অসংক্রামক রোগ (Non Communicable Disease (NCD) নিয়ে আলোচনা


সোমবারের মেয়েদের আড্ডায় এক দিন:

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট চলছিল ৩ দিন ধরে। আড্ডার সদস্যরা চিন্তিত সোমবারে আড্ডায় কিভাবে যাবে? দুপুরে জানা গেল সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যহারের ঘোষণা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরাও তাদের বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি তুলে নিয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সোমবার। আড্ডায় যেতে আর বাধা নাই। তড়িঘড়ি করে তৈরী হয়ে আড্ডার সদস্যরা প্রায় সবাই উপস্থিত। আড্ডায় ৩৫ থেকে ৪০ জন নারী সদস্য হাজির। কারণ আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ কোরবানী ঈদ। ঈদের আগে আর্থাৎ ২১শে সেপ্টেম্বর আরও একটা সোমবার পাওয়া যাবে। কিন্তু আড্ডা কতটুকু জমবে বুঝা যাচ্ছে না। আবার ঈদের পরের সোমবার, একই কথা। ফলে ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ কোন ভাবেই আড্ডায় অংশগ্রহণ বাদ দেওয়া যাবে না।

স্বাভাবিক ভাবে আড্ডায় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে ‘সম-সাময়িক ঘটনা’। তাই এবারেও আলোচনার বিষয় ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট এবং কোরবানী ঈদ প্রসঙ্গে। ভ্যাট যেহেতু প্রত্যাহার হয়েছে, প্রসঙ্গটি তেমন আলোচিত হলো না। শুধু ভ্যাট কিভাবে নির্ধারণ করা যায় সেই প্রসঙ্গ ছাড়া। এর মধ্যে ২/১ জন নিজের মত করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেন। যেমন-ভ্যাট পণ্যের উপর আদায় হয়, তবে শিক্ষার উপর কেন? পণ্যের তৈরী খরচ থেকে বিক্রয় খরচের যে দূরত্ব আর্থাৎ খরচ যদি ২০ টাকা হয় বিক্রয় যদি ৩০ টাকা হয় তবে ২০ থেকে ৩০ বাদ দিয়ে ১০ টাকার উপর ভ্যাট নির্ধারণ হবে। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের থেকে কিভাবে প্রযোজ্য হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। এরই মধ্যে প্রসঙ্গ তোলা হলো অসংক্রামক রোগ (Non Communicable Disease (NCD) নিয়ে। আমরা খাবার খাওয়ার সিদ্ধান্ত কিভাবে নেই। মাথায় রাখতে হবে NCD কে।

এবারে NCD ও খাদ্য প্রসঙ্গ:

প্রথমে, কয়েকটি অসংক্রামক রোগের তালিকা করা হলো। যেমন-ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্ত চাপ, ইউরিক এসিড, গ্যাসট্রিক, কিডনি, হৃদরোগ, ক্যান্সার, হাপানী ও আর্থরাইটিস্। আলোচনায় এ সব রোগের কথাই বেশী হলো।

এখন খাবারের তালিকায় কেমন খাদ্য থাকা দরকার যা এ সব রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করবে বা রোগ প্রতিরোধ করবে। সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলো। কিন্তু মজার বিষয় হলো, যখন খাদ্য তালিকা করা হচ্ছে তখন কি খাদ্য খাওয়া যাবে না সেই তালিকা করতে বা জানতে তারা বেশী আগ্রহী। আর কি খাদ্য খাওয়া যাবে সেটা আলোচনায় আসছে না। আলোচনাকে ঘুড়িয়ে এনে রোগ ধরে যে তালিকা হলো-

ডায়াবেটিক রোগের জন্য: তিতা করলা, লাল চাল, লাল আটা, জাম, জাম্বুড়া।

উচ্চ রক্ত চাপ: ছোট মাছ, সবজি, কাঁচা রসুন, ছোট মুরগি।

ইউরিক এসিড: বেগুন, চাল কুমড়া, পেঁপে, লাউ।

গ্যাসট্রিক: সবজির মধ্যে পেঁপে, লাউ, পটল, সীম, মাছ, মুরগি, মুগ ডাল।

কিডনি: মাছ ও মুরগি পরিমাণে কম, সবজি, ডিমের সাদা অংশ। মূল কথা পরিমাণে কম খাবার খেতে হবে।

