ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ: সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুযোগ গরিব মানুষের হতে হবে


স্বাস্থ্য সেবা যাদের প্রয়োজন তাঁরা সবাই সমানভাবে পান না। ধনী-গরিবের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল অসমতা ভীষণ অন্যায়ভাবে বিরাজ করছে। গরিব হলে এবং স্বাস্থ্য সেবা “কেনার” সামর্থ না থাকলে তাকে মরতে হয় আর না হলে আজীবন ভুগতে হয়।স্বাস্থ্য সেবা যেন অন্য সব পণ্যের মতোই কেনা-বেচার ব্যাপার।অর্থ না থাকলে পাওয়া যাবে না।অথচ এর সাথে মানুষের বাঁচা-মরা, রোগ পরবর্তী জীবন যাপনের সম্পর্ক রয়েছে। কেউ সঠিক চিকিৎসা না পেলে আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে, হয়ে যেতে পারে অন্যের বোঝা।

আমাদের দেশে সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রাথমিক অর্থাৎ একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ আছে।কোথাও বলা নেই যে এই সেবা গরিবদের জন্যে নয়।সরকারী স্বাস্থ্য সেবা বিনা মূল্যে পাওয়ার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা Bangladesh National Health Accounts (BNHA, 2010) অনুযায়ী যে কোন পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সময় ৬৪% খরচই ব্যবহারকারী নিজেদেরকেই করতে হয়। ইংরেজীতে এই খরচকে Out of Pocket (OOP) হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আমাদের গরিব মানুষের পকেট খুব ভারী নয়,অনেকের পকেটও নেই। তাদের এই খরচ আসে হাঁস-মুরগী,ডিম, বা বড় ধরণের খরচ হলে গরু-ছাগল বিক্রি করে। তাই এই খরচকে বলা যেতে পারে সম্পদ-হারানো খরচ, বা গাইটের টাকা। এর ফলে তাকে আরো গরিব হয়ে যেতে হয়। যে টাকা দিয়ে সে পরিবার ছেলে মেয়েদের শিক্ষার জন্য খরচ করতে পারতো, কিংবা অন্য দেনা শোধ করতে পারতো সেখানে তাকে চিকিৎসার জন্যে ব্যয় করতে হয়। কখনো এই চিকিৎসার জন্যে নতুন করে ধার-দেনাও করতে হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে্র স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ২০০৬-২০০৭ সালের একটি জরীপে দেখা গেছে স্বাস্থ্য সেবা নিতে গেলে প্রধান খরচ(৬৪%) জনগণই বহন করে, ২৬% সরকার করে এবং বাকী ছিটে ফোঁটা বহন করে এনজিও, প্রাইভেট সেক্টর, ইন্সিউরেন্স কোম্পানী ইত্যাদী (মোঃ আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়)।আসাদুল ইসলাম এই হিসাবটি টাকার অংকেও দেখিয়েছেন। ২০০৬-৭ সালে মোট স্বাস্থ্য সেবায় খরচ হয়েছে ১৬০,৮৯৯ মিলিয়ন টাকা, তার মধ্যে জনগণ নিজের গাইটের টাকা খরচ করেছেন ১০৩,৪৫৯ মিলিয়ন টাকা (৬৪%), সরকার ৪১,৩১৮ মিলিয়ন টাকা (২৬%)। সরকারের পক্ষ থেকে জনপ্রতি স্বাস্থ্য সেবার খরচ পড়ছে মাত্র ১৬ মার্কিন ডলার (১২৮০ টাকা)। যা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে অনেক কম।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর হিশাবে জনপ্রতি ২৪ মার্কিন ডলার (১৯২০ টাকা) হওয়া দরকার।

