নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা সম্পর্কে


যাত্রা শুরু করেছিলাম ১৯৮৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর। দিনটির তাৎপর্য বাংলাদেশের নারীমুক্তি সংগ্রামে অপরিসীম। এই দিনটি বেগম রোকেয়া দিবস হিশেবে পালিত হয়। এই দিনে বেগম রোকেয়ার মৃত্যু দিবস হলেও দিনটি পালিত হয় তাঁর জন্ম-মৃত্যু দিবস হিশেবে। দীর্ঘদিন রোকেয়া অপরিচিত ছিলেন কিন্তু নারী আন্দোলনের দাবির ফলে এক সময় তাঁকে নারীমুক্তির অগ্রদূত হিশেবে সমাজে স্বীকৃতি দেয়া হোল। তখন থেকেই দিনটি নারীমুক্তি আন্দোলনের ক্যালেন্ডারে গুরুত্বপূর্ণ তারিখ হয়ে উঠেছে। এই দিনটি এখন সরকারি এবং বেসরকারি সকল পর্যায়ে পালিত হয়।

রোকেয়া দিবস গুরুত্ব পেয়েছে বলেই যে আমরা দিনটি বেছে নিয়েছি তা বলা ঠিক হবে না। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা নারীদের একটি নারীগ্রন্থ কেন্দ্র হিশেবে আবির্ভূত হওয়ার পেছনে যে কারণ রয়েছে তার সাথে দিনটির তাৎপর্য খুব ভাল করে খাপ খায়। রোকেয়ার কাজ থেকে আমরা যে প্রেরণা পাই এবং তাঁরই প্রদর্শিত পথে নারীমুক্তির সংগ্রামকে যদি এগিয়ে নিতে চাই তাহলে প্রতীকীভাবে আমাদের এই দিনের সাথে সম্পর্ক হয়ে যায়। আমরা নারী সংগঠনগুলোর মধ্যে আরও একটি নতুন সংগঠন হিশেবে নাম লেখাতে চাই নি, আমরা চেয়েছি চলমান নারী আন্দোলনের সহাযক একটি প্রতিষ্ঠান হিশেবে ভূমিকা পালন করতে। বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এর অনেক চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, অনেক অর্জন করেছি। ব্যর্থতাও আছে। তবে সব সংগঠনের কাজের সমন্বয় ও প্রকাশনাসমূহ একখানে পাওয়ার উপায় কি ? তাই একটি গ্রন্থকেন্দ্র দরকার যেখানে সব সংগঠনের প্রকাশনা, লেখকদের লেখালেখি, তাঁদের একটু কথা বলার জায়গা করা, সাধারণ মহিলা যারা কোন সংগঠন করেন না কৃষক, শ্রমিক সবার জন্যে একটি জায়গা আমরা কি করে করবো এমন একটি প্রয়োজন আমরা অনেক সময়ই অনুভব করেছি।

এরই ফলস্বরূপ নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার আত্মপ্রকাশ - বাংলাদেশে নারীদের জন্যে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারীগ্রন্থ কেন্দ্র হিশেবে। তারিখ ৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সাল, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৩৯৬ সাল।

লাইব্রেরী ও বই বিক্রি

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় বইয়ের দুইটি বিভাগ আছে। একটি অংশে বসে পড়ার জন্যে বই, দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা নারীমুক্তির দর্শন, আন্দোলন ও নানা ধরণের গবেষণার ওপর বই। এই বিভাগকে রেফারেন্স কিংবা লাইব্রেরী বলা হয়। যদিও ঘরে বই নিয়ে যাবার ব্যবস্থা নেই। কেউ কোন বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফটোকপি করতে চাইলে অবশ্যই তা করতে পারেন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, নারী আন্দোলন কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী এবং গবেষকরা এই বিভাগের বই ব্যবহার করার জন্যে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় আসেন।

