ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব


স্বাস্থ্য আন্দোলন এর আয়োজনে ৬ এপ্রিল, ২০১৬ বিকেল ৩ টায় নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় “ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সচেতনতা ও প্রতিরোধের উপায়” নিয়ে এক মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় অংশগ্রহন করেছেন উন্নয়ন কর্মী, গার্মেন্ট শ্রমিক, কলেজের অধ্যাপক, ছাত্র, তামাক বিরোধী নারীজোট, শ্রমবিকাশ কেন্দ্র, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, বীজবিস্তার ফাউনডেশনসহ আরো অনেকে। অংশগ্রহনকারী মোট ৩৩ জন।

সভাটি সঞ্চালনা করেন পলাশ বড়াল, সদস্য, স্বাস্থ্য আন্দোলন।
সভাপ্রধান ড.এম. এ. সোবহান, চেয়ারম্যান বীজবিস্তার ফাউন্ডেশন।

ড. এম এ. সোবহান, চেয়ারম্যান,বীজ বিস্তার ফাউনডেশন বলেন মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশ গুলিতে এই রোগের প্রবনতা বেড়েছে। ডায়াবেটিস একটি নিরব ঘাতক ব্যাধি। ২০১৫ সালে এ দেশে ৭১ লক্ষ ডায়াবেটিস রোগী ছিল। দিনে দিনে যে হারে ডায়াবেটিস বাড়ছে তাতে আশঙ্কা হচ্ছে ২০২০ সালে এ সংখ্যা এক কোটি ষাট লাখ ছাড়িয়ে যাবে। ডায়াবেটিস দুই ধরনের টাইপ -১ ডায়াবেটিস ও টাইপ -২ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসের মধ্যে টাইপ -২ ডায়াবেটিসের সংখ্যাই বেশি। ডায়াবেটিস টাইপ ১ হচ্ছে জন্মগত ভাবে যে ডায়াবেটিস হয়। ডায়াবেটিস টাইপ-২ হচ্ছে বয়স্ক লোকদের হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন নিতে হয়। অনেকে মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। প্রসবের পর আবার নিয়ন্ত্রণে আসে।


স্বাস্থ্য আন্দোলন ডায়াবেটিস মতবিনিময় সভা


৬০ এর দশকে ইরি ধান প্রবর্তনের পর থেকে ডায়াবেটিকের আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে গেছে। ব্রি ধান ২৮ ব্রিধান ২৯ খাদ্যমান পরীক্ষা করে দেখা গেছে হাই গ্লাইসোমিক সূচক আছে। গ্লোকোজ বেশি হচ্ছে সেটা সামাল দেয়ার জন্য ইনসুলিন নাই। আধুনিক হতে গিয়ে আমরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অর্থ হচ্ছে শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। মানব দেহে গ্লোকোজের মাত্রা অনেক কারণে কম বা বেশী হতে পারে। গ্লোকোজের মাত্রার প্রতি সচেতন দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে গ্লোকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে হার্ট এটাক, কিডনি বিকল হওয়া অথবা অন্ধত্বের মত অভিশাপ থেকে মুক্ত থেকে সুস্থ জীবন যাপন করা যায়। ডায়াবেটিস থেকে নিস্তার পেতে হলে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করতে হবে। ঢেঁকি ছাটা চালে ভাত খেতে হবে। ফাষ্ট ফুড ও, ভেজাল খাবাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আঁশ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। কোন কোন খাবার খেতে হবে সে বিষয়ে তিনি বলেন,ডায়াবেটিস রোগীদের উপযোগী খাবার হচ্ছে মটর ডাল, ফেলন ডাল, আপেল, কলা, আম, পেঁপে, ব্রকলি, পুঁইশাক, পালংশাক, লালশাক, মিস্টি আলু, কাউন, চীনা, ডাটাশাক, মশুর ডাল, ঢেঁড়শ, ফুল কপি, বাঁধা কপি, তিষি বীজ, সূর্যমুখী বীজ, বাতাবিলেবু, মুরগির মাংস, ডিমের সাদা অংশ, চীনা বাদাম, সয়াবিন তেল, অলিভঅয়েল, সব রকম সবুজ শাক সবজি। এছাড়া হলুদ, আদা, দারু চিনি, জাম, কালিজিরা, মেথি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ছাড়া আমাদের জীবন যাপনে পরিবর্তন আনতে হবে।

আফরীন, গার্মেন্ট শ্রমিক, স্বাধীনবাংলা কর্মচারী ফেডারেশন। শ্রমিকরা নিজেরা জানেও না তাদের ডায়াবেটিস আছে কিনা? শরীর ঝিম ঝিম করে দুর্বল লাগে, হাত পা ফুলে যায়,এর জন্য তারা ফার্মেসীতে যায়। তখন তার রক্ত পরীক্ষা করতে দেয়। রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়না এই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া। মাঝ পথে গিয়ে অনেকে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। আমরা আলোচনা শুনলাম আমরা আমাদের সহকর্মীদের সাথে ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করবো এবং তাদের সচেতন করবো।


স্বাস্থ্য আন্দোলন ডায়াবেটিস মতবিনিময় সভা


মুক্ত আলোচনা:

