ফকির লালন সাঁইজীর গৌরপূর্ণিমা উৎসব ১৪২৫ অনুষ্ঠিত হলো


কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ছেঁউড়িয়াতে, ২০ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পালিত হলো ফকির লালন সাঁইজীর গৌরপূর্ণিমা উৎসব ১৪২৫।

নবপ্রাণ আখড়াবাড়িতে এবারের গৌরপূর্ণিমা উৎসবে যে গানটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে সেটি হলো ‘এমন বয়সে নিমাই ঘর ছেড়ে ফকিরি নিলে, ধন্য মায়ের নিমাই ছেলে’...।

লালনের এই গুরুত্বপূর্ণ গানটি তেমন ভাবে চর্চায় ছিল না বলা যায়।

তিনদিনের উৎসবে নবপ্রাণ আখড়াবাড়িতে প্রতিদিন ভোর ৬ টায় লালন সাঁইজির গোষ্ঠ গান দিয়ে দিনের শুরু হয়েছে। এবং রাত ৮টা পর্যন্ত লালন সাঁইজির বিভিন্ন ধারার গান পরিবেশিত হয়েছে। বিশেষ করে পরিবেশিত হয়েছে লালন সাঁইজির গৌর গান- "এনেছে এক নবীন গোরা নতুন আইন নদীয়াতে", "গোল করো না ও নাগরী গোল করো না গো, দেখি দেখি ঠাওরে দেখি কেমন গৌরাঙ্গ", "দেখা দিয়ে ভবের শহর কোথায় গৌর লুকাইলে", "বুঝবি গৌর প্রেমের কালে আমার মত প্রাণ কাঁদিলে" প্রভৃতি।


নবপ্রাণ আন্দোলনের শিল্পীরা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে যে সব সাধুগুরু এসেছিলেন তারাও নবপ্রাণ আখড়াবাড়ির “জামতলার” মঞ্চে গান পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। দর্শকদের পছন্দের গান হওয়াতে তারাও সাথে সাথে গান গেয়েছেন।


লালন ফকিরের গৌরপূর্ণিমার এই উৎসবকে দোল পূর্ণিমা হিসেবে তুলে ধরা হয়। এই বিষয়ে কবি ফরহাদ মজহার তার ফেসবুক পাতায় এ ভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, “সেদিন ছিল শনিবার, ফাল্গুনি পূর্ণিমা, সেই সঙ্গে চন্দ্রগ্রহণ। তারিখ ঈসায়ী সাল অনুযায়ী ১৪৮৬ এবং বাংলা তারিখ ১৪০৭ শতকের ২৩ ফাল্গুন। চাঁদে গ্রহণ লাগার আগে নিমাই বা গৌর নদিয়ায় ‘অবতরণ’ করেন, কিম্বা তাঁর ‘আবির্ভাব’ ঘটে। ইনিই শ্রীচৈতন্য নামে আমাদের কাছে পরিচিত। যেহেতু গৌর ফাল্গুনি পূর্ণিমায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তাই ফাল্গুনি পূর্ণিমা বঙ্গে ‘গৌরপূর্ণিমা’ নামে পরিচিত।

farhad mazhar

চৈতন্য নদিয়ার ভাবচর্চার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফকিল লালন শাহ গৌরের জন্মদিনকে ভাবগত মর্যাদা দেবার জন্য তাঁর জীবদ্দশায় একটি সাধুসঙ্গ প্রবর্তন করেছিলেন। এটি এখন তাঁর মৃত্যর পর সাধারনের বিশাল উৎসবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশই জানেন না কেন এই উৎসব। লালন কেন চৈতন্যের ‘আবির্ভাব’-কে এতো গুরুত্বপূর্ণ গণ্য করলেন।

দ্বিতীয়ত আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই উৎসবকে ‘দোল’ উৎসব বলা। লালনকে হিন্দু প্রমাণ করা, তিনি জাতিতে কায়স্থ এবং তাঁর পদবি ‘কর’ বলে ভূয়া দাবি, ইত্যাদি এখনও বহাল আছে। ছেঁউড়িয়ার ফাল্গুনি পূর্ণিমার উৎসবকে ‘দোল’ উৎসব বলার মধ্যে প্রচ্ছন্ন অনুমান হচ্ছে লালন একটি ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবকে তাঁর নিজের উৎসব বলে প্রবর্তন করেছেন। অথচ কথাটা একদমই ভুল। সে কারণে গৌরপূর্ণিমার সাধুসঙ্গ ও উৎসবকে ‘দোল উৎসব’ হিশাবে প্রচার ঠিক নয়।

ফকির লালনের কাছে চৈতন্য নদিয়ার প্রথম ‘ফকির’। তিনি কী অর্থে এবং কেন চৈতন্যকে 'ফকিরি' ভাবের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ গণ্য করেছেন সেটা ভিন্ন আলোচনা এবং একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়। কিন্তু প্রাথমিক বিভ্রান্তিগুলো কাটিয়ে ওঠা দরকার। ছেঁউড়িয়ার উৎসব ‘দোল’ কিম্বা কোন ধর্ম সম্প্রদায়ের উৎসব হিশাবে লালন প্রবর্তন করেন নি।”

নবপ্রাণ আখড়াবাড়িতে শিক্ষার্থীদের কন্ঠে সারাক্ষণ ‘এমন বয়সে নিমাই ঘর ছেড়ে ফকিরি নিলে, ধন্য মায়ের নিমাই ছেলে’ এই গানটি চলছিল।

প্রতিবছর লালন সাঁইজির উৎসবকে কেন্দ্র করে নয়াকৃষি আন্দোলন বীজ মেলার আয়োজন করে থাকে। এবারের বীজ মেলায় একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় ২০ মার্চ, ২০১৯ তারিখে বিকেল তিনটায়। এই সভায় টাংগাইল, কুষ্টিয়া, এবং ঈশ্বরদী থেকে কৃষকরা এসেছিলেন। এবারের বীজ মেলায় যে বিষয়টি লক্ষণীয় ছিল সেটা "উৎসব কেন্দ্রিক ধান" এর প্রদশর্নী। এখনও বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ধরণের ধানের প্রচলন আমাদের দেশে রয়েছে।

প্রদর্শনীতে আরও গুরুত্ব পেয়েছিল ওষুধী গুনের ধান, ভিটামিন যুক্ত ধান, চিড়া মুড়ির ধান। বিভিন্ন উৎসবে ব্যবহার হয় সেই ধরণের ধান, পিঠার ধান, পায়েস ও পোলাও করার ধান।

মেলায় যারা এসেছিলেন তাদের ধানের বিষয়ে জানার খুব আগ্রহ ছিল। আবহাওয়া ভাল থাকায় দর্শক শ্রোতার ভিড় অনেক বেশি ছিল।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।