স্বাস্থ্য আন্দোলন ‘রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন,২০১৬ প্রত্যাখ্যান করেছে


উবিনীগ এবং স্বাস্থ্য আন্দোলন আয়োজিত ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ জাতীয় প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় আলোচকেরা ‘রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬’ প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবিত রোগী সুরক্ষা আইন, (২০১৬), চিকিৎসক এবং চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তা আমলে নেয়ার সুনির্দিষ্ট কোন দিক নির্দেশনা নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির পক্ষে দাঁড়াতে পারবে না। বরং আইনের খসড়ায় মনে হচ্ছে সরকার রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক ক্ষতি হলেও তা প্রমাণে দীর্ঘসূত্রতাই প্রস্তাব করছে। আমরা চাই রোগী সুরক্ষা এবং একই সাথে সেবা প্রদানকারীর যথাযথ মর্যাদা।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটি, ডা. ফয়জুল হাকিম, আহ্বায়ক, জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ, ফরিদা আখতার, যুগ্ম আহ্বায়ক, স্বাস্থ আন্দোলন, এ্যাড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, পরিচালক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, ডা. লেলিন চৌধুরী, কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইবনুল সাইদ রানা, সদস্য, স্বাস্থ্য আন্দোলন সহ বিভিন্ন সংগঠনের ৯০ জন প্রতিনিধি। সভাটি সঞ্চালনা করেন পলাশ বড়াল। শুরুতে স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষ থেকে সূচনা বক্তব্য পাঠ করেন ইবনুল সাইদ রানা।

ডাক্তারী পাশ করলেই কেউ চিকিৎসক হতে পারেন না। চিকিৎসা করা কোন ক্রিমিনাল ব্যাপার নয়। লাইসেন্স নিয়ে তবে চিকিৎসা পেশা অবলম্বন করতে হয়। অপরাধ সম্পর্কে অনেক আইন আছে। শাস্তিরও বিধান আছে। ডাক্তারের চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুলের জন্য শাস্তিরও বিধান আছে এবং জরিমানাও আছে। সেই জরিমানার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয় কিন্তু রোগীকে কোন ক্ষতিপূরণ দেওয়া ব্যবস্থা নাই। রোগী সুরক্ষা আইন (২০১৬) এই নতুন আইনে রোগীকে ক্ষতিপূরন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আইনটিতে দেখা যাচ্ছে রোগী এবং ডাক্তার কারোই সুরক্ষা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা হচ্ছে। এটা তো হতে পারে না। মানসম্পন্ন সেবা যদি না হয় তা হলে যতই আইন করা হোক তাতে কোন লাভ হবে না’, বলেন অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই- মাহবুব।


রাশিদা মাহবুব


‘এখানে তিনটি বিষয় একটা হচ্ছে রোগী, স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এই আইনে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। সিটি কর্পোরেশন বলছে ডাক্তারদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। তার মানে চিকিৎসাকে পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসকের অবহেলা জনিত কারণে রোগী মারা গেলেও বিচার চাইতে পারবে না। রোগীর লোক কোন অপরাধ করলে জামিন অযোগ্য। ডাক্তার অপরাধ করলে অপরাধ যোগ্য। ডাক্তারের অপরাধ নির্ণয়ের জন্য মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবিসহ নানা পেশার লোক নিয়ে এই আইনটির সংশোধন হওয়া দরকার। এই ধরনের আইন আমরা প্রত্যাখ্যান করি। ডাক্তারের দ্বারা রোগীর কোন ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ যেটা ধার্য করা হয় সেটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। আমাদের দাবি এটা রোগীকে দিতে হবে যাতে সে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে পারে। কেন নিবন্ধনবিহীন ডাক্তরা চিকিৎসা দিচ্ছে এই সব অপচিকিৎসা বন্ধ করতে হবে, বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন।


অংশগ্রহণকারীঅংশগ্রহণকারী


সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, এই আইনে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা করার ইঙ্গিত রয়েছে। বড় বড় হাসপাতালগুলি রোগীকে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে। রোগীকে জিম্মি করার বৈধতা দেয়া হলে অপরাধ আরো বাড়বে।

‘ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। একদিকে রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ভুগছেন অন্যদিকে চিকিৎসকেরা জনগণের রোষানলে পড়ছেন। এই অবস্থার মধ্যে ‘রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬’ আইন হতে যাচ্ছে। তবে এই খসড়া আইনে একদিকে যেমন রোগীর চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই অপরদিকে চিকিৎসকের মর্যাদা রক্ষারও ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু বেসককারী ক্লিনিক ও চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। আমরা এই খসরা আইন প্রত্যাখ্যান করি’, বলেন ফরিদা আখতার।


ফরিদা আখতার


ড. এম. এ. সোবহান বলেন, ‘রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬’ আইনের এই শিরোনাম পড়তে আমার দম ফুরিয়ে যায়। এর পরিবর্তে আমি প্রস্তাব করছি আইনের একটি সহজ নাম যা জনগণ সহজে বুঝতে পারবে। শিরোনাম হবে, “স্বাস্থ্য আইন, ২০১৬”।

সুপারিশ:

১. রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬ এর প্রস্তাবিত খসড়া বাতিল করতে হবে।
২. চিকিৎসায় অবহেলা অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসায় কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে রোগীকে/ রোগীর উত্তরাধিকারীকে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান / চিকিৎসকের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান থাকতে হবে।
৩. প্রাইভেট চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনমুখী করে সর্ব সাধারণের সু-চিকিৎসার মান উন্নয়ন করতে হবে।
৪. স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান/ ব্যক্তিকে জবাব দিহিতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।