অন্য বিভাগটি হচ্ছে বই বিক্রির। বিক্রির বিভাগে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার নিজস্ব প্রকাশনা, প্রতিপক্ষ প্রকাশনা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের প্রকাশনা, লেখিকাদের বই বিক্রি হয়। এখানে যে কেউ তাঁর নিজস্ব প্রকাশনা বিক্রির জন্যে দিতে পারেন। তবে তা অবশ্যই নারী অধিকার এবং নারী মুক্তির স্বপক্ষে লেখা হতে হবে। পাক্ষিক চিন্তা পত্রিকা ও দেশী-বিদেশী পত্রিকাও বিক্রি হয়। এছাড়া পোস্টার, দিনলিপি, হস্তকাগজের নোটবই ইত্যাদি বিক্রি হয়।

প্রকাশক হিশেবে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা

বইয়ের জগতে নারীদের প্রকাশনার যেরূপ আমরা দেখি তাতে সব সময় হতাশ হতে হয়েছে। বইয়ের দোকানে গিয়ে বা গ্রন্থ কেন্দ্রে সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ের ওপর বই কেনা যায় বা পড়া যায় কিন্তু নারীদের ওপরে লেখা এবং নারীদের লেখা কোন বই খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন হয়ে পড়ে। বই সংগ্রহ ও বিক্রি করতে গিয়ে দেখা গেছে নারীদের ওপর লেখা এবং নারীদের দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা বই কম নেই। কারণ সেভাবে সাজিয়ে রাখা হয় না। বই-এর নাম বা লেখক/লেখিকার নাম জানা না থাকলে বই খুঁজে বের করা মুশকিল হয়, এটা আমরা সবাই জানি। নারী বিষয়ে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি অনেক লেখিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে পান্ডু-লিপি তৈরি করে রেখেছেন অথচ প্রকাশকের অভাব এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বই পাঠকের হাতে পৌঁছে নি। নারী বিষয়ে লেখা বই প্রকাশকরা ছাপাবেন কি না সেই ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সবসময় লেখিকার পক্ষে যায় না।

শুধু তাই নয়, নারী আন্দোলনের সহায়ক অনেক প্রকাশনা রয়েছে যা শুধু একটি চটি বই আকারে প্রকাশ করতে হয়, কিংবা ঝটপট পোস্টার করতে হয়, লিফলেট ছাড়তে হয়, আরও কত রূপে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করতে হয়, যার সাথে কোন ব্যবসার সম্পর্ক নেই আছে কাজের সম্পর্ক।

এই সকল বিষয় বিবেচনা করে খুব দ্রুত নারীগ্রন্থ প্রবর্তনাকে প্রকাশক হতে হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা বই প্রকাশ করে আসছে। বাংলা ১৩৯৭ সাল।

আড্ডা, আলোচনা, গান

শুধু বই বিক্রি ও প্রকাশনার মাধ্যমে সকল নারীর কাছে পৌঁছানো যায় না এবং সবার কথা জানাও যায় না। তাই সর্বস্তরের নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যে সোমবারে মেয়েদের আড্ডা চালু করা হয়। সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে এই আড্ডা করা হয় বলে সেই দিনের নামেই আড্ডা এখন বিখ্যাত হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে, এখনও চলছে সোমবারে মেয়েদের আড্ডা। এখানে মহিলারা নিজেদের মতো করে প্রাণ খুলে কথা বলেন। ধরাবাঁধা কোন নিয়ম সেখানে নাই। ঘরের সাধারণ কথা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তাঁরা আলোচনা করেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপরও আলোচনা হয় এবং আলোচনার মধ্য থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মহিলারা এতে অংশ নেয়। এখানে বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। স্কুল ছাত্রী থেকে শুরু করে বৃদ্ধারাও অংশ নেয়। তবে বেশির ভাগ মহিলারা আসেন যারা সমাজে গৃহিণী হিশেবে পরিচিত। আড্ডায় তাঁদের পরিচয় গৃহব্যবস্থাপক হিশেবে।

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা নিয়মিত আলোচনা সভা, সেমিনারের আয়োজন করে। তার কোন নির্দিষ্ট দিন নেই। যেকোন দিন হতে পারে। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা নিজে যেমন আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে তেমনি অন্যরা করার জন্যে ভাড়া নিতে পারেন। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় এখন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা এ পর্যন্ত শ’ খানেক বই ও পোষ্টার প্রকাশ করেছে

