রোগী এবং স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬
স্বাস্থ্য আন্দোলন – এর সুচনা বক্তব্য
প্রেক্ষাপটঃ
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ ও প্রদানের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের বিভিন্ন অনাকাংখিত ঘটেছে, যা খুব উদ্বেগজনক। এরই ফলাফল হিসেবে ‘রোগী এবং স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬’ এর খসড়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মতামত বিনিময়ের জন্যে প্রাথমিক বক্তব্য হিসেবে স্বাস্থ্য আন্দোলন মনে করে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য সেবা দান কারী প্রতিষ্ঠান এবং রোগী উভয়ের স্বার্থ রক্ষা হয় এবং মানুষ সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা পায় এটাই সবার কাম্য, তাই আইনে উভয়কে রক্ষার বিধান থাকতে হবে। এই আইন প্রথমে ২০১৪ সালে একটি খসড়া হয়েছিল “জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৪ এবং রোগী সুরক্ষা আইন, ২০১৪” নামে। সে সময় স্বাস্থ্য আন্দোলন বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে সম্মিলিতভাবে কতিপয় বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছিল। এ সকল মতামত সমূহের মূল বিষয় ছিলঃ
১. “জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন,২০১৪ এবং রোগী সুরক্ষা আইন,২০১৪” দুটি ভিন্ন আইন না হয়ে “স্বাস্থ্যসেবা গ্রহনকারী,স্বাস্থ্যসেবা দানকারীর দায়িত্ব ও অধিকার সংরক্ষন আইন ২০১৪” নামে একটি আইন করা হোক।
২. রোগীর অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য,স্বাস্থ্যসেবা দানকারীর ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য,স্বাস্থ্যসেবা দানকারীর প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলাদাভাবে বর্ণনা করা হোক।
৩. তদন্ত কমিটিতে পেশাজীবিদের পাশাপাশি আইনজীবি, স্বাস্থ্য অধিকার, মানবাধিকার কর্মী এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য থেকে সদস্য রাখা হোক।
দন্ডের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য আন্দোলনের প্রস্তাব ছিল সেবা দানকারী ব্যক্তির অবহেলার জন্য কারও মৃত্যু হলে যেন বেশী শাস্তি হয়, অন্যদিকে কোন ব্যক্তি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তিকে আঘাত করলে তারও সাজা হবে কিন্তু সেবা দানকারীর অবহেলাকেই অপরাধের দিক থেকে বেশী বলে গণ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই মতামত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হয়েছিল। (২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)।
এই বছর ২০১৬ সালে নতুন করে খসড়া এসেছে এবং দুটি আইনকে এক করে ‘রোগী এবং স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬’ নাম রাখা হয়েছে, যদিও স্বার্থের দিক থেকে দুটি সম্পুর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ রোগীর পক্ষ যদি মনে করে অবহেলা হয়েছে তাহলে তা সেবাদান কারীর বিরুদ্ধ্বে যায়, আর সেবা দান কারী যদি মনে করে তার ওপর আঘাত করা হয়েছে তাহলে সেটা রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বিপক্ষে যায়। অর্থাৎ বাদী-বিবাদী একই আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। দেখার বিষয় কার স্বার্থ বেশী রক্ষা করা হয়েছে।
এই আইনে সেবা দানকারী সরকারী,বেসরকারী,স্বায়ত্বশাসিত,আধা স্বায়ত্বশাসিত হাসপাতাল,ক্লিনিক, চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্র সমূহে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক,নার্স, প্যারমেডিকস ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ চিকিৎসা সেবার মতো ‘মহান কর্মে’ নিয়োজিত আছেন বলে দাবী করার মধ্য দিয়ে সেবা দানকারী এবং রোগীর পক্ষের মানুষের অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আইনের ধারণাপত্রের দেওয়া বর্ণনায় রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভুল হওয়া বা যে কোনও জটিল রোগের ক্ষেত্রে অঙ্গহানি হতে পারে বা জীবন হানির মত ঝুঁকি থাকতে পারে,তবে কোন ঘটনা যেন চিকিৎসা সেবা কর্মীদের অবহেলায় না ঘটে সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এটা এক ধরণের স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে যে এমন ঘটনা ঘটছে, কিন্তু তা হলেও বলা হচ্ছে ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাইতেছে যে কোন হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু হইলে প্রায়শই রোগীর আত্মীয় স্বজন সঠিক কারণ নির্ণয় ছাড়াই অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার ‘অজুহাত’ তুলে চিকিৎসক,নার্স,হাসপাতাল কর্মচারীদের শারীরিক আক্রমণ বা চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ভাংচুর করেন।
আমরা লক্ষ করছি যে কোন রোগীর আত্মীয় স্বজনদের কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়া, বিশেষ করে মামলা হলে সকল চিকিৎসক পক্ষ নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এতে ভোগান্তি হচ্ছে অসংখ্য রোগীর যারা চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে আসেন। বলা হচ্ছে এই আইন করা হচ্ছে ‘ভবিষ্যতে চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান সমূহে কর্মরত চিকিৎসা সেবা কর্মীবৃন্দ যেন লাঞ্ছিত বা আঘাত প্রাপ্ত না হন এবং হয়রানি মূলক ভাবে তাদেরকে গ্রেফতার করা না হয় বা স্থাপনা সমূহ বিশৃঙ্খলাকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশের মধ্যে স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকে, চিকিৎসা সেবা কর্মীরা স্বাভাবিক পরিবেশে তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান অব্যাহত রাখতে পারেন পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা গ্রহীতাও যাতে কোন প্রকার হয়রানি, অবহেলা বা ক্ষতিগ্রস্থ না হন সেই লক্ষ্যে।’ লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে পুরো ছয়টি লাইনের মধ্যে মাত্র একটি লাইন রোগীর পক্ষে লেখা হয়েছে। এতে প্রশ্ন জাগে তাহলে এই আইন রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে কি?
