বেসামাল আগাছা ও মারাত্মক বালাই দমন নয়, জিএমও নিজেই সৃষ্টি করে
জিএমও বা বিকৃত ফসলের সমর্থকরা বলছেন বিষ ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ রক্ষা করবেন। তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন। জিএম ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশের উপর চাপ বাড়ছে। জিএম তুলা, জিএম ভ্ট্টুা ও জিএম সয়াবিন ফসল বিস্তারের সাথে সাথে আনুসাঙ্গিক অনেক সমস্যার সাথে বেসামাল আগাছা এবং মারাত্মক পোকা-মাকড়ের আর্বিভাব ঘটছে।
বহুজাতিক বাইওটেক কোম্পানীর পরিবেশ বাচাবার এবং ক্ষুধা নিবারণের আবেগঘন প্রচারণার বিপরীতে জিএম ফসলের মেধাসত্ব নিবন্ধন, আগাছানাশক ও বালাইনাশকের রমরমা ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সালে আগাছা নাশকের ব্যবহার বেড়েছে ৫২৭ মিলিয়ন পাউন্ড এবং বালাইনাশকের ব্যবহার বেড়েছে ৪০৪ মিলিয়ন পাউন্ড, প্রায় ৭% (htt://www.enverope.com/content/24/1/24). এই বাড়তি আগাছানাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে রোগ বালাই ও আগাছার বিবর্তন ত্বরান্তিত হয়েছে। শক্তিশালী আগাছা ও মারাত্মক রোগ বালাই এর প্রাদূর্ভাব ঘটছে।
বহুজাতিক কোম্পানি মনস্যান্টোর রাউন্ডআপ সর্বাধিক ব্যবহৃত আগাছা নাশক। এর ব্যবহার ১৯৯৬-২০১২ এর মধ্যে দশ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রাউন্ডআপ রেডি আগাছার ও উদ্ভব ঘটেছে লক্ষনীয় ভাবে। রাউন্ডআপ রেডি (গ্লাইফোসেট) জিএম ফসল যেমন বিটি তুলা, বিটি সয়াবিন, এবং বিটি ভ্ট্টুা আবাদের ফলে পিগ এইড (Amaranths spp.) এবং ওয়াটার হেমস (Amaranthus rudis) এর মত আগাছা রাউন্ডআপ সহনশীল হয়ে উঠছে। আগাছানাশক নাশক ব্যবহার করে কোন ফল হচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ক্যানাডাসহ বহুদেশের কৃষকরা যারা রাউন্ডআপ রেডি ফসল হিসাবে বিটি তুলা, বিটি ভ্ট্টুা, বিটি সয়াবিন ইত্যাদি আবাদ করছেন তারা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
বায়োটেক কোম্পানি এখন আরো উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আগাছা নাশক যেমন ‘টুফোঢ়-ডি’(২,৪-D) যা ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যবহৃত এজেন্ট অরেঞ্জ এর বিশেষ উপাদান তা ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের উপদেশ দিচ্ছেন। এখন জিএম ফসলের মাধ্যমে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ধ্বংশ যজ্ঞ, বিভৎস চেহারা তথা পরিবেশ বিপর্যয়ের মত পরিণতির দিকে সারা পৃথিবীকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
তবে কাহিনী এখানেই শেষ নয়। টুুফোঢ়-ডির পরিণাম ও রাউন্ডআপের মতই। ইতোমধ্যে দেখা গেছে ওয়াটার হেম্ú আগাছা টুফোঢ় -ডি প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এমন আরো ১৬টি আগাছা টুফোরডি প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে (http://www.reuters.com/article/2012/08/15us-usa-agriculture-weed-id USBRE87E 134201208515)।
প্রতিরোধী কীট:
রুটওয়ার্ম (Diabrotica virgifera virgifera) ভুট্টার একটি ক্ষতিকর শেকড়ের পোকা। বিটি ভুট্টা উদ্ভাবন করা হয়েছিল রুটওয়ার্মের আক্রমন প্রতিরোধের জন্য। ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ব্যাকটেরিয়া রুটওয়ার্মের বিরুদ্ধে বিষের মত কাজ করে। সে কারণে এ ব্যাকটেরিয়ার জিন ভুট্টার মধ্যে সংযোজন করে ৃভুট্টট্টাকে রুটওয়ার্ম প্রতিরোধী করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে জিন সংযোজনের এ কাজটি করা হয়েছিল। ফলে ভুট্টা উৎপাদনের ক্ষেত্রে কীটনাশকের ব্যবহার ২০০৫ সালে যেখানে ২৫% ছিল ২০১০ সালে তা কমে ৯% এসেছিল (http://online.wsj.com/news/article/ SB10001424127887323463...)। তবে ইদানিংকালে দেখা যাচ্ছে বিটি ভুট্টা রুটওয়ার্ম সংবেদনশীল হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ বিষ দিলেও সে মরছে না।
সমস্যা কি?
জিএমও মোটেই নিরাপদ নয়। বেশীর ভাগ জিএমওই হয় আগাছা নয়, বালাই প্রতিরোধের জন্য জিন সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০% এরও বেশী জিএমওশুধু মাত্র আগাছা প্রতিরোধের জন্য করা হয়েছে। জিএমও প্রবর্তনের ফলে রাউন্ডআপের মত মারাত্মক আগাছানাশকের ব্যবহার ১৫ গুন বেড়েছে। শক্তিশালী আগাছা ও মারাত্মক বালাইনাশকের উদ্ভব ঘটেছে জিএমও উদ্ভাবনের পরেই। এভাবে চলতে থাকলে এর শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। বিটি বেগুন প্রবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশ জিএম আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। উন্নত বিশ্ব এখন জিএম বর্জনের জন্য শোচ্চার। আমাদেরও নির্বিকার থাকার উপায় নাই। প্রাণবৈচিত্র, খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমাদেরও জিএম বর্জনের জন্য ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বেগুনের আদি উৎপত্তিস্থল। বেগুনের বৈচিত্র রক্ষা করা আমাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দ্বায়িত্ব। রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। এ দেশে উন্মুক্ত বিটি বেগুনের চাষাবাদ চালু হলে বেগুনের বন কুটুমদের সাথে বিটি বেগুনের পর পরাগায়নের ফলে বেসামাল আগাছা, মারাত্মক রোগ বালাই ও কীট পতঙ্গের উদ্ভব ঘটার আশংকা রয়েছে।
কাজেই জিএমও বললেই বৈজ্ঞানিক উন্নতি বোঝার সুযোগ নেই, এর সাথে রয়েছে কোম্পানির বালাইনাশক ও আগাছানাশক বাণিজ্যের সম্পর্ক। জনগণকে এই ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।