আরশিনগর বিদ্যাঘরের মাছ, ফল ও পাখী
ঈশ্বরদীর আরশিনগর বিদ্যাঘরে আমাদের পুকুর তিনটা। আজ বিদ্যাঘরের বড় পুকুরে সকাল বেলা মাছ ধরা হয়। এই পুকুরটির অবস্থান প্রায় ১০ বিঘা জমির উপর। সকালে স্থানীয় এলাকার মাছ ধরার ‘মাঝি’রা এই পুকুরে মাছ ধরতে আসেন। তাদের সাত-আট জনের একটি মাছ মারার দল থাকে। বড় পুকুর, তাই দক্ষ মানুষ দরকার হয়।
বড় জাল টানার সঙ্গে সঙ্গে পুকুরে মাছের লাফালাফি শুরু হয়ে যায়। যে সকল মাছ আজ ধরা হোল তারা নানান জাতের: রুই, কাতলা, মৃগেল, শরপুঁটি, মলা, বাটা ও আরও নানান মাছ। তেলাপিয়াও আছে। যেহেতু নয়াকৃষি পদ্ধতিতে মাছের বৈচিত্র রক্ষা ও মাছের চাষ করা হয় সে কারনে দেখা যায় তেলাপিয়ার স্বাদ একদমই দেশী মাছের মতো। ব্যাপারিদের কাছ থেকে পোনা কিনে ছাড়লে দেখা যায় কিছু গ্রাস্কার্প বা সিলভার কার্পও চলে আসে।
প্রায় ৯০ কেজির উপর মাছ ধরা হোল। বিক্রয়ের জন্য এই মাছগুলো এখন ধরা হবে। পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, মাছ ধরবার এটাই ভাল সময়। কিন্তু সব মাছ একসঙ্গে ধরা হবে না। মাছগুলো স্থানীয় বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার হাজারীপাড়া গ্রামে ১৯৯৫ সালে উবিনীগ আরশিনগর বিদ্যাঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। আরশিনগর বিদ্যাঘরকে এখানে নয়াকৃষি ও উবিনীগ নামে সাধারণত মানুষ চেনে। এই এলাকা অবশ্য খরা এলাকা। এখানকার কৃষকরা খরা সহনশীল ধানের বীজ সংগ্রহে রাখে এবং উবিনীগ তাদের সে কাজে উৎসাহিত করে। নয়াকৃষি বীজ সম্পদ কেন্দ্র থেকে কৃষকরা বীজ সংগ্রহ করেন। নয়াকৃষি আন্দোলনের কর্মীরা কৃষকের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কোন এলাকায় কি জাতের বীজ লাগাতে হবে তা ঠিক করেন। সেই ক্ষেত্রে ফলন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পুষ্টিগুনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নয়াকৃষি আন্দোলনের মূল কাজ কৃষি ও প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে। ফলে বিচিত্র ধানের আবাদের মধ্য দিয়ে একর প্রতি ফলন বাড়ানোর পদ্ধতি কৃষকরা শিখে খুব খুশি। কারন তারা বীজ বা কৃষি উপকরনের জন্য সার ও বিষ কম্পানির মুখাপেক্ষি নন।
আরশিনগর বিদ্যাঘরে বিভিন্ন ধরণের গাছপালা আছে যেমন, আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, জামবুড়া, গাব, শিশুতোষ বা এভোকাডো, জামরুল, আমড়া, আমলকি, নারিকেল, সুপারি, বড়ই, পাকুর, বট, আরো রয়েছে ওষুধি গাছপালা ও অন্যান্য গাছ। এখান থেকে একটি ফল আমার অতি প্রিয় তা জামবুড়া। যে একবার খেয়েছে সে কখনো ভুলবে না এই কেন্দ্রের জামবুড়া। জামবুড়াটি খেতে অনেক সুস্বাদু।
বিদ্যাঘরের সুন্দর পরিবেশ। পুরা এলাকা পাখির কোলাহলে মুখর। মণে হয় পাখিদের বাজার বসেছে। যেমন, আজ দেখলাম হলুদ পাখি, কুটুম পাখি, চাতক পাখি, বুলবুলি পাখি, দোয়েল পাখি, মৌটুসি পাখি, টুনটুনি পাখি, গাং শালিক, ভাত শালিক, ঝুটি শালিক, চড়–ই পাখি, পেঁচা।
আরো আছে বাজপাখি। বাজ পাখি মৌ চাকের মধু খেয়ে ফেলে। এই কারণে বেশ অনেকদিন ধরে মৌমাছি চাক তৈরী করতে পারছে না। বাজ পাখি মাছ খেয়ে ফেলে। কিন্তু বিদ্যাঘর মৌমাছিদের জন্য চিন্তিত হলেও এতে অখুশী না। বাংলাদেশের আকাশ থেকে বাজপাখি হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের বসবসেরে জায়গা কমে যাচ্ছে।
নয়াকৃষি সকল প্রাণের সুরক্ষার জন্য কাজ করে। হয়তো বাজপাখিদেরকেও নয়াকৃষির শিক্ষা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। যেন তারা মৌমাছির চাক সব ভেঙে না ফেলে।