প্রস্তাবিত আইনের সংজ্ঞার মধ্যে রোগীর সুরক্ষা করতে গিয়ে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যেমন ক. “পেশাগত অবহেলা’’ যার অর্থ এই আইন দ্বারা সেবা দানকারী ব্যক্তির উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থতা যা তার পক্ষে মানবিকভাবে বাস্তব অবস্থায় পালন করা সম্ভব; খ. “চিকিৎসায় অবহেলা’’ অর্থ কোন প্রকার কারণ ব্যতিরেকে রোগীর প্রাপ্য চিকিৎসা প্রদান থেকে স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ব্যক্তি নিজেকে বিরত রাখা যার দ্বারা রোগীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধনের সম্ভাবনা থাকে;গ. “অপরাধসম অবহেলা’’ অর্থ রোগীর প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা যার দ্বারা রোগীর স্থায়ী ক্ষতি সাধন বা মৃত্যু সংঘটিত হতে পারে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে “ক্ষতি’’ অর্থ রোগীর শারীরিক, মানসিক বা কর্মক্ষমতার অনিষ্ট বোঝানো হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ভুল চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন সংজ্ঞা নেই। অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসা আলাদা বিষয়। যদি ধরেও নেয়া হয় যে কোন চিকিৎসক ইচ্ছাকৃভাবে ‘ভুল চিকিৎসা’ করবেন না, তবুও ভুল হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। এই আইনে সেই ভুলের কোন সুরাহা করা যাবে না।
অন্যদিকে সেবাদান কারী ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষার জন্যে যে সংজ্ঞা ব্যবহার হয়েছে তা হচ্ছে ক. “অপরাধী’’ অর্থ এই আইনের অধীনে কোন ব্যক্তি নিজে অথবা কোন সংগঠনের সদস্য বা কর্মী বা গোষ্ঠীর বা সংঘের কোন সদস্য হয়ে সহিংস কর্মকান্ড বা বিশৃঙ্খলা সংঘটিত করে অথবা যে কোন অপরাধ করার চেষ্টা করে অথবা প্ররোচনা দেয়;খ. সম্পত্তি’’ অর্থ কোন সেবা দানকারী ব্যক্তি বা স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বমূলে মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বা চিকিৎসা যন্ত্র বা চিকিৎসা যন্ত্রাংশ।
সংজ্ঞায় রোগীর সুরক্ষা খুব ভা্লভাবে না থাকলেও স্বাস্থ্য সেবা দান কারী ব্যাক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য বলতে যা বলা হয়েছে তা খুব খারাপ নয়। যেমন ১. শপথ, ২. রোগীর প্রতি দায়িত্ব, ৩. মান সম্মত সেবা, ৪. রোগী ও রোগীর অনুসংগীকে তথ্য প্রদান, ৫. সর্বসাধারণের প্রতি দায়িত্ব ও ৬. আইন শৃংখলা বিষয়ক। এগুলো মেনে চললে চিকিৎসা সেবা উন্নত হবে।
পেশাগত ইথিক্স-এর মধ্যে বেশ কিছু ভাল দিক আছে কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা প্রযুক্তি ব্যবহারের যে বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে এবং কোন ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে রোগীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তার ব্যাপারে কোন উল্লেখ নেই। আইসিইউতে রেখে চিকিৎসার সময় রোগীর আত্মীয় স্বজনরা জানতেও পারেন না যে চিকিৎসা হচ্ছে তা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা এবং এক পর্যায়ে রোগীর মৃত্যু ঘটলে তাকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দিয়ে রেখে কোন কোন সময় কয়েকদিন রেখে দেয়ার যে অনৈতিক চর্চা চলছে তার ব্যাপারে কোন ধারা নেই যা এই আইন দিয়ে রোগীর স্বার্থ রক্ষা হবে।
আইনের অন্যতম প্রধান অংশ হচ্ছে অপরাধ কি, তার ধরণ, অভিযুক্তকে গ্রেফতার এবং অপরাধ প্রমাণ হলে দন্ড দেয়া। এই আইনের ক্ষেত্রে দুটি বিপরীত গোষ্টিকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যে একটি আইন করতে গিয়ে রোগী এবং তার স্বজনেরা সুবিচার পাবেন বলে মনে হয় না। যেমন সেবা দানকারীদের ক্ষেত্রে ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনে বা চিকিৎসা প্রদানে অবহেলা বা অপরাধসম অবহেলা অপরাধ বলে গন্য হবে’ অন্যদিকে রোগীর পক্ষ থেকে কোন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাবার সুযোগ নেই, কারণ এই কাজ ‘সহিংস কাজ বা স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের কোন সম্পত্তির ক্ষতি সাধন, বিনষ্ট, ধ্বংস বা উক্তরূপ সম্পত্তি অপরাধী কর্তৃক নিজ দখলে নেয়া অপরাধ বলে গন্য হতে পারে।’ রোগী বা তার স্বজনেরা যদি সন্তুষ্ট না হন এবং তাৎক্ষনিক ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলে তাহলে তাকে ‘সহিংস কার্যকলাপ’ হিসেবে চিহ্নিত হলে সাধারণ মানুষেরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মনে রাখতে হবে রোগীর চিকিৎসার ত্রুটি বা অবহেলা যেখানে ঘটছে সেটা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানেরই জায়গা। সেখানে রোগী ও তার স্বজনের ক্ষমতা অনেক সীমিত। তারা ক্ষুব্ধ হলে আইন বুঝে করার সুযোগ নেই। সেই সময় তাদের আবেগ অনেক বড় বিষয়। তার ব্যাপারে কোন সহানুভুতির স্থান নেই। সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান নিজেই তার অপরাধ স্বীকার করবে এমন আশা করা যায় না। কাজেই যে কোন প্রতিক্রিয়াকেই যে সহিংস কার্যকলাপ হিসেবে কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করলে রোগীর স্বজনদের জেল-জরিমানা খাটা লাগবে।
দেখা যাচ্ছে অপরাধের ধরণের মধ্যে সেবাদানকারীর ক্ষেত্রে ‘সংঘঠিত অপরাধ আমল অযোগ্য ও জামিন যোগ্য হইবে’;আর রোগীর স্বজনদের ক্ষেত্রে ‘সংঘঠিত অপরাধ আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য হইবে’। এটা চরম বৈষম্য মুলক বিচার। সেবা দান কারীদের আরও সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করাই যথেষ্ট নয়, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের’ মতামত নিয়ে তবে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে। তাদের গ্রেফতার করতে হলেও নিশ্চিত হয়ে করতে হবে।
দন্ড দেয়ার ক্ষেত্রেও সেবাদানকারীদের প্রতি সদয় আচরণ করা হয়েছে। তাদের অপরাধ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ব্যক্তির নিবন্ধন,সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিধি দ্বারা অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বাতিল করা খুব বড় দন্ড নয়। সাজার ক্ষেত্রে জীবন ঝুঁকিপুর্ণ হলে ‘প্রমাণ সাপেক্ষে’ (অনধিক তিন বৎসরের কারাদন্ড বা দুই লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয়) শাস্তি আরোপ করা যাবে;আর অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হইলে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দন্ড বিধির ধারা ৩০৪-ক প্রয়োগ করা যাবে। কিন্তু রোগীর স্বজনদের ক্ষেত্রে সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে কিনা তা প্রমানের কোন বিধি রাখা হয় নি। বরং কোন অপরাধ সংঘঠিত করেছে বলে পরিগণিত হলে অপরাধ করার কারণে অপরাধী অনুর্ধ্ব তিন বৎসরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত কোন অপরাধ সংঘটিত করলে বা সম্পত্তির ক্ষতি করলে বিচারিক আদালতের আদেশ সাপেক্ষে অপরাধী তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। অথচ রোগীর ক্ষতি হলে কোন প্রকার ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এই আইনে রোগীর জীবনের চেয়ে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি রক্ষা করার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে। আশ্চর্য যে কোথাও বলা হয়নি, চিকিৎসক, বা নার্স বা অন্যান্য কর্মচারীর ওপর হামলা হলে তার শারীরিক ক্ষতি হলে কি দন্ড দেয়া হবে। রোগী এবং সেবাদান কারী ব্যক্তির সুরক্ষা হচ্ছে না, হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা।
স্বাস্থ্য আন্দোলন মনে করে দেশের মানুষের জন্যে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা ভাল থাকুক একই সঙ্গে যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের যেন অহেতুক কোন হয়রাণীর শিকার হতে না হয় তার সুরক্ষাও থাকতে হবে। চিকিৎসায় অবহেলা, ভুল চিকিৎসা এবং বাণিজ্যিক কারণে রোগীকে ব্যবহার যারা করছেন তাদের চিহ্নিত করা দরকার কারণ তাদের জন্যে পেশাজীবী হিসেবে ব্যাপক চিকিৎসকদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে এটা মেনে নেয়া যায় না। স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া নাগরিক অধিকার। এই অধিকার ক্ষুন্ন করা যাবে না।