এ ছাড়া বাংলা ১৩৯৮ সাল থেকে প্রতি বছর ‘দিনলিপি’ প্রকাশ করে আসছে

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান করে আসছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠান হচ্ছে সংসদের সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠান। নারীসংগঠন সমূহের দাবির পক্ষে ঐকমত্য সৃষ্টি করাই এই আলোচনার উদ্দেশ্য।

বিভিন্ন বই মেলায় অংশগ্রহণ

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা জাতীয় পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে বই মেলা হয় সেখানে অংশগ্রহণ করে। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি একুশের বই মেলায় আমরা অংশগ্রহণ করে আসছি এবং নিজ উদ্যোগে দেশী-বিদেশী বই মেলায় অংশগ্রহণ করছি।

একুশের বই মেলায় প্রতি বৎসরই নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার স্টল থাকে। মাসব্যাপী বই মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয় প্রচুর দর্শক, ক্রেতা ও পাঠকদের সঙ্গে কথা বলার, নারীগ্রন্থের কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচিতি ঘটানোর এবং আমাদের প্রকাশিত বই তাদের হাতে তুরে দেবার।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ১৯৯৫ সাল থেকে ১৫দিন ব্যাপী বই মেলার আয়োজন করে আসছে। প্রতি বৎসর এই মেলাতেও আমরা অংশগ্রহণ করি।

১৯৯২ সালে জুন ২৪-২৮ তারিখ পর্যন্ত ৫ম আন্তর্জাতিক নারীবাদী বই মেলা অনুষ্ঠিত হয় নেদারল্যান্ডের আর্মস্টাডেম শহরে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা আমন্ত্রণ পায় এবং অংশগ্রহণ করে।

১৯৯৪ সালে অষ্ট্রেলিয়ার মেলবর্ন শহরে জুলাইর ২৭-৩১ তারিখ পর্যন্ত ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক নারীবাদী বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা দুই বৎসর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নারীগ্রন্থ-প্রর্বতনা অংশগ্রহণ করে। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন অত্যন্ত প্রাণবন্ত। বই বেচাকেনার সাথে সাথে নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা, সিদ্ধান্ত এবং নারী মুক্তির পথে বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া মেলার আসল উদ্দেশ্য ছিল।

১৯৯৬ সালে কলকাতা বই মেলায় অংশগ্রহণ করি। কলকাতার পাবলিশার্স নয়া উদ্যোগের সাথে স্টল নিয়ে এই মেলায় অংশগ্রহণ করি।

১৯৯৯ সারে কলকাতায় পার্ক স্ট্রিট ময়দানে ২৭ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত বার দিন ব্যাপী বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতা বই মেলার থিম কান্ট্রি করার রেওয়াজ শুরু হয়েছে মাত্র তিন বছর আগে। এর আগে থিম কান্ট্রি ছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেন। এই বৎসর থিম কান্ট্রি ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মধ্যে নারীগ্রন্থ প্রকাশক হিশেবে আমরা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করি।

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার বিভিন্ন দিবস পালন

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা বছরের কয়েকটি দিনকে বিশেষভাবে স্মরণ করে এবং এই উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। যেমন ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ১৭ ডিসেম্বর মহিলা মুক্তিযোদ্ধা দিবস, ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস, ২৬ জুন জাহানারা ইমাম মৃত্যু বার্ষিকী। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার অন্যতম একটি দিক হচ্ছে সমকালীন আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় এবং নীতিগতভাবে মেলে সেই বিষয় নিয়েই কথা বলে। নারী নিষয়ক ও সমাজের যে কোন সমস্যা নিয়ে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা শুরু থেকেই আন্দোলন করে আসছে এবং এখনও করছে।

১৯৮৯

১. ৯ ডিসেম্বর নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার যাত্রা শুরু

২. বিভিন্ন নারী সংগঠন একত্রিত হয়ে নারী স্বাস্থ্যের প্রজনন প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ নেটওয়ার্ক

(সংক্ষেপে প্রতিরোধ নেট ওয়ার্ক) গঠন

১৯৯০

১. সোমবারে মেয়েদের আড্ডা শুরু

২. প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ আয়োজন

৩. প্রকাশনার কাজ শুরু

৪. একুশে বই মেলায় অংশগ্রহণ

৫. মিরপুর সারাকা গার্মেন্ট কারখানায় আগুন লেগে মালিকসহ ২৬ জন নারী শ্রমিক মারা যায়। মারা যাবার কারণ আগুন ছিল না, গেটে তালা দিয়ে রাখার ফলে আতংকিত শ্রমিকরা বাইরে আসতে পারে নি। ফলে দম বন্ধ হয়ে এবং পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছে। এর প্রতিবাদে গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনগুলোর ব্যাপক আন্দোলনে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু

৬. বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে নারী স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ সচেতনতা সৃষ্টির কাজ শুরু

১৯৯১

১. বাংলা বর্ষপঞ্জী অনুসারে দিনলিপি প্রকাশের কাজ শুরু। একটি বিশেষ বিষয় ধরে দিনলিপি প্রকাশ করা হয়। প্রথম বিষয় ছিল কৃষি

১৯৯২

১. নেদারল্যান্ড এ ৫ম আন্তর্জাতিক নারীবাদী বই মেলায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার অংশগ্রহণ করে। শত বছরের নারী শিরোনামের প্রদর্শনী ও সমাবেশ-এর আয়োজন করা হয়।

১৯৯৩

১. বাংলা ১৪০০ সালে শতাব্দির শেষ হিসাবে বাংলার নারীর অর্জন শীর্ষক মহাসম্মেলন করা হয় এবং “শত বছরের নারী” শিরোনামে প্রদর্শনী ও সমাবেশ আয়োজন। ১৪০০ সাল উদযাপন উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান, ৫ দিন ব্যাপী শত বছরের নারীদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র প্রদর্শনী করা হয়। এটাই ছিল নারীগ্রন্থের শুরুর পর প্রথম ব্যাপক আয়োজনে বড় আকারের অনুষ্টান।

১৯৯৪

১. অস্ট্রেলিয়ার মেলবর্ণ শহরে ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক নারীবাদী বই মেলায় অংশগ্রহণ

২. আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

৩. ২৬ জুন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মৃত্যুবরণ করেন। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ১৪ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত জাহানারা সপ্তাহ পালন করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সপ্তাহ ব্যাপী প্রদর্শনী, শ্রদ্ধাঞ্জলী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

৪. “শনিবারের গানের আসর” নামে গানের অনুষ্ঠান শুরু।

১৯৯৫

১. নারীদের দাবি-দাওয়া সম্বলিত বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে পায়রাবন্দ ঘোষণার জন্যে কাজ করা।

২. সম্মিলিত নারীসমাজ গঠন সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হওয়া।

৩. ১৫ ডিসেম্বর মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বীর প্রতীক তারামন বিবিকে সংবর্ধনা

৪. জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বই মেলার অংশগ্রহণ

৫. বাটামোড় থেকে সাইন্স ল্যাবরেটরি সড়ক পুরনো এলিফেন্ট রোডকে ‘জাহানারা ইমাম’ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু

৬. চীন দেশের হোয়ারো শহরে আন্তর্জাতিক বিশ্বনারী দিবসে অংশগ্রহণ

৭. নারী পাচার ও শিশু পাচারের বিরুদ্ধে কাজ শুরু

১৯৯৬

১. সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন এই বিষয়ে আন্দেলন শুরু

২. কোলকাতা বই মেলায় নারীদের বই প্রকাশক হিসাবে অংশগ্রহণ

৩. দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক গঠন এবং মূল উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে কাজ এবং নেটওয়ার্ক গঠন

৪. বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দাইদের কাজ সম্পর্কে জানা এবং তাদের সংগঠিত করার কাজ শুরু

১৯৯৭

১. সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সাথে মতবিনিময় সভা শুরু

২. নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার দাবি ও আন্দোলনের ফলে বাটামোড় পুরনো এলিফেন্ট রোডকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ‘জাহানারা ইমাম’ সড়কের নাম ঘোষণা

১৯৯৮

১. রোকেয়া দিবস পালনের ভিন্ন ধরণের উদ্যোগ। ৬-৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ দিন ব্যাপী রোকেয়া দিবস উদযাপন।

