‘উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা’ (উবিনীগ) শুরু হয়েছে ১৯৮৪। দাতা সংস্থাগুলো উন্নয়নের যে ধারণা চাপিয়ে দিচ্ছিলো সেইসব ধারণা ও কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার তাগিদ থেকে একটি পাঠচক্র থেকে এটি শুরু হয়। একটা পর্যায়ে শুধু কথা নয় কাজও করা দরকার এই চিন্তা আসার পর গ্রাম পর্যায়ে কাজের ইচ্ছাটাও জাগে।
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৮৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর। দিনটির তাৎপর্য বাংলাদেশের নারীমুক্তি সংগ্রামে অপরিসীম। এই দিনটি বেগম রোকেয়া দিবস হিশেবে পালিত হয়। এই দিনে বেগম রোকেয়ার মৃত্যু দিবস হলেও দিনটি পালিত হয় তাঁর জন্ম-মৃত্যু দিবস হিশেবে। দীর্ঘদিন রোকেয়া অপরিচিত ছিলেন কিন্তু নারী আন্দোলনের দাবির ফলে এক সময় তাঁকে নারীমুক্তির অগ্রদূত হিশেবে সমাজে স্বীকৃতি দেয়া হোল। তখন থেকেই দিনটি নারীমুক্তি আন্দোলনের ক্যালেন্ডারে গুরুত্বপূর্ণ তারিখ হয়ে উঠেছে। এই দিনটি এখন সরকারি এবং বেসরকারি সকল পর্যায়ে পালিত হয়।
এরই ফলস্বরূপ নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার আত্মপ্রকাশ - বাংলাদেশে নারীদের জন্যে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারীগ্রন্থ কেন্দ্র হিশেবে। তারিখ ৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সাল, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৩৯৬ সাল।
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় বইয়ের দুইটি বিভাগ আছে। একটি অংশে বসে পড়ার জন্যে বই, দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা নারীমুক্তির দর্শন, আন্দোলন ও নানা ধরণের গবেষণার ওপর বই। এই বিভাগকে রেফারেন্স কিংবা লাইব্রেরী বলা হয়। যদিও ঘরে বই নিয়ে যাবার ব্যবস্থা নেই। কেউ কোন বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফটোকপি করতে চাইলে অবশ্যই তা করতে পারেন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, নারী আন্দোলন কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী এবং গবেষকরা এই বিভাগের বই ব্যবহার করার জন্যে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় আসেন।
অন্য বিভাগটি হচ্ছে বই বিক্রির। বিক্রির বিভাগে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার নিজস্ব প্রকাশনা, প্রতিপক্ষ প্রকাশনা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের প্রকাশনা, লেখিকাদের বই বিক্রি হয়। এখানে যে কেউ তাঁর নিজস্ব প্রকাশনা বিক্রির জন্যে দিতে পারেন। তবে তা অবশ্যই নারী অধিকার এবং নারী মুক্তির স্বপক্ষে লেখা হতে হবে। পাক্ষিক চিন্তা পত্রিকা ও দেশী-বিদেশী পত্রিকাও বিক্রি হয়। এছাড়া পোস্টার, দিনলিপি, হস্তকাগজের নোটবই ইত্যাদি বিক্রি হয়।
আমরা নবপ্রাণ আন্দোলন খুব ভেবেচিন্তে সভাসমিতি ডেকে দশদিক বাছবিচার করে শুরু করি নি। এর আবির্ভাব যেন নিজের দরকারে আপন তাগিদে ঘটে গিয়েছে। একজনের বা গুটিকয়েকর ইচ্ছা এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করে নি, বড়োজোর জোগালির বেগার খেটেছে। কিন্তু সেই ইচ্ছাকে অসচেতনা বা স্বতঃস্ফুর্ত ইচ্ছা বলা ভুল হবে। নিজেদের ইচ্ছা নিজেদের পরিকল্পনা নিজেদরে চিন্তাভাবনা আগাগোড়া তৎপরই ছিল। কিন্তু তবু মনে হচ্ছিল এ যে শুধু নিজেদেরই ইচ্ছা নয়। এই সময়ের রপর সওয়ার হয়ে আছে আরেক ইচ্ছা। সেই ইচ্ছা শুধু আমাদের ব্যক্তিগত নয়। মানুষের বেড়ে ওঠার ইতিহাস এমন কিছু সন্ধিক্ষণ আসে যার মধ্য থেকে কিছু কাজ করার তাগিত উত্থিত হয় নইলে সামনের দিকে পা আর এগায় না। সেই তাগিদ থেকে এই ইচ্ছার জন্ম। সেই ইচ্ছা আমাদের তাড়া করেছে, চাবুক মেরেছে পেছন থেকে, তার আঘাত পড়েছে হাড়ে পিঠে স্নায়ুর ওপর। ইচ্চার সঙ্গে সেই ইচ্ছা একাকার হয়ে গিয়েছে।