এদিকে স্বাস্থ্য খাতে বছরে বছরে বাজেট বরাদ্দ কমছে।মূল বাজেটের আকার যত বাড়ছে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ তত কমছে। আবার যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রয়োজনের সঙ্গে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। ২০১২-১৩ সালের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৪.৮৬ শতাংশ। কিন্তু এবারের প্রস্তাবিত বাজেট হচ্ছে ৯,৪৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ৪.৩ শতাংশ। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ আগের তুলনায় কমেছে। এবার বরাদ্দ ৩,৬০২ কোটি, যা আগের বছরে ছিল ৩,৮২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাড়ানোর প্রয়োজন থাকলেও কমানো হয়েছে। অন্যদিকে অনুন্নয়ন খাতে আগের বছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৫,৫০৮ কোটি থেকে ৫,৮৬৮ কোটি। অর্থাৎ বরাদ্দের মূল অংশটি দেয়া হয়েছে বেতন-ভাতা ইত্যাদিতে; অথচ স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানোর জন্য সুযোগ কমিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার খরচ কমাবার সুযোগ কোথায়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৫ সালে ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ বা সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা সাধারণ মানুষের জন্য সহনশীল খরচে রোগ প্রতিরোধ,চিকিৎসা, পুণর্বাসন ইত্যাদী সেবা পাওয়া নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।এর জন্যে দরকার সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা, যেন ধনী ও গরিবের খরচের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা যায়। এরই সাথে মিল রেখে সরকার ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ সংক্রান্ত নীতি গ্রহণ করেছে।মোঃ আসাদুল ইসলাম (মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়), এর একটি উপস্থাপনা থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অর্থায়নের একটি ধারণা পাওয়া যায়। এতে জনগণের গাইটের পয়সা কমিয়ে ৩২% করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সরকারের অংশ ২৬% থেকে বাড়িয়ে ৩০% করা হয়েছে। বাকী অংশ সামাজিক নিরাপত্তা স্কীমের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য সেবায় অর্থায়নের জন্য ২০১২ থেকে ২০৩২ পর্যন্ত কৌশল গ্রহণ করেছে। এর আওতায় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমতা অর্জন করা, জরুরী সেবা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা, দারিদ্র বিমোচন করাসহ জনগণের নিজের গাইটের টাকা খরচের পরিমান কমিয়ে মান সম্মত সেবা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

জনগণের ওপর থেকে খরচের বোঝা কমাতে হলে শুধু সরকারের দিক থেকে বরাদ্দ বাড়ালে হচ্ছে না। এর জন্যে দরকার সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সরকার এই কর্মসুচির নাম দিয়েছে Social health protection Scheme । যারা দরিদ্র সীমার নীচে আছেন, (প্রায় ৪ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ), তাদের জন্য একটি ব্যবস্থা এবং যাদের একটু সামর্থ আছে, এবং তাঁরা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছেন, (১ কোটি, ৮৮ লক্ষ মানুষ) এবং যারা অ-নির্ধারিত কাজে নিয়োজিত আছেন (প্রায় ৮ কোটি ৫৭ লক্ষ মানুষ), তাদের খরচের ওপর ভর্তুকী দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর শুধু অসুস্থতার কারণে প্রায় ৫৭ লক্ষ মানুষ দারিদ্রতার শিকার হচ্ছে। অথচ সরকারী স্বাস্থ্য সেবা বিনামূল্যে পাবার কথা, কিন্তু সরকারী হাসপাতালে ইউজার ফি-এর প্রচলন, চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, প্রাইভেট হাসপাতালের দালালের প্রকোপ, ইত্যাদী কারণে সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে সাধারণ জনগণ বিশেষ করে গরিব মানুষ, যাদের সুস্থ্য থাকার ওপরে পুরো পরিবারের বেঁচা থাকা নির্ভর করে, তাঁরা বঞ্চিত হন। Bangladesh Service Delivery Survey, 2003 এর প্রতিবেদনে দেখা যায় ৮০% স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণকারী পয়সার বিনিময়ে সেবা পেয়েছেন, এবং ২০% সরাসরি সেবা প্রদানকারীকেই দিয়েছেন (ILO/KFW Study Team 2008) । গরিব বা নিম্নবিত্তরা যখন অসুখ থেকে সেরে ওঠার জন্য নিজের জমানো টাকা খরচ করতে বাধ্য হন কিংবা ঘরের মুল্যবান সম্পদ গরু-ছাগল বিক্রি করে দিতে হয় তখন তা সরাসরি তার অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটায়।সেটা দিয়ে খুব কম সময়ই পুর্ণ চিকিৎসা হয়, আসলে তারা শুধু রোগের উপসর্গ দূর করে দ্রুত নিজেকে কাজের উপযোগী করে তুলতে চান।তাঁরা কখনোই মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন না টাকার অভাবে। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায়ও বাংলাদেশে ধনী-গরিবের ব্যবধান বৃদ্ধির পেছনে স্বাস্থ্য ব্যয় অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে (World Bank, 2005) ।গরিব মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য Essential Service Package (ESP) বা জরুরী সেবার ৬০-৬৫% প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার জন্যে (অর্থাৎ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে) সরকারী ব্যয় নির্ধারণ করা হয়।যেসব এলাকা খুব বেশী দরিদ্রপীড়িত সেখানে ব্যয় বরাদ্দ বাড়াবার চিন্তাভাবনা করা হয়। কিন্তু এতো পরিকল্পনা উপেক্ষা করে ২০০৩ সালের বাংলাদেশ জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যয় সংক্রান্ত জরীপে দেখা গেছে যে ঢাকা বিভাগে জন প্রতি ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে ১৩৩৭ টাকা, আর বরিশাল বিভাগে হয়েছে মাত্র ৪৪৯ টাকা, অর্থাৎ ঢাকা বিভাগে ৩ গুন বেশী বরাদ্দ হয়েছে (BNHA, 2003) । যদিও পরবর্তীকালে দরিদ্র এলাকার বরাদ্দ গড়ে ৩১% বাড়ানো হয়েছে।আস লে প রিকল্পনা নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

