আমে লোভনীয় রঙ মানেই কেমিক্যালের কারসাজি


লোভনীয় রঙ না দেখলে ক্রেতারা পছন্দ করেন না। এতে বেচাকেনাও কম হয়। তাই ক্রেতা আকৃষ্ট করতেই আমে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজধানীর আম ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে গতকাল কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বাদামতলীর একজন আম ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজারে সুন্দর রঙের আমের চাহিদা বেশি। কেমিক্যাল নিয়ে যত চিৎকার করা হোক কোনো লাভ হবে না। বাগান থেকে পরিপক্ব আম নিয়ে এলেও তা লোভনীয় রঙ না হওয়ায় ক্রেতারা পছন্দ করে না। ফলে বাধ্য হয়েই আমে কেমিক্যাল মেশাতে হচ্ছে।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাহারি আমের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। আমগুলোর রঙ অত্যন্ত লোভনীয়। দেখেই জিভে পানি এসে যায়। নানান জাত ও সাইজের আম।

কাওরান বাজারের এক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আম পাকানোর জন্য কার্বাইড মেশানো হয়। অপরিপক্ব আমে কার্বাইড না মেশালে পাকার আগেই পচন ধরে। যেখান থেকে আম আসে সেখানেই মেশানো হয়। গাছ থেকে আম পাড়ার পরপরই তারা কেমিক্যাল মেশান। এক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই বলেও দাবি করেন।

ফলে কেমিক্যাল মেশানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা: আতিকুর বলেন, কার্বাইড, ফরমালিনসহ যেকোনো কেমিক্যাল ক্ষতিকর। কেমিক্যালযুক্ত ফল খাওয়ার কারণে দেহের এমন কোনো অঙ্গ নেই যেটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি। মানুষ জটিল সব রোগে আক্রান্ত হন। এসব কেমিক্যালযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে এখন যুবক বয়সেই মানুষ কিডনি ও লিভারের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক সময় ক্যান্সারও হয়। বর্তমানে কিডনি বিকল হয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটছে বলেও জানান তিনি।

যেভাবে চিনবেন কেমিকলমুক্ত আম : ফল গবেষকদের মতে কেমিকেল মুক্ত আম চেনার উপায়গুলো হচ্ছেÑ আম গাছে থাকা অবস্থায় বা গাছপাকা আম হলে লক্ষ করে দেখবেন যে আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর। কারবাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা আমগুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফেলে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। গাছপাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই। গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবে। গোড়ার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কারবাইড দেয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়ে যায়, কখনো কখনো বেশি দেয়া হলে সাদাটেও হয়। হিমসাগর ছাড়াও আরো নানান জাতের আম আছে যা পাকলেও সবুজ থাকে, কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি হয়। গাছপাকা হলে এসব আমের ত্বকে বিচ্ছিরি দাগ পড়ে। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর। আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে ঘ্রাণ নিয়ে দেখুন। গাছপাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেয়া আমে কোনো গন্ধ থাকবে না।

লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে নয়াদিগন্ত ২৯ মে ২০১৭, থেকে: আমে লোভনীয় রঙ মানেই কেমিক্যালের কারসাজি


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।