সন তারিখ ধরে তাই নবপ্রাণ আন্দোলনের শুরু কবে থেকে তা বলা মুশকিল। তবে সংগঠিতভাবে চর্চার কাজ শুরু হয়েছে ১৯৯২ সালে থেকে। ঢাকা শহর এবং কুষ্টিয়াতে নিয়মিত সঙ্গীত চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া সারা দেশে নবপ্রাণ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সাধক গায়ক রয়েছেন।
পোশাক শিল্পে ১৯৭৫ সালের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে লক্ষণীয়ভাবে নারী শ্রমিকদের পদচারণা দেখা যায়। ৮০ র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটেছে। এদেশে রপ্তানি আয়ের ষাট থেকে সত্তরভাগ অর্থ আসে পোশাক শিল্প থেকে। যার মূল চালিকা শক্তি নারী শ্রমিক। শতকরা ৮০ ভাগ নারী শ্রমিক এই শিল্পের সাথে জড়িত। অথচ এদের উন্নতির জন্য মালিক পক্ষ বা সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। বাংলাদেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অস্তিত্ব সম্পর্কে দীর্ঘদিন চুপ করে থাকলেও এখন তারা আমাদের চোখের সামনে হাজির হয়েছে। এ দেশে শ্রমিক আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে কিন্তু নারী শ্রমিকদের প্রশ্নে ট্রেড ইউনিয়ন ও সার্বিক শ্রমিক আন্দোলনের ধারণা এখনও পরিস্কার নয়। এ কথা এখন স্পষ্ট যে সকল শ্রমিকদের একই রকম দাবী হলেও নারী শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট দাবীর প্রতি মনোযোগ না দিলে তারা বাদ পড়ে যান। অর্থাৎ শ্রমিকদের দাবী বললেই নারী শ্রমিকদের দাবী আপনাতেই ঠিক হয়ে যায় না। তাই পোশাক কারখানার শ্রমিক বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের মাঝে ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত ধারণা, ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা এবং শ্রমিকদের করণীয় বিষয়ে একত্রে কাজ করার জন্য "শ্রমবিকাশ কেন্দ্র" গঠন করা হয়।
ট্রেড ইউনিয়ন এবং উন্নয়ন শিক্ষা শাখাই "শ্রমবিকাশ কেন্দ্র" নামে পরিচিত। ইংরাজিতে আমরা বলি "Center for Labour Education and Development" । আমরা ১৯৮৬ সাল থেকেই শ্রমিকদের নিয়ে বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের নিয়ে Òশ্রমবিকাশ কেন্দ্র” এর কাজ শুরু করি। প্রথমে শ্রমিকেরা ট্রেড ইউনিয়ন করার আইনগত অধিকার এবং সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। আবার নারী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে ট্রেড ইউনিয়নের কাজের মধ্যে ছিল বৈষাদৃশ্য। তাই গবেষণা এবং শ্রমিকদের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরী করে বাংলাদেশের ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষেত্রে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরী করাই শ্রমবিকাশ কেন্দ্রের কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
ট্রেড ইউনিয়ন এবং উন্নয়ন শিক্ষা ছাড়াও শ্রমবিকাশ কেন্দ্র নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে শক্তিশালী প্রচার করে যা শ্রমজীবি মানুষের জীবন-জীবিকা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্পায়ন এবং ট্রেড ইউনিয়ন লিডারদের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে মধ্যস্ততার মাধ্যমে একটা ভাল পরিবেশ সৃষ্টি করা শ্রমবিকাশের কাজ। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ, কারখানা ব্যবস্থাপনা এবং শ্রমিকদের ন্যায়্য অধিকার নিশ্চিত করতে নীতি নির্ধারণী উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে শ্রমবিকাশ।