মেলা ও প্রদর্শনী এবং নারীদের গানের আয়োজন করা হয়।

১৯৯৯

১. দেশে প্রথম নারীদের বই মেলা ও নারী সমাবেশের আয়োজন

২. খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে এখনও চলছে।

২০০০

১. নারী অধিকার সম্পর্ক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন এলাকা ও কলকারখানায় পথসভা, সভা ও মতবিনিময় করা

২০০১

১. নারী পাচার ও শিশু পাচার নিয়ে ব্যাপক কাজ শুরু

২. বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, পরিবেশ, গোলকায়ন এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু

৩. সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সমাবেশ

২০০২

১. অতি মজার পিঠা মেলার আয়োজন

২. ১৬ মার্চ দিনব্যাপী নারীদের বই পরিচিতি উৎসব

৩. আগষ্ট ১৪-১৬ তারিখ কানাডার টরেন্টো শহরে আন্তর্জাতিক নারী স্বাস্থ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ

৪. প্রতি বুধবার নির্দিষ্ট বিষয়ে পাঠচক্রের আয়োজন

২০০৩

১. জানুয়ারী মাসে অতি মজার পিঠা এবং গুড় মেলা

২. আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে লেখিকাদের বইমেলা ও নারী সমাবেশ

৩. ১১-১৩ আগষ্ট দক্ষিণ এমিয়া নারী আদালত

৪. তাল পিঠা ও সুগন্ধি ধানের উৎসব

২০০৪

১. ভারতের মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত World Social Forum এ অংশগ্রহণ

২. আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয় কৃষক ও নারী সমাবেশের আয়োজন

২০০৫

১. এশিয়া আঞ্চলিক নারী ও স্বাস্থ্য সভার আয়োজন ২০০৫ সমাবেশের আয়োজন

২. আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া কৃষক ও নারী

২০০৬

১. এশিয়া আঞ্চলিক নারী ও স্বাস্থ্য সভার আয়োজন

২০০৭

১. আদিবাসিদের হস্ত ও বয়ন শিল্প প্রদর্শনী

২. এশিয়ান ইউমেন্স হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল (AWHRC) -এর বাংলাদেশ শাখা, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা

২০০৮

১. ‘নারী ও প্রাণবৈচিত্র্য’ শীর্ষক দক্ষিণ এশিয়ার নারী সম্মেলন

২. ধানের বৈচিত্র্য রক্ষা-আলোচনা সভা ও সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচী

২০০৯

১. কীটনাশক বন্ধ দিবস জেলা পর্যায়ে

২. বীজ ও সাংস্কৃতিক উৎসব ১৪১৫, কক্সবাজার

২০১০

১. আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার শত বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় প্রতি সোমবার মেয়েদের আড্ডায় বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, মোট ৭টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

২. ৮-ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার শত বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান-গোলটেবিল বৈঠক, কালো কাপড়ে নারীর প্রতিবাদ (Women in Black), নারীর আদালত (ট্রাইবুনাল)।

২০১১

১. ৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর আত্মপ্রকাশ

২. তাবিনাজের ব্রুশিয়ার প্রকাশ

৩. তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার না করার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি জেলা পর্যায় এবং তৃণমূল পর্যায়ে এবং বিশিষ্ট্য নারী নেত্রীদের নিয়ে

৪. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা সংসদ সদস্যদের সাথে‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ এর সংশোধনী ও বাজেটে বিড়ি, জর্দা, গুল এবং সাদাপাতা-র ওপর কর বৃদ্ধির লক্ষ্যে মত বিনিময় সভার আয়োজন

৫. ১৩ নভেম্বর ‘তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার’ বন্ধের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এর ৭টি জেলা এবং ২০টি উপজেলার ‘জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাদের নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা

২০১২

১. ‘নারী সম্মেলন ও মেলা, প্রাণ, পরিবেশ ও উন্নতি’ ২০১২

২. তাবিনাজের উদ্যোগে ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন ২০০৫ এর সংশোধনের লক্ষ্য জেলা পর্যায়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ

৩. জাতীয় বাজেটে (২০১২-২০১৩) তামাকজাত দ্রব্যে কর বৃদ্ধির দাবিতে নেটওয়ার্কভূক্ত ৫৮টি জেলায় একই দিনে এবং একই সাথে মানবন্ধন

৪. মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী-র উপস্থিতিতে “তামাক দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন সংশোধনের জন্য করনীয় শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা করা হয়