জিয়ারুল ইসলাম, পরিচালক, ইনোভেশন ইন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস মাহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। শুধু যে বয়স্কদের ডায়াবেটিস হয় তা নয় আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে শিশুদের ডায়াবেটিস। শিশুর স্থুলতা ও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারন। বয়স্কদের ডায়াবেটিস হওয়ার কোন না কোন কারণ আছে। এর মধ্যে খাদ্য জড়িত বেশি। নানা ধরনের বিষাক্ত খাবার খেয়ে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। আমার স্ত্রী ও আমি দু,জনেই ডায়াবেটিসের রোগী। প্রথমে বুঝতে পারিনি ডায়াবেটিস হয়েছে। প্রথম শুধু শরীর দুর্বল লাগতো, মুখ শুকিয়ে উঠতো, পানি পিপাসা লাগতো, ঘন ঘন প্রস্রাব হতো। পরীক্ষা করার পর ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব নিজ নিজ পর্যায়ে থেকে সচেতন হওয়ার জন্য সবাইকে বলা। শরীর খারাপ লাগলে রক্তটা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। সকালে বা বিকেলে হাটার অভ্যাস করা। তা ছাড়া খ্যাদাভাস পরিবর্তন করতে হবে। নিয়ম কানুন, ওষুধ, খাদ্য এই তিনটি মেনে চলতেই হবে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য সামগ্রীকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সীমা দাস সীমু: শ্রমবিকাশ কেন্দ্র

ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম মেনে খাবার খেতে হবে। সব খাবারই খেতে পারবে তবে পরিমিত ভাবে। ফাস্ট ফুড, পনির, ঘি, মাখন না খাওয়া ভাল। আঁশ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। জীবন যাপনের অভ্যাস পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ইতোমধ্যে যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে তারা নিয়মিত সকাল অথবা সন্ধ্যায় হাঁটছে। আর রোগীদের হাঁটার জায়গায় একটা ওজন মেশিন, ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিন নিয়ে বসে আছে বেশ কিছু মানুষ। ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দেবার জন্য। এটা তাদের ব্যবসা। প্রতি জনের ওজন ও প্রেসার মাপার জন্য টাকা নিচ্ছে ৩০ টাকা। ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দেবার জন্য তাদের দেখা যায়।

প্রতিমাসেই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত। ডায়াবেটিস রোগীরা তা জানে। ডায়াবেটিস এর সাথে পরীক্ষা করতে হয় রক্ত, ক্রিয়েটিনিন এবং ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা। যা বেশ ব্যায়বহুল। নি¤œ মধ্যবিত্ত বা গরীর পরিবারের পক্ষে এসব পরীক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই যাদের এখনও ডায়াবেটিস রোগ হয়নি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সচেতন হতে হবে দৈনন্দিন খাওয়া দাওয়া বিষয়ে। এর জন্য আঁশযুক্ত সবজি, লাল চালের ভাত, লাল আটা খাওয়া দরকার। মাঝে মাঝে ডায়াবেটিস পরীক্ষাও করা দরকার।

রোকেয়া বেগম, সদস্য, স্বাস্থ্য আন্দোলন। রোগীদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি ডায়াবেটিস বাংলাদেশে ডায়াবেটিস এর প্রবনতা এত বেড়ে গেছে যে, কোন কোন পরিবারে স্বামী স্ত্রী দু’জনেরই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা খুব ব্যয় বহুল বলে দরিদ্র পরিবারের মানুষ ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা করাতে পারছে না। বিভিন্ন টেস্ট ও নিয়মিত ওষুধের জন্যে মাসে কম পক্ষে খরচ হয় ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকার মতো খরচ হয় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যে। ডায়াবেটিস হওয়ার কারণে অন্যান্য শারিরীক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, চোখে ছানি পড়া,উচ্চরক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, হাঁটু ব্যথা, কোমড় ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, দাঁতের সমস্যা, ইউরিন ইনফেকশন ইত্যাদি। এক জন রোগী বলেছেন কয়টার ওষুধ খাব। ওষুধের খরচ বহন করতে না পেরে মাঝ পথে চিকিৎসা থেমে যায়। এই ঘাতক ব্যাধি থেকে নিস্তার পেতে হলে জীবন যাপনের পরিবর্তন আনতে হবে।

রুবিনা রহমান, সদস্য, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা,। আমাদের পরিবারে ডায়াবেটিস রোগী আছে। নিয়ম কানুন মেনে খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ।

তাইফুন ন্নাহার চৌধুরী, সেক্রেটারী, ইনার হুইল ক্লাব, ঢাকা। আমি ডায়াবেটিসের রোগী ২৭ বছর ধরে ডায়াবেটিস হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা করছি। নিয়ম কানুন মেনে চলে আমি সুস্থ আছি।

প্রশ্ন:

১. সকালে হাটা নিরাপদ না বিকেলে হাটা নিরাপদ
২. সুগার ফ্রি চিনি খেতে পারবে কিনা
৩. গুড় নিরাপদ না চিনি নিরাপদ
৪. ভাইভেটর মেশিনে হাটা ঠিক কিনা
৫. টেস্টি সেলাইন বা ওরস্যালাই খেতে পারবে কিনা
৬. ইলেকট্রোলাইট বেড়ে যায় কেন

প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন ড.এম এ সোবহান এবং সীমা দাস সীমু।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।