গ্রামের নারী ও শিশুদের জন্য দাই মা


বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যু একটি বড় সমস্যা। জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন পরিকল্পনায় ২০১৫  নাগাদ বাংলাদেশে প্রতিলাখে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৪ থেকে ১৪৩ জনে কমিয়ে আনা এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য-৪ অনুয়ায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার হাজারে ৪৮ নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ উবিনীগের যে কার্যক্রম বাস্তবায়নের শুরু হয়েছে তার প্রধান কাজ বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার কমিয়ে আনা। উবিনীগ এ কার্যক্রম দেশে ১৫ টি জেলার ২০ উপজেলা ১৩০ টি গ্রামে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। 

এখনো বাংলাদেশে গ্রামের শতকরা ৮০ ভাগ নারী দাইমাদের সহযোগিতায় সন্তান জন্মদান করেন। তাই দাইমাদের সংগঠিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়েরা যাতে দাইমার সহযোগিতায় কাছাকাছি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে সেবা নিতে পারে তার জন্য চার থেকে পাঁচটি গ্রাম নিয়ে একটি দাইঘর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই কাজ ভালভাবে করার চেষ্টা চলছে। দাই ঘর একটি নতুন ধারণা। চার থেকে পাঁচটি গ্রাম নিয়ে একটি দাই ঘর। এখানে এসে দাইমারা বসেন এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন সমস্যা হলে দাইমারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এমন ঘরকে দাইঘর বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের ২০ টি দাইঘর চালু হয়েছে এবং কাজ চলছে। আমাদের দাই সমিতিতে সে সব দাইমারা রয়েছেন তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দাইমার সংখ্যা প্রায় ৩০০ উপরে। একজন গর্ভবতী মাকে প্রথম দিন থেকে বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর ৪০ দিন পর্যন্ত দাইমারা মা এবং শিশুকে দেখাশোনা করেন এবং পরামর্শ দেন। অপুষ্টির দিক থেকে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ৩৬ টি দেশের তালিকা থেকে বের হতে পারছেনা বাংলাদেশ। দেশে বর্তমানে অপুষ্টির শিকার প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। প্রতি বছর অপুষ্টিজনিত রোগে মারা যাচ্ছে ৫৩ হাজার শিশু। সব মিলিয়ে উচ্চমাত্রার অপুষ্টির ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। (তথ্যসূত্র: বণিকবার্তা সেপ্টেম্ব ৫, ২০১৩)

অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দাইমারা পুষ্টির ব্যাপারে যে ভূমিকা রাখেন তা হলো গর্ভবতী মা ও শিশুদের কুড়িয়ে পাওয়া শাক সবজি ও মৌসুমি দেশীয় ফল ও সার বিষছাড়া খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরিবারের পুষ্টির যোগান দেবার জন্য বাড়ির আশে পাশে ফলের গাছ, শাক সবজি লাগানোর কথা বলেন। এ ছাড়াও হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল পালার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নবজাতক শিশুদের মায়ের বুকের প্রথম শালদুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুদের শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ছয় মাস পর থেকে বাড়তি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। গর্ভবতী মাদের ও প্রসূতি মাদের কোন খাবার বেশি খেতে হবে কোন খাবার কম খেতে হবে তা দাই মারা জানেন। সেই ভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

গর্ভবতী মা, শিশু ও ১৫-৪৫ বছরের মহিলাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা ধরণের সমস্যায় দাইমারা তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি ঝুঁকি তারা চিনে মাকে সরকারি হাসপাতালে রেফার করেন। কোথায় গেলে তারা সঠিক চিকিৎসা পাবে কোন সময়ে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা থাকে সেটা দাইমারা জেনেই রেফার করে থাকেন। দাইমারা কোন কিছুর বিনিময়ে এই কাজ করে না। গ্রামের গরীব, অসহায় গর্ভবতী মায়ের বিপদের সময় তাদের পাশে থাকেন দাইমারা।

গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসব কালকে দাইমারা বলেন“নিদান কাল” “নিদান কাল” এর সেবা মানে পুণ্যের কাজ বলেই জানেন দাইমারা। সন্তান প্রসবের পর খুশী মনে যে যা দেয় তা দাইমারা হাসি মুখে গ্রহণ করেন। অনেক গরীব পরিবার আছে কোন কিছু দেবার সামর্থ নেই এ বিষয়ে দাইমাদের কিন্তু কোন দাবি নাই।

দাইমারা ওষুধি গাছ নিয়েও কাজ করে থাকেন। প্রতিটা দাই ঘরের পাশে তারা ওষুধি গাছ এবং দেশীয় ফলের গাছ লাগিয়েছেন। তাদের নিজ নিজ এলাকায় বিলুপ্তপ্রায় ওষুধি গাছ কোথাও পাওয়া গেলে তারা সংগ্রহ করে আনেন। দাইমাদের সংগ্রহে প্রায় ২০০ রকমের ওষুধি গাছ রয়েছে। সাধারণ ছোট খাট রোগের চিকিৎসা তারা দিয়ে থাকেন।

কিন্তু দাই মাদের কোন স্বীকৃতি দেয়া হয় না। আমাদের দাবি দাই মাদের স্বীকৃতি দেয়া হোক।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।