জাতীয় বাজেট ২০১৬-২০১৭: স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দে শ্রমিক নারীদের কথা


সাভার আশুলিয়া থানার পশ্চিম গাজিরচট এলাকায় ২২ এপ্রিল, ২০১৬ স্বাস্থ্য আন্দোলনের আয়োজনে জাতীয় বাজেট ২০১৬- ২০১৭: স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দে শ্রমিক নারীদের কথা শোনার জন্য এক সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত অংশগ্রহণকারী ছিলেন ২৩ জন। এরা হলেন গার্মেন্ট শ্রমিক, বাসাবাড়িতে কাজ করা মহিলা, সাধারণ নারী, গর্ভবতী মা ও কিশোরী। মতবিনিময় সভায় আসন্ন বাজেটে শ্রমিকের জন্য কি ধরনের বাজেট হওয়া উচিত সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

গার্মেন্ট শ্রমিক রোকেয়া খাতুন

প্রতিবছর সরকারের বাজেট হয় জানি কিন্তু সেই বাজেটে শ্রমিকের জন্য কি থাকে তা জানি না। আমরা অসুস্থ হলে ফার্মেসী থেকে ওষুধ খাই। বড় ধরনের কোন রোগ হলে প্রাইভেট হাসপাতালে যাই। কারণ এখানে আশে পাশে কোন সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নাই। আর প্রাইভেটে গেলে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। আমাদের দেশ আলফা ডাংগা। সেখানে সরকারি হাসপাতালে গেলে ডাক্তার পাওয়া যায় না। ওষুধ বাহির থেকে কিনে খেতে হয়। আমার দাবি হচ্ছে সরকারি বাজেটে বরাদ্দ কি দেয় না দেয় তা জানি না। তবে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে যেন পরীক্ষা নিরীক্ষা সব হাপাতালেই করা হয়। রোগ অনুযায়ী যেন ডাক্তার পাওয়া যায়, ওষুধ পাওয়া যায়।

হোসনে আরা একজন গৃহিনী

বাজেটের নাম শুনি টেলিভিশনে। গরিবের জন্য সেখানে কি থাকে জানি না। আমার বুকে ব্যথা হয়েছিল ১ মাস আগে। বেসরকারি হাসপাতালে যাই। সেখানে পরীক্ষা করি ইসিজি, এ্ক্সরে। খরচ হলো ৪,৫০০ টাকা। আর ডাক্তারের ভিজিট ৪০০ টাকা। সব মিলে, ওষুধ নিয়ে আমার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মত। আমরা সরকারি হাসপাতালে কম খচরে সেবা নিতে চাই। কিন্তু এই এলাকায় কোন সরকারি হাসপাতাল নাই।

শাহিনা, গার্মেন্ট শ্রমিক

মাঝে মাঝে ঠান্ডা লাগে আমার মাসিকের সমস্যাও ছিল। আমাকে গার্মেন্ট থেকে সুপার ক্লিনিকে পাঠায়। সেখানে ৪০০০ টাকা খরচ হয়েছে। হাসপাতালে গেলেই সব পরীক্ষা করতে বলে। এই পরীক্ষার জন্যই বেশী খরচ হয়। এটার তো কোন রেট নাই যে টাকা চায় সেই টাকা দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ বেশী। আমরা গরিব মানুষ এত টাকা পাব কোথায়। বাজেটে শ্রমিকের জন্য আলাদা বরাদ্দ চাই।

জুলেখা খাতুন গৃহশ্রমিক

আমি বাসাবাড়িতে কাজ করি । আমার হাই প্রেসার আছে। গরমে থাকলে প্রেসার উঠে। তখন ফার্মেসী থেকে বাকিতে ওষুধ কিনে খাই। মাঝে মাঝে পয়সার অভাবে ওষুধ খেতে পারি না। তখন অসুস্থ হয়ে পড়ি। কাজে যেতে পারি না। মাসে আমার ওষুধে খরচ হয় ৪০০/ ৫০০ টাকা। বাজেটে কি দেয় না দেয় তা জনি না। কিন্তু সংসদে বসে তারা বাজেট করে ওখানে তো আমাদের হাত নাই। দিন দিন চিকিৎসা খরচ বাড়তেছে। আমাদের দাবি শ্রমজীবি মানুষের চিকিৎসা খরচ কমাতে হবে।

কহিনুর বেগম সাধারণ নারী

মাঝে মাঝে বুকে ব্যথা হয় তখন ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খাই। আমাদের হাতের কাছে ফার্মেসী তাই ওখানেই যাই। প্রতি মাসে খরচ হয় ২০০ টাকা।

সেলিনা বেগম শ্রমিক

ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক টাকা লাগে। তাই ফার্মেসী থেকে ওষুধ খাই। জ্বর হয়েছিল সব মিলে ৫৫ টাকার ওষুধ লেগেছে।

বিউটি, শ্রমিক

চাকরি করি অসুস্থ হলে ছুটি পাই না। চিকিৎসা করবো কি ভাবে। মরার মত না হলে তো আর ছুটি দেয় না। আমার পা টানে এবং ব্যথা হয়েছিল তখন পানিশাইল লাইফ কেয়ার হাসপাতালে যাই। ডাক্তারের ভিজিট ৩০০ টাকা ওষুধ লাগছে ৫০০ টাকার। আমার দাবি হলো সরকারি ভাবে স্বাস্থ্য সেবা পেতে চাই।

গর্ভবতী মা তানিয়া

আমার ভাগিনা বয়স ১ বছর তার কানে ব্যথা ছিল। তাকে জিরানী শেখ ফজিলাতুন নেসা মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছি। ডাক্তারের ভিজিট ৫০০ টাকা। বাহির থেকে ওষুধ কিনতে হয়েছে। তা হলে আমাদের ওখানে গিয়ে কি লাভ হলো।

ময়না, সালমা, রোকেয়া খাতুন ইপিজেডে কাজ করেন। তাদের গার্মেন্টে সাধারণ রোগের চিকিৎসা দেয় যেমন সর্দি কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া। এছাড়া অন্য কোন রোগ হলে যেমন এ্যাপেনডিকস, হার্ডের সমস্যা, উচ্চরক্তচাপ, সিজার অপারেশন করতে হলে তখন চিকিৎসার জন্য বাহিরে যেতে হয়।

ময়না বর্তমানে ৬ মাসের গর্ভবতী নানা শারীরিক সমস্যা থাকায় সে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবীমা কার্ড করে সেবা নিচ্ছেন। তিনি বলেন এখানে একটু কম পয়সায় সেবা পাই ।

বাজেটে শ্রমিকদের বিশেষ দাবী

১. সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সকাল ও সন্ধ্যায় অফিস সময়ের আগে একটি বিশেষ বিভাগ খোলা থাকতে হবে।

২. গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় অবস্থিত সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধসহ সকল ধরণের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৩. গার্মেন্ট শ্রমিকদের চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে।

৪. কোন কোন গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের জন্য পানীয় ও পয়-নিস্কাশন ব্যবস্থা যথাযথ করার জন্যে ফ্যাকক্টরীতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় অবস্থিত সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধসহ সকল ধরণের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. গার্মেন্ট কারখানায় দুর্ঘটনার পর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং যতোদিন এই শ্রমিক সুস্থ হয় ততদিন বিনা পয়াসায় তার চিকিৎসা চালিয়ে যাবার বরাদ্দ থাকতে হবে।

গ্রার্মেন্টস শ্রমিক

গ্রার্মেন্টস শ্রমিক


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।