৫. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ওপর মতামত জরিপ করা হয় বিভিন্ন সেক্টর থেকে

ক. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মাননীয় মহিলা সংসদ সদস্যদের থেকে নেয়া মতামত

খ. শিক্ষক, আইনজীবী, ডাক্তার, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী, শ্রমিকসহ সকল পেশার মানুষদের থেকে মতামত নেয়া হয়

৬. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধিনে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার নিবন্ধন নেয়া হয়

৭. জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর ও শুল্ক আরোপের দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন

৮. ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর সংশোধনী নিয়ে সমাজের বিশিষ্ট্য নারী নেত্রীদের কর্মশালা

তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ)

তাবিনাজ (তামাক বিরোধী নারী জোট) গঠনের পর থেকে আমরা বুঝতে পারছি, এই কাজ আরও অনেক আগেই শুরু করা দরকার ছিল। যাদের সাথেই আমরা কাজ করেছি তাঁদের এটা বোঝানোর দরকার পড়েনি যে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নারীদের জন্য কত ক্ষতিকর। তারা নিজেরা ব্যবহার করুক কিংবা তার আশে পাশে, ঘরে বাইরে যারা আছে তারা করুক, তামাকের ক্ষতি থেকে নারীর রেহাই পাওয়া খুব কঠিন কাজ। তবুও এখন থেকেই কাজ করলে অনেক উপকার হতে পারে। তাই তাবিনাজ খুব সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ৩১ মে, ২০১০ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে নারী সংগঠন সমূহের সাথে সভা করতে গিয়ে তাবিনাজ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

মূল কাজ হচ্ছে নারীদের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা। নারী নিজে তাকে রক্ষা করতে পারলে তার পরিবারের অন্য সকলেও রক্ষা পাবেন এমন আশা নিশ্চয়ই করা যায়। কিন্তু এই কাজ ভাল ভাবে করতে হলে আমাদের যথেষ্ট তথ্য দরকার। তাবিনাজের কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি তথ্য যা আছে, তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় না। এই সুযোগ নিয়ে তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যবহার হচ্ছে এবং মানুষ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এই দ্রব্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপেই ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাবিনাজ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে ক্ষতির বিরুদ্ধে নারীদের সংগঠিত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়।

নারী ও প্রাণবৈচিত্র্য

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা এবং নয়াকৃষি আন্দোলন ইতিমধ্যে এই বিষয় নিয়ে গত বছর (২০০৭) নানা সভা ও কর্মশালার আয়োজন করেছে এবং নারীর জীবনের সাথে প্রাণবৈচিত্র্যের ঘনিষ্ট সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছে। আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা, পানি, পরিবেশ, সার্বিকভাবে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার সাথে নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস, বিশেষ করে বীজ হাতছাড়া হয়ে গেলে পরিবারে নারীর অবস্থান দূর্বল হয়ে পড়ে এবং নারীর ওপর নির্যাতন বাড়ে। কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে নারীরা নানা ধরনের জটিল রোগের শিকার হচ্ছে। আমরা নারী আন্দোলনের দিক থেকে নারী অধিকারের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক নিয়ে প্রচুর আলোচনা করি এবং লড়াই সংগ্রাম করি কিন্তু নারীর জীবনের অতি কাছাকাছি বিষয়, যার সাথে জীবন মরনের সম্পর্ক রয়েছে তা উপেক্ষা করে চলি। আমাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রাণ রক্ষার ক্ষেত্রে নারীর ভুমিকা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

বাংলাদেশে নয়াকৃষি আন্দোলন প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা প্রচলনের ক্ষেত্রে ১৯৯০ সাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ পর্যন্ত ২ লক্ষ কৃষি পরিবার এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছে। নয়াকৃষি আন্দোলনে নারী কৃষকরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারণ তাঁরা বীজ রক্ষা, ওষুধি গাছ রক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা নয়াকৃষি আন্দোলনের হাত ধরে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার কাজ করছে এবং ৫৮ টি জেলায় ৭০টি নারী প্রধান সংগঠনকে নিয়ে নারী ও প্রাণবৈচিত্র্য নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে।

