নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৮৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর। দিনটির তাৎপর্য বাংলাদেশের নারীমুক্তি সংগ্রামে অপরিসীম। এই দিনটি বেগম রোকেয়া দিবস হিশেবে পালিত হয়। এই দিনে বেগম রোকেয়ার মৃত্যু দিবস হলেও দিনটি পালিত হয় তাঁর জন্ম-মৃত্যু দিবস হিশেবে। দীর্ঘদিন রোকেয়া অপরিচিত ছিলেন কিন্তু নারী আন্দোলনের দাবির ফলে এক সময় তাঁকে নারীমুক্তির অগ্রদূত হিশেবে সমাজে স্বীকৃতি দেয়া হোল। তখন থেকেই দিনটি নারীমুক্তি আন্দোলনের ক্যালেন্ডারে গুরুত্বপূর্ণ তারিখ হয়ে উঠেছে। এই দিনটি এখন সরকারি এবং বেসরকারি সকল পর্যায়ে পালিত হয়।
এরই ফলস্বরূপ নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার আত্মপ্রকাশ - বাংলাদেশে নারীদের জন্যে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারীগ্রন্থ কেন্দ্র হিশেবে। তারিখ ৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সাল, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৩৯৬ সাল।
সোমবারে মেয়েদের আড্ডা প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে এই আড্ডা করা হয় বলে সেই দিনের নামেই আড্ডা এখন বিখ্যাত হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে, এখনও চলছে সোমবারে মেয়েদের আড্ডা। এখানে মহিলারা নিজেদের মতো করে প্রাণ খুলে কথা বলেন। ধরাবাঁধা কোন নিয়ম সেখানে নাই। ঘরের সাধারণ কথা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তাঁরা আলোচনা করেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপরও আলোচনা হয় এবং আলোচনার মধ্য থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মহিলারা এতে অংশ নেয়। এখানে বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। স্কুল ছাত্রী থেকে শুরু করে বৃদ্ধারাও অংশ নেয়। তবে বেশির ভাগ মহিলারা আসেন যারা সমাজে গৃহিণী হিশেবে পরিচিত। আড্ডায় তাঁদের পরিচয় গৃহব্যবস্থাপক হিশেবে।
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা নিয়মিত আলোচনা সভা, সেমিনারের আয়োজন করে। তার কোন নির্দিষ্ট দিন নেই। যেকোন দিন হতে পারে। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা নিজে যেমন আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে তেমনি অন্যরা করার জন্যে ভাড়া নিতে পারেন। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় এখন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা বছরের কয়েকটি দিনকে বিশেষভাবে স্মরণ করে এবং এই উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। যেমন ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ১৭ ডিসেম্বর মহিলা মুক্তিযোদ্ধা দিবস, ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস, ২৬ জুন জাহানারা ইমাম মৃত্যু বার্ষিকী। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার অন্যতম একটি দিক হচ্ছে সমকালীন আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় এবং নীতিগতভাবে মেলে সেই বিষয় নিয়েই কথা বলে। নারী নিষয়ক ও সমাজের যে কোন সমস্যা নিয়ে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা শুরু থেকেই আন্দোলন করে আসছে এবং এখনও করছে।
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা জাতীয় পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে বই মেলা হয় সেখানে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায় বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় মেলা ও স্বাংসকৃতিক অনুষ্ঠান করে আচ্ছেন।
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় বইয়ের দুইটি বিভাগ আছে। একটি অংশে বসে পড়ার জন্যে বই, দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা নারীমুক্তির দর্শন, আন্দোলন ও নানা ধরণের গবেষণার ওপর বই। এই বিভাগকে রেফারেন্স কিংবা লাইব্রেরী বলা হয়। যদিও ঘরে বই নিয়ে যাবার ব্যবস্থা নেই। কেউ কোন বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফটোকপি করতে চাইলে অবশ্যই তা করতে পারেন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, নারী আন্দোলন কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী এবং গবেষকরা এই বিভাগের বই ব্যবহার করার জন্যে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় আসেন।
অন্য বিভাগটি হচ্ছে বই বিক্রির। বিক্রির বিভাগে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার নিজস্ব প্রকাশনা, প্রতিপক্ষ প্রকাশনা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের প্রকাশনা, লেখিকাদের বই বিক্রি হয়। এখানে যে কেউ তাঁর নিজস্ব প্রকাশনা বিক্রির জন্যে দিতে পারেন। তবে তা অবশ্যই নারী অধিকার এবং নারী মুক্তির স্বপক্ষে লেখা হতে হবে। পাক্ষিক চিন্তা পত্রিকা ও দেশী-বিদেশী পত্রিকাও বিক্রি হয়। এছাড়া পোস্টার, দিনলিপি, হস্তকাগজের নোটবই ইত্যাদি বিক্রি হয়।