পরিচ্ছন্ন ও ভেজাল মুক্ত নিরাপদ ইফতারী দেওয়ার আহবান


“রমজান মাসের রকমারী ইফতার” নিরাপদ খাদ্যের আলোকে আলোচনা এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক (বিএফএসএন) এর আয়োজনে ২০ জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০০ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (নীচতলা) সেগুন বাগিচা, ঢাকায়। এই সভায় সভাপ্রধান ছিলেন জনাব গোলাম রহমান, সভাপতি, কনজুমারস্ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

রমজান মাসে রকমারী ইফতার বিক্রি হতে দেখা যায়। শহরগুলোতে ঘরের তৈরী ইফতারের থেকে বাজারের খাবার খেতে ভোক্তারা পছন্দ করছে বেশী। পত্রিকায় ইফতারের রকমারী খাদ্যের ছবি দেখা যায় কিন্তু সেগুলি কতটুকু নিরাপদ তার উপর লেখা পত্রিকায় তেমন দেখা যায় না। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন হয়েছে। বাংলাদেশের জেলা উপজেলায় খাদ্য নিরাপদ করার জন্য ভোক্তাদের সচেতন করতে হবে। ভোক্তারা যে খাদ্য কিনছে তা যেন নিরাপদ হয়। সরকারী আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে- বলেন ফরিদা আখতার, সভাপতি, বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক (বিএফএসএন) ও নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ।

ঢাকায় একটি বড় আকর্ষণ থাকে ইফতারিতে হালিম খাওয়া। দেখা গেছে বেশীরভাগ জায়গায় অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পরিবেশন করা হচ্ছে হালিম। জিলাপীতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাপড়ের ব্যবহার করা রং। যা কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কলা পাকানোর জন্য কেমিকাল ব্যবহার হচ্ছে এবং সরাসরি কলাতে বিষ প্রয়োগ করা হয়। মাঝে মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট হয়। সরকারিভাবে কৃষি অধিদপ্ত যদি ফলে বিষ প্রয়োগ না করার জন্য দায়িত্ব নেয় তাহলে যে কোন ফলে বিষ প্রয়োগ কমে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি, বলেন, এড. হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক, কনজুমারস্ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

আবু সাদেক পাটোয়ারি, হালাল ডেক্স অফিসার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তিনি বলেন, হালাল খাদ্য খেতে হবে এবং যে সমস্ত খাদ্য হালাল নয় তা পরিত্যাগ করতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও আমরা নিরাপদ খাদ্য খেতে পারবো। হালাল মানে স্বাস্থ্য সম্মত। হালার মানে নিরাপদ। বাংলাদেশে হালাল আইনের নীতিমালা করা হয়েছে। এই নীতিমালা অনুসরণ করে আমরা বিভিন্ন দেশে গরু এবং মুরগীর মাংস সরবরাহ করতে পারবো যা বাংলাদেশের তিনটি জাতীয় বাজেটের সমান হবে।


ইফতার মিটিং


রান্না খাবার দুই ঘন্টার বেশী স্বভাবিক তাপমাত্রার বেশী বাহিরে রাখা যাবে না। কিন্তু আমরা দেখছি দুপুরের পর থেকেই রাস্তার দুইধারে রকমারী ইফতারি বিক্রি হচ্ছে ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। স্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থ এ রকম খাবার পরিত্যাগ করা দরকার। আমরা জানি না এ খাবার কখন রান্না হয়েছে। ইফতারিতে ব্যবহৃত তেল এবং অন্যান্য উপকরণ নিরাপদ হওয়াও বাঞ্ছনীয়, বলেন- ড. এম. এ. সোবহান, সভাপতি, বীজ বিস্তার ফাউন্ডেশন।

আলোচনা সভায় মোহাম্মদপুর ও কলা বাগানের রাস্তার ধারে ইফতারী বিক্রির কিছু ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই ভিডিও চিত্রে খোলা অবস্থায় ইফতার বিক্রির চিত্র দেখা যায়।

আব্দুল জব্বার (নয়াকৃষির গবেষক) আরও একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করে বলেন, বাংলাদেশে ৯টি দেশী বেগুন জেনিটিক মডিফিকেশন করা হয়েছে (বিটি বেগুন)। কারওয়ান বাজারে দেখা যায় উত্তরা বেগুনে যে জেনিটিক মডিফিকেশন (বিটি) করা হয়েছে তেমনই কিছু বেগুন বিক্রি হচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে না এটা বিটি বেগুন কি না। তাই সভা থেকে দাবী করা হয় অতি সত্তর বিটি বেগুনে লেবেলিং করা হোক।

ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমিন, প্রকল্প পরিচালক, কৃষিবিদ সেফ ফুডস, বলেন আমরা প্রতিদিন ইফতারিতে বেগুনি খাচ্ছি। এই বেগুন হাইব্রিড কেগুন। এই বেগুন গাছে প্রতিদিন ৫ রকমের বিষ প্রয়োগ করা হয়। ইফতারিতে যে মুড়ি থাওয়া হয় সে মুড়িও নিরাপদ নয়। ব্রয়লার মুরগি অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। আমরা এই মাংস খাচ্ছি। এক সময় আমাদের শরীরেও এন্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না।

ড. জাহেদুল ইসলাম, ব্রিটিস কাউন্সিল, বলেন, যারা ইফতার বিক্রি করছে তারা নিজের মুনাফার জন্য জেনে বুঝে অনিরাপদ খাদ্য বিক্রি করছে। রাষ্ট্রেরও সীমাবদ্ধতা আছে। সরকারী জনবলের অভাবে এর প্রতিকার করা সম্ভব হচ্ছে না।

মহিদুল হক খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বি সেফ ফাউনডেশান, বলেন, বাংলাদেশে সরকারীভাবে শুধুমাত্র ফরমালিন আমদানী নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু এই ফরমালিন বিভিন্ন নামে প্রচুর আমদানি হচ্ছে। সরকার এদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না।

জনাব গোলাম রহমান, সভাপতি, কনজুমারস্ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেন, ঢাকার রাস্তার ধারে যে ইফতারি বিক্রি হচ্ছে তা নিরাপদ নয়, তা সভায় উপস্থাপিত দুইটি ভিডিও চিত্রে প্রতিফলিত হলো। কিন্তু আমরা যারা ভোক্তা, রোজাদার আমাদেরও সচেতন হতে হবে। নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে সরকারের নজরদারী বাড়াতে হবে। ভোক্তাবান্ধব স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য আইন যদি পরিপূণভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে ভোক্তাদের দূর্ভোগ কমবে।

সভাটি পরিচালনা করেন জাহাংগীর আলম জনি, সদস্য, বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক (বিএফএসএন)।

মতবিনিময় সভার দাবী:

১. পরিচ্ছন্ন ও ভেজাল মুক্ত নিরাপদ ইফতারী চাই।
২. ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩. নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. বিভিন্ন নামে ফরমালিন আমদানী বন্ধ করতে হবে।
৫. বিটি বেগুন বাজারজাত করতে হলে অবশ্যই লেবেলিং করতে হবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।