নারী ও প্রাণবৈচিত্র্য নেটওয়ার্ক:

নারীর সাথে পরিবেশ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়টি খুবই ঘনিষ্টভাবে জড়িত। অথচ, নারী উন্নয়ন বা নারী মুক্তির আন্দোলনে এই বিষয়টি খুব জোড়ালোভাবে হাজির করা হয় না। তার ফলে নারীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নারীরাই এখনো প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করছেন এবং তাদের জ্ঞানই আমাদের জন্য বড় সম্পদ। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা দীর্ঘদিন থেকে নারীর অধিকার রক্ষায় ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে বাংলাদেশের ১৮টি জেলার ১৮টি নারী প্রধাণ সংগঠন নিয়ে নারী ও প্রাণবৈচিত্র্য নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। নেটওয়ার্ক সংগঠনগুলি তৃণমূল পর্যায়ে নারী ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে আসছে। বর্তমানে ২০১২ সালে এসে এই নেটওয়ার্কের সদস্য সংখ্যা হয়েছে ৪৭টি।

দাইয়ের কাজ:

উবিনীগ ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার বিভিন্ন এলাকায় দাই নেটওয়ার্ক পরিচিতি

স্বাস্থ্য গবেষণার মধ্য দিয়ে উবিনীগের সূচনা। নয়াকৃষি আন্দোলনের বিভিন্ন কেন্দ্র টাঙ্গাইল,ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, শাহজাদপুর, কক্সবাজার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় নারী স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষনার কাজ অনেক আগে থেকে করে আসছে। গবেষনায় দেখা যায় গ্রামীণ নারী স্বাস্থ্য ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় সমাজে দাইরা অগ্রণী ভুমিকা রাখে। এখনও গ্রামের ৮৫% গর্ভবতী মহিলা দাইদের উপর নির্ভরশীল। দাইদের কাজের স্বীকৃতি ও তাদের লোকায়িত জ্ঞানের প্রসারের লক্ষ্যে নয়াকৃষি আন্দোলন দাইদের সংগঠিত করনের মাধ্যমে বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, কর্মশালা, ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মধ্য দিয়া একটি নেটওয়ার্কীং গ্র“প তৈরী হয়েছে। নয়াকৃষি এলাকার দাইদের নিয়ে নয়াকৃষি দাই সমিতি গঠন করা হয়েছে। দিন দিন সমিতির সদস্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দাইমাদের চাহিদা ও পরামর্শের ভিত্তিতে তাদের কাজের সহযোগীতা ও পরিচিতি বিস্তারের লক্ষ্যে তাদের মাঝে কীটব্যাগ বিতরণ করা হয়। কীটব্যাগ তাদের কাজের উৎসাহ ও দায়িত্ববোধ আরোও বাড়িয়ে তোলে।

২০০৬ সালে নয়াকৃষি কেন্দ্র টাঙ্গাইলে দেশের বিভিন্ন জেলার দাইদের নিয়ে তিন দিনের একটি সম্মেলন করা হয়। সম্মেলণে প্রায় ৩০০ জন দাই অংশ নেন।

নয়াকৃষি আন্দোলনের দাইদের কাজের অগ্রগতি প্রতি একাত্বতা প্রাকাশ করে, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার নেটওয়ার্ক সদস্য সংগঠনগুলো দাইদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা নিজ নিজ কাজের এলাকায় দাইদের সংগঠিত করে সমিতি গঠনের মাধ্যমে দাইদের কাজ ও নারী স্বাস্থ্য সেবায় সহায়তা প্রদান করছেন।

নয়াকৃষি এলাকার দাই সমিতি :

এলাকার কয়েকটি গ্রামের দাইদের সমন্বয়ে নয়াকৃষি দাই সমিতি গঠন করা হয়। দাই সমিতির সদস্যদের নির্বাচিত একজন দলনেতা, সেক্রেটারী থাকে। দাইমারা নিজেদের উদ্যোগে প্রতি সপ্তাহে/প্রতি মাসে /পাক্ষিক ভাবে সমিতির সদস্যরা নিজেরা অভিজ্ঞতা বিনিময়, বর্তমান সমস্যা মোকাবেলায় করণীয় ও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন নিয়মিত সভার মাধ্যমে।

 

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।