকী টাকা কোথায় গেল? শ্রমিকের নায্য পাওনা চাইতে গেলে বিভিন্ন ভাবে শ্রমিককে হয়রানি করা হয়। আইনে এর সুন্দর নিয়ম করা হয়েছে। কিছু করলেই শ্রমিকের নামে কেইস করা হয়। শ্রমিক সকাল ৮ টায় কারখানায় ঢোকে রাত ১১/১২ টা পর্যন্ত কাজ করে। মালিকরা কৌশল পাল্টিয়েছে শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়েছে কাজ বাড়িয়েছে। ২০০-২৫০ পিচ কাজ করে। শ্রম আইনে চুরি বা ভাংচুর করলেই শ্রমিকের নামে মামলা করা হয়। এই সুযোগ নিচ্ছে মালিকরা। ইন্ডষ্ট্রিয়াল পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটা মালিকের সুবিধার জন্য। মুরগীর খোপে শোয়ালের পাহারা হয়েছে। শ্রমিকরা অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। খাস জমিতে শ্রমিকদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।
রেজওয়ান সিদ্দিকী, ডেপুটি ম্যানেজার, একশন এইড বাংলাদেশ:
রানা প্লাজার শ্রমিকের পরিবার গুলো এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। রানা প্লাজার ঘটনা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় সেই দিনটির কথা। এক সময় মানুষ দায়িত্ব ভুলে যায়। তাজরীনের শ্রমিকরা কি তাদের ক্ষতিপূরণ পেয়েছে? বিজিএমইএ, শ্রমিক ফেডারেশন আছে সবাইকে কাজ করতে হবে। একশন এইড থেকে দুইহাজার বাইশ জনের ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। দেখা গেছে তারা এখন ধার দেনা ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। আহত যারা আছে তারা কি করে তার চিকিৎসা খরচ যোগাবে। তাদের অনেকের দীর্ঘকালীন চিকিৎসা করতে হবে। ১৩০ জন বলছে তারে অবস্থা খারাপ। ২১ জনের অবস্থা খুবই খারাপ। ২২২ জনকে পরর্বতীতে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকের টাকা নিয়ে যাচ্ছে বিদেশীরা কিন্তু শ্রমিকের জন্য কিছুই করছে না। বিজিএমইএর দায়িত্ব নিতে হবে। নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা কি অবস্থায় আছে। তারা কি তাদের স্বজনদের খোঁজ পাবে? ডিএনএ টেষ্ট করে কি আমরা পরিচয় পাব? যারা আহত আছে তাদের কি করে পূর্ণবাসন করা যায় এ বিষয়ে কাজ করা দরকার। এজন্য সমন্বয় দরকার।
ডা. কামরুন্নাহার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
রানা প্লাজা ধসের পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জরুরী মেডিকেল টিম সেখানে কাজ করেছে। উদ্ধারকারী হিসেবে যারা ছিল তাদের সহায়তা করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
আহত অবস্থায় যারা আছে তাদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। ৩১৮ জন হাসপাতালে ছিল। তাদের অবস্থা আমরা সব সময় পর্যবেক্ষণ করেছি। ১৬১ জনকে ফিজিও থেরাপি দেয়া হয়েছে। ৪২ জনকে দেখেছেন গাইনোকালোজিষ্ট। চোখের সমস্যা ছিল ৬৪ জনের। শিশু ৩৭ জনকে দেখেছি। ৫৪ জনকে পরবর্তীতে ফিজিও থেরাপি দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৫৩ জন ভাল হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। ৬ জন এখনো হাসপাতালে আছে তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন। ২৮ জন যারা গর্ভবতী ছিলেন তাদের এন্টিনেটাল ও পোষ্টনেটাল সেবা দিয়েছি। যারা গর্ভবতী ছিলেন পরে মা হয়েছেন। এ সব মায়েদের পুষ্টি সহায়তা দিয়েছি। আহত শ্রমিকদের যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন তাদের আমরা স্বাস্থ্য বীমার আওতায় এনেছি। দুঃখজনক বিষয় হলো হাড়ের ভিতর রড ঢোকে আছে চিকিৎসা হয়েছে কিন্তু হাড় জোড়া লাগেনি। তাকে পরবর্তীতে আসতে বলা হয়েছে কিন্তু আসেনি। অপারেশন করা হয়েছিল কিন্তু ঠিকমত হয়নি। এই চিকিৎসা অনেক ব্যয় বহুল রোগী এখন হতাগ্রস্ত আছে।
শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। স্বামী নিখোঁজ এখনো সেই পরিবার কোন সহায়তা পায়নি। আহত মহিলা শ্রমিক রূপালী স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। তাকে সান্তনা দেয়ার মত কেউ নেই।
সুলতান আরা, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যারা ব্যবসা করছে তারা শ্রমিকের কথা ভাবে না। পঙ্গুত্বে চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল। সব সময় প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয় নারীদের। সামাজিক ভাবে সচেতন হওয়া দরকার। কোন দুর্ঘটনায় শ্রমিক আহত হলে তার দায় দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। স্বাস্থ্য সেবার প্রতি আগে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
আবুল হোসাইন: প্রেসিডেন্ট, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ও ওয়ার্কার্স ফেডারেশন:
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মনোযোগী হওয়া দরকার। যারা আহত হয়েছে তাদের কিভাবে সেবা দেবো সেই বিষয়টি আগে দেখা দরকার। সরকারের দায়িত্ব নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া। তাই রানা প্লাজার শ্রমিকদের ব্যাপারেও প্রধান দায়িত্ব সরকারের। আজ পর্যন্ত শ্রমিকদের সঠিক তালিকা পাওয়া যায়নি। কত শ্রমিক নিহত হয়েছে কত শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে কত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার সঠিক কোন হিসাব সরকারে কাছে বা বিজিএমইএর কাছে নাই। সরকার যে অনুদান দিয়েছে তা একেক পত্রিকায় একেক রকম দিয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন, সেনাবাহিনী এদের কাছে অবশ্যই তালিকা আছে। নিখোঁজের কথা বলা হচ্ছে এক বছর নিখোঁজ থাকে কি করে? আর কোন শ্রমিক কাজ করতে গিয়ে মারা যাবে না এটা আমরা আশা করছি। এখন থেকে আরেক টি রানা প্লাজা দেখতে চাই না। এর জন্য যা যা করা প্রয়োজন সরকার তা করবে। সরকার দেশের আইন অনুযায়ী কাজ করবেন। ইতিমধ্যে ১১ টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লেবার রাইট নাই। এখনো কারখানায় তালা বন্ধ থাকে এটা বেআইনি। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের জেলে পাঠানো হয়। এখনো ঘুম না ভাংলে মহাবিপর্যয় হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এটা আমরা চাই না।
রফিকুল ইসলাম সুজন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন:
একটানা তিন দিন কাজ করেছি। সেই ঘটনা বর্ণনা করা যায় না। আমরা বলে ছিলাম ১২০ জনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনেরা এখনো সন্ধ্যা ৭-থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসে থাকে তারা। যেই যায় তার কাছে সহায়তা চায়। যেসব শ্রমিকরা নিখোঁজ রয়েছে তাদের পরিবার ভিক্ষুকে পরিণত হয়ে গেছে। অভিশাপের জীবন যাপন করছে। দ্রুত নিখোঁজ শ্রমিকদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। রানা প্লাজা শ্রমিকদের কেউ কাজ দেয় না।
লেবার কোর্টে গেলে ৩ বছর ঘুরতে হয়। এই হল শ্রম আইন। শ্রম আইন যেটা করা হয়েছে সেটা শ্রমিকের পক্ষে হয়নি। তাই এই আইন পরিবর্তন হওয়া উচিত। শ্রম আইন অনুযায়ী দাবি করলে শেষে শ্রমিককেই খুঁজে পাওয়া যায় না। ১১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে তাদের স্মরণে ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় রানা প্লাজার সামনে মোমবাতি জালানো হবে। যারা দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থ অবস্থায় আছে তাদের চিকিৎসার দাবি জানাব। আজকের সভা থেকে দাবি জানাই তাদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা হোক। রানা প্লাজার সামনে শ্রমিকদের স্মৃতি স্তম্ভ করা হোক।
