টাঙ্গাইলে ছয় জাতের আউশ ধান
বাংলাদেশের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে ধান চাষ করে আসছেন। আগে তারা আমন ধানের পাশাপাশি আউশ ধানও চাষ করতেন। কিন্তু ইরি ধান, সার বিষ ব্যবহার ও পানির তলা থেকে পানি তোলার কারনে দেশের চাষাবাদ পদ্ধতি বদলে যায়। কৃষকরা তাদের আবাদী বিভিন্ন জাতের আউশ ধান হারিয়ে ফেলেন। বিভিন্ন এলাকায় আউশ ধান বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে হিসাব করলে আউশ ধান বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে চলেছে।
টাঙ্গাইল জেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে তারা তাদের এলাকা থেকে আউশ ধানের মলকা, কালামানিক, ভাতুরী ইত্যাদি জাত হারিয়ে ফেলেছেন। প্রাণ সম্পদের এই বিলুপ্তি বিপজ্জনক।
নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকেরে উবিনীগের উৎসাহে প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করছে। প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার্থে উবিনীগ বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন নতুন ফসলের জাত সংগ্রহ করে থাকে। আউশ ধানের জাত রক্ষার জন্য উবিনীগ বিভিন্ন জেলা থেকে আউশ ধানের বীজ সংগ্রহ করে। নয়াকৃষির কৃষকদের মাধ্যমে বছর বছর তা পুনরুৎপাদন করা হয়।
তবে কৃষকদের কাছে এবং আউশ ধান জনপ্রিয় করে তোলা খুবই দরকার। সেটা করতে হলে বিভিন্ন জাতের মধ্য থেকে সেই জাতগুলো বেছে নেওয়া জরুরী যাদের ফলন বেশী এবং ভোক্তারাও যা স্বাদ ও গুণের জন্য অধিক দামে কিনতে আগ্রহী। এই লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত উবিনীগ এবং নয়াকৃষির কৃষকরা আউশ ধানের ৯টি জাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। এর মধ্য থেকে ধান এবং খড়ের ফলনের ভিত্তিতে ৬টি জাত কৃষকদের মধ্যে আরও ছড়িয়ে দেবার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। গত ৩ বছর ধরে কৃষকরা তাদের হারিয়ে যাওয়া আউশ ধান উবিনীগের মাধ্যমে সংগ্রহ করে চাষ করছেন। নয়াকৃষির কৃষকরা চলতি বছরও আউশ ধানের ৬টি নির্বাচিত জাত চাষ করছেন। ধানগুলি হচ্ছে:- কালামানিক, ভইরা, ভাতুরী, ষাইটা, খাড়াজামড়ি, শংখপটি।
হারিয়ে যাওয়া ধানের জাত পেয়ে কৃষকরা খুব খুশি। কারন এই জাতগুলি চাষে কোন খরচ নাই। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে জমি চাষ দিয়ে বীজ ছিটিয়ে রাখা হয়। নিড়ানি, সার, বিষ কোন কিছুই দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ৮০-৯০ দিনের মধ্যে এই ধান ঘরে তোলা যায়। অন্য ধানের তুলনায় আশু ঘরে ওঠে বলে এর নাম আউশ ধান।
তিল কাটার পরে জমি ৩মাস খালি থাকে। এই সময়ে আউশ ধান চাষের মাধ্যমে বাড়তি আয় করা যায়। আউশ ধান চাষে জমির উর্বরতাও বাড়ে। তাছাড়া এই সময়ে গরুর যে খাদ্য ঘাটতি হয় আউশ ধানের খড় খেয়ে গরুর খাদ্য সমস্যাও দূর করা যায়। আউশ ধানের খড় খেলে দুধ দেওয়া গরুর দুধের পরিমান বেশি হয়। দুধ খেতেও ভারী মিষ্টি লাগে। দই, চিড়া খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। আউশ ধানের চিড়া খেতে বেশ সুস্বাদু। আউশ ধানের ঢেঁকিছাটা চাউলের ভাত গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবার। শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হলে আজকাল মানুষ ওষুধের দোকান থেকে বিভিন্ন ভিটামিন বড়ি বা বোতল কিনে খায়। তাই আউশ ধানের চাষ পুষ্টি সমস্যার সমাধানের জন্যও জরুরী। আউশ ধানের চাষ করে বাজারে ভেজালের ভিড়ে আমরা আউশ ধানের চাল, চিড়া পেতে পারি।
শস্য প্রবর্তনা নানা জাতের ধান ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাবার চেষ্টা করে। মৌসুম আওনুযায়ী কালামানিক ও ভাতুরি এখন পাওয়া যায়। আর খুব শীঘ্রই শস্য প্রবর্তনায় ভইরা, ভাতুরী, ষাইটা, খাড়াজামড়ি, শংখপটিও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ধানের বৈচিত্রের সঙ্গে ভোক্তা হিসাবে আমাদের সম্পর্ক যতো বৃদ্ধি পাবে ততোই কৃষক পর্যায়ে বৈচিত্র ধরে রাখা সহজ হবে। ভোক্তা হিসাবে ধানের বৈচিত্ররক্ষার সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার উপায় হচ্ছে নাম জেনে ধানের চাল কেনা। প্রতি ধানই অনন্য। তাদের স্বাদ ও গুণ আলাদা।
শস্য প্রবর্তনা ভোক্তাদের মধ্যে এই সচেতনতা তৈরী করছে। এর উপকার সরাসরি পাচ্ছে নয়াকৃষির কৃষকরাও।