বাজরে এখন সব খাবার এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজি কিনতে গেলে ৬০-৮০, লাল চাল ৭০-৮০ টাকা, লাল আটা ৫৫-৬০ টাকা, দেশী মুরগি ৩০০-৩৫০ (মাঝারী), মাছ ৫০০-৬০০ টাকা। নিরাপদ, তাজা দেখে যদি কিনতে হয় তবে দাম দিতে হবে বেশী। বাজার প্রতিদিনের ব্যাপার। তাই দামের দিক থেকে যেটা কম সেটা খেতে হয়। তাহলে খাদ্য তালিকায় কোন খাবার কোথা থেকে নেয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে কেমন করে? বেশীর ভাগ উত্তর আসে এ ব্যাপারে গুরুত্ব কম পায়। নিরাপদ খাবার এটাই খওয়া উচিত সেটা মাথায় থাকে না। এসব যেহেতু কাছাকাছি বাজরে সরবরাহ নাই কোন একটা বিশেষ স্থান থেকে নিতে হয় তাই স্বাভাবিক ভাবে কোন চিন্তা না করে কাছের বাজার থেকে বাজার করা হয়। তবে বাজার করার সময় পুষ্টিগুণাগুণের কথা সব সময় মাথায় থাকে। একই সাথে বাজেটও।

তাই বাজার করা বা করানোর সময় যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য পায় তা হলো:

• পরিবারের পছন্দ ও কিছুটা নিজের পছন্দ

• দাম ও বাজেট

• পুষ্টিগুণ

• টাটকা ও পরিষ্কার খাবার

• সাশ্রয়

এখানে নিরাপদ কিনা তা ধরা হয় পরিষ্কার ও দেখতে টাটকা মনে হলে। পরিবারের যদি কারো প্রয়োজনে বিশেষ কোন খাবার প্রয়োজন হলে তা প্রতি দিনের মেনুর সাথে সেই বিশেষ খাবার যুক্ত দেয়া হয়। আড্ডার সদস্যরা স্বাস্থ্য বিষয় আলোচনা, পত্রিকায় লেখা এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিন থেকে নানান টিপস শুনে থাকে। বাস্তবে তা চর্চা কারার কথা চিন্তা করে। এমন একটা উদাহরণ জানা গেল, যেমন-সবজি যদি ভিনিগার দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয় তবে এতে যতরকম কীটনাশক ব্যবহার হোক না কেন সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে প্রতি দিনের খাবার কেনার বাজেটে ও বিষ মুক্ত করার জন্য ভিনিগার ব্যবহার সম্ভব, না কি প্রতিদিন রান্নার সময় মনে করে সব কিছু গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা সম্ভব?

মূল কথা যা বোঝা গেল:

১. কোন বিশেষ রোগের জন্য কোন বিশেষ খাবার খাওয়া যাবে তার চেয়ে বেশি জানে কোন খাবার খাওয়া যাবে না।

২. কোন বিশেষ রোগের জন্য বিশেষ খাবার বলতে যেটা ওষুধী সেটা আগে চিন্তা করতে হয়।

৩. নিরাপদ খাবার খেতে চায় কিন্তু নির্দিষ্ট স্থান থেকে কিনতে হয় বলে কাছের বাজার থেকে কিনতে হয়।

৪. পুষ্টির কথা চিন্তা করে খাদ্য তালিকা তৈরী হয় কিন্তু সেই খাদ্যে পুষ্টিগুণ কতটুকু থাকে তা জানে না।

৫. দৈনিক খাবার নির্দিষ্ট বাজেট এর উপর নির্ভরশীল

৬. সদস্যরা নানান রকম টিপস্ জানতে চায়। বাস্তবে ব্যবহার বা চর্চা করতে পারে না।

আড্ডার সদস্যরা সবার থেকে মজা করে জানতে চাইলো তা হলো বিরানী, রোষ্ট কিসে খাওয়া যাবে। যেহেতু আমরা আলোচনা করছি কোন খাবার খাবো। এটাওতো অনেক মজার খাবার।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।