রেজাউর রহমান গবেষক
শ্রমিকের কি অবস্থা তা জানার চেষ্টা করেছি। আহতদের স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে সরকারের কাছ থেকে কাজ করার আইনগত ভিত্তি কি? কারখানা বন্ধ করে দিয়ে বেতন দিচ্ছে না। শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য কিছুই করা হয়নি। ক্ষতিপূরণ এটা আইনগত শব্দ। এ পর্যন্ত যা দেয়া হয়েছে তা অনুদান। ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ দেয়া হয়েছে মালিকের সুবিধার জন্য। যারা বায়ার হিসেবে ব্যবসা করতে আসেন তারা হল ওয়াল মার্ট, গ্যাট তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। সবাই ক্ষতিপূরণের বিষয় বলছে। এখানে স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এটা নতুন দিক।
ড. আফরোজা আক্তার : প্রধান নির্বাহী ও প্রিন্সিপাল সাইকোলজিষ্ট, নির্ণয়
ট্রমা এর কোন সময় সীমা নেই। সব সময় হতে পারে। যারা রানা প্লাজায় চাপা পড়ে ছিল তারাই কি শুধু ট্রমাটাইজ হয়েছে? না আমরা যারা টিভিতে সারাক্ষণ দেখেছি আমরাও ট্রমাটাইজ হয়েছি? আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের সাথে কাজ করা। হঠাৎ স্মৃতি ভ্রম হয়ে যেতে পারে। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে পারে।
রানা প্লাজার শ্রমিকদের কেউ চাকরি দিতে চায় না। এখন যারা বেঁচে আছে তাদের কাউন্সিলিং এর খুব প্রয়োজন। কাউন্সিলিং এ অনেক রোগী ভাল হয়ে যায়। সংস্থা ধরে যদি প্রশিক্ষণ দেয়া যায় তা হলে তারা কাউন্সিলিং করবে। ব্যক্তিগত ভাবে কিছু মানষিক টিপস জানতে হবে। শরীর আপনার এটা আপনাকে ঠিক রাখতে হবে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট দায়িত্ব নিতে পারে। মৃত্যু কঠিন, কিন্তু ট্রমাটাইজ হয়ে বেঁচে থাকা আরও কঠিন।
শাহ মোঃ আবু জাফর, সভাপতি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল এন্ড গার্মেন্টস ওয়াকার্স ফেডারেশন:
শ্রমিকরা মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শ্রমিকদের কোন ট্রেড ইউনিয়ন নাই। যে কোন অপরাধের পেছনে দুর্নীতি অর্থলিপ্সা কাজ করে। রানা প্লাজা ও তাজরীনের পিছনেও অর্থলিপ্সা কাজ করেছে। যুদ্ধ অপরাধিদের বিচার যদি আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে হয়। তা হলে রানা প্লাজার ব্যাপারে বিচার হয় না কেন। কোড না মেনে বিল্ডিং করলে এমনই অবস্থা হবে। শ্রমিক মরবে। এই সেক্টরে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। এই কারখানা রক্ষা করতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয় তার জন্য বিল্ডিং কোড মেনে বিল্ডিং করা হোক। প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যের জন্যে অর্থ তুলেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ শক্তি শালী ট্রেড ইউনিয়ন নাই। কিছু করতে গেলে মামলা হয়ে যায়। মেয়ে শ্রমিক হলে তার নামে অপবাদ রটায়। শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য দাবি জানাই। আন্তর্জাতিক ভাবে যে সহায়তা পাওয়ার কথা তা যেন পায়। চিকিৎসা, খাবার, সব ধরনের সহায়তা যেন পায় সেই দাবি জানাই।
সভাপ্রধান ফরিদা আখতার শেষে বলেন, আমার মনে হয় শ্রমিকদের মত ডিসপজিবোল আর কেউ নাই। এখন ডিসপজিবলের যুগ হয়ে গেছে, কাজ শেষ হলে ফেলে দেয়া যায়। তার যত্নের কোন প্রয়োজন নেই। আন্তর্জাতিক ভাবেও গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে চক্রান্ত আছে। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। যারা জিন্দা মরা হয়ে গেছে তাদের পাশে থেকে সুস্থ্য জীবন দিতে পারি কিনা ?