নদী ভাঙ্গন ও বন্যা প্লাবন, জীবিকার সংগ্রাম সম্পর্কে সকল খবর এই পাতায় পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে নারীর প্রশ্ন সমাজে বিভিন্ন ভাবে কিভাবে তোলা হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
নারীরা তাঁদের নিজেদের বিষয় ছাড়াও সমাজের অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। সেটা করেন উন্নয়ন, রাজনীতি, পুরুষতন্ত্র, সংস্কৃতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে।
নারী প্রসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামের খবরও এখানে থাকবে।
জিএমও অর্থাৎ বিকৃত বীজ বা ফসল বাংলাদেশের মতো প্রাণবৈচিত্রে সমৃদ্ধ দেশে প্রবর্তন একদমই উচিত নয়। সেটা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে করবার ঝুঁকিও প্রবল। একবার জৈবদূষণ ঘটা শুরু হলে তা পুরা প্রকৃতিকে দূষিত করে ফেলতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশকে এই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
বিকৃত ফসল বা জিএমও প্রবর্তন করতে চাইলে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান মানবার বাধ্যবাধকতা আছে। বাংলাদেশে বিটিবেগুন নিয়ে গবেষণা ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও মাঠপর্যায়ে কৃষকের জমিতে কোন জবাবদিহিতা এবং আন্তর্জাতিক বিধিবিধান না মেনে উৎপাদন করা হচ্ছে। বাজারে সেই বেগুন তোলা হচ্ছে, ভোক্তারা জানে না তারা বেগুন নামে যা কিনছে তা স্বাভাবিক বেগুন নয়, বিকৃত বীজের বেগুন। এর জন্য বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হয়ে চলেছে মারাত্মক। এই ধরণের ফসলের চাষের জন্যে যে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয় কৃষকের তা একদমই অজানা।
আসুন আমরা বিটিবেগুন প্রবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র রক্ষা করি।
এখানে এই বিকৃত বেগুন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে।
তামাক ব্যবহার ও তামাক চাষ বন্ধ করে খাদ্য উৎপাদনের জন্য উবিনীগ নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকদের নিয়ে দীর্ঘদি্ন ধরে কাজ করছে। এখানে তামাক চাষ ও ব্যবহার বন্ধ করে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং তামাক চাষের জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করে কিভাবে আমরা খাদ্য সার্ব্ভৌমত্ব অর্জন করতে পারি সে সম্পর্কে আমাদের লেখালিখি, গবেষণা ও কাজ সম্পর্কে জানা যাবে।
নয়াকৃষি আন্দোলনের সাথে যুক্ত কৃষকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করছেন। স্থানীয় বীজ রক্ষা করা, মিশ্র ফসলের আবাদ করা, দেশীয় মাছ, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর পালন করার মাধ্যমে মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে প্রানবৈচিত্রের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। ওষুধী গাছ এবং কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য গরীব মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ও খাদ্য যোগান দেয়।
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার সাথে যুক্ত নারী ও প্রাণবৈচিত্র্য নেটওয়ার্ক ২৮টি জেলায় প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন।
তাঁত ও তাঁতীদের নিয়ে উবিনীগের কাজ দীর্ঘদিনের। কৃষি ও গ্রাম বিকাশের ধারণার সঙ্গে ঘরোয়া শিল্প নিয়ে কাজ একদিকে সরাসরি আর্থ-সামাজিক প্রশ্ন মীমাংসার সঙ্গে যুক্ত, অন্যদিকে তা হাতের কাজ বা হস্তশিল্প বিকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এখানে তাঁত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর, তথ্য ও বিশ্লেষণ পাবেন।