সরকারী নীতিতে গরিবের স্বাস্থ্য সেবা বাড়াবার কথা থাকলেও ধনীদের জন্যেই ২৭% সরকারী স্বাস্থ্য সেবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আর দরিদ্রদের জন্যে দেয়া হয়েছে মাত্র ২১%।সংখ্যার দিক থেকে গরিবরাই সংখ্যাগরিষ্ট। সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় ধনীরা সুবিধা পেয়েছে ১৫.৪% আর দরিদ্র মানুষ পেয়েছে মাত্র ৮.২%। এতে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে সংখ্যা গরিষ্ট গরিব মানুষের জন্যে স্বাস্থ্য সেবার জন্যে সক্রিয় উদ্যোগ না নিলে তারা তাদের অধিকার থেকে আরও বঞ্চিত থেকে যাবে (Bangladesh Health Watch Report 2011: Moving towards Universal Health Care) । শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দৈন্য দশা, সাধারণ মানুষের প্রতি চিকিৎসকদের আচরণ, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততা আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। এমনি গেলে চিকিৎসা নেই, কিন্তু টেবিলের তলা দিয়ে টাকা ধরিয়ে দিলে চিকিৎসা পাওয়া যায়, এমন অভিজ্ঞতাও উঠে এসেছে গবেষণায়।তিক্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালের নাম দিয়েছে “শেষ-পিতাল”।সহজ কথায় এখানে গেলে মরা ছাড়া রক্ষা নাই। (Reality Check Bangladesh 2011: Listening to Poor People’s Realities about Primary Healthcare – Year 5, Sida)

ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ (সংক্ষেপে UHC) ২০১৫ সালের পর থেকে স্বাস্থ্য সেবার মুল মন্ত্র হয়ে যাবার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিকারের পক্ষের আন্দোলনকারীরা যেমন পিপলস হেলথ এসেমব্লী (PHA) কিছু সতর্কতার কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষ থেকেও আমরা সে বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তারা বলছেন ইউএইচসি সাতটি পাপ থেকে মুক্ত থাকা ও সাতটি পুণ্য করতে পারলেই তাঁরা জনগণের আকাংখ্যা পুরণ করতে পারবেন।এগুলো হচ্ছেঃ

১। আলমা আটার ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্য শুধু মাত্র অসুস্থতা নিয়ে নয় বরং সার্বিক সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের সাথে জড়িত। ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ যদি শুধু স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করার জন্যে মনোযোগ দেয় তাহলে অন্যান্য সামাজিক নিয়ামক যেমন পুষ্টি, পানি, শিক্ষা, পয়ঃনিস্কাষণ ইত্যাদী সুবিধা দেয়ার বিষয়টি গৌন হয়ে যেতে পারে। অথচ এগুলো সুস্থ্য থাকার জন্যে একান্তভাবে জরুরী। সরকারের এই সকল সেবা নিশ্চিত করাও সমানভাবে কর্তব্য। ভয় হয় যে আউট অব পকেটের টাকা কমাবার কথা বলে রোগ প্রতিরোধের সামাজিক সেবাই উপেক্ষিত হয়ে যাবে।

২। ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ অর্জন করতে গিয়ে যে অর্থের প্রয়োজন তার যোগান কি ইন্সুরেন্স কোম্পানী দেবে নাকি সরকারের কর ব্যবস্থার অধীনে এনে জনগনের খরচের বোঝা কমানো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।ইন্সুরেন্স-এর মাধ্যমে হলে প্রথমত বেসরকারীকরণ বৃদ্ধি পাবে এবং যারা বেশী ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম দিতে পারবে তারাই বেশী সুবিধা পাবে। গরিব আগের মতোই বঞ্চিত থাকবে।কাজেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিশেবে স্বাস্থ্য খাতে গরিবের গাইটের পয়সা কমাতে হলে করের আওতায় এনে স্বাস্থ্য সেবা খাতের অর্থ বাড়াতে হবে।

৩। স্বাস্থ্য সেবার সাথে বর্তমান যুগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য সেবা যান্ত্রিক ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে মানুষের জীবন যাত্রা ও তার কারণে নিত্য-নতুন অসুস্থতা খরচের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ-এর তাই নিত্য নতুন অসুস্থতা প্রতিরোধ্মুলক কাজ এবং মুনাফাভিত্তিক ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ থেকে জনগণকে রক্ষা করাই প্রধান কাজ হওয়া উচিত।

৪। মাতৃ স্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মান সম্মত সেবার কোন বিকল্প নেই।মায়েদের সন্তান প্রসবের সেবার মান উন্নয়নের জন্য শুধু একটি নির্দিষ্ট মানদন্ড না রেখে গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্ত মান রক্ষার প্রয়োজন আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাতৃ স্বাস্থ্য ও নবজাতক সেবার জন্যে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য মান ঠিক করেছেন। তার বিপরীতে বাণিজ্যিক ও বাজারকেন্দ্রিক মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার মান রক্ষা করতে পারবে না।

৫। স্বাস্থ্য সার্বিক জীবন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত। কাজেই গরিব এবং সুবিধা বঞ্চিত মানুষের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার।শুধু স্বাস্থ্য কর্মী নয়, অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরকেও স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। যেমন পরিবহন কর্মী। তাহলে সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারবে।

৬। আন্তর্জাতিকভাবে ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ গ্রহণ করা হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতখানি এর তত্ত্বাবধান করতে পারবে যেন এর মুল উদ্দেশ্য থেকে সরে না যায়, তা পরস্কার নয়।বিশ্বের বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান যেন এর সুফল ভোগ করার জন্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজ করতে না পারে তার জন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে শাক্তিশালী ভুমিকা রাখতে হবে।

৭। ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজকে স্বাস্থ্য একটি মানবাধিকার হিশেবে স্বীকৃত দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ এবং জাতি সংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের (ESCR) আলোকে খাদ্য, বাস স্থান, কাজ,শিক্ষা এবং বৈষম্যহীন জীবন পাওয়ার নিশ্চয়তা এর সাথে যুক্ত হতে হবে।স্বাস্থ্য অধিকার বিশ্ব অর্থনৈতিক কাঠামোর আলোকে স্বাস্থ্য সেবাকে পণ্য করা থেকে উর্ধ্বে স্থান পেতে হবে নইলে কাংখিত লক্ষ অর্জন করা যাবে না।

সবশেষে, ২০১২ সালের জানুয়ারি ২৪ – ২৮ তারিখে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরে স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য আন্দোলনকারিদের “Moving Towards Universal Health Coverage: Health Financing Matters” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহিত ঘোষণার দুটি গুরুত্ব পুর্ণ দিক তুলে ধরছি।

  • পৃথিবীতে ১০০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত, ১০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্য সেবার খরচ মেটাতে না পেরে গরিব থেকে আরও গরিব হয়ে যাচ্ছে।
  •  প্রতিটি দেশের সরকার এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংগঠন নিজ অবস্থা অনুযায়ী সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার প্রদানের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গীকার করেছে।

আসুন গরিব ও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সচেষ্ট হই।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।