স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধীতার কোন চিকিৎসা নেই


কনা, কনার বয়স ১বছর ৫ মাস। পিতা নাম-কামাল মন্ডল, বয়স ৩০ বছর, পেশায় দিন মজুর ও কৃষক। মায়ের নাম-সাবিনা ইয়াসমিন, বয়স ২৫ বছর, গৃহিনী। ঠিকানা- হাজারীপাড়া, মুলাডুলি, ঈশ্বরদী, পাবনা।

পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। বাবা, মা, কনার ভাই, বয়স ৬ বছর ১০ মাস এবং কনা নিজে।

আর্থিক অবস্থা- কনা বাবার ৫ কাঠা জমির একটি বসত বাড়ি আছে। তাতে একটি ঘর। ঘরটির ছাউনি টিনের কিন্তু চার পাশে মাটির দেওয়াল। ছোট একটি রান্না ঘর আছে। গবাদি পশু পাখি বলতে একটি মুরগী ও বাচ্চা ৬টি। একটি আম গাছ, একটি লিচু গাছ, একটি লিচু গাছ এবং একটি জাম্বুরা। ছোট একটি বাঁশ ঝার আছে।

কৃষি জমি বলতে ২০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করেন। পাশাপাশি দিন মজুরের কাজ করে দিন চলে।

কনার প্রতিবন্ধী হওয়ার কারন- প্রতিবন্ধী সাব্বিরের ছোট বোন কনা। কনার জন্মের পর কোন সমস্যা ছিল না। কনার মা বলেন, কনার যখন ১২ মাস বয়স তখন থেকে সবাই বুঝতে পারে কনা কানে শুনে না। প্রথমে কনা মা, বাবা বলে ডাকতো। মা কোন কথা বললে সাথে সাথে কনা বলতো। কনার বয়স যখন ১ বছর ২ মাস তখন ঠান্ডা লাগে। ডাক্তার কনাকে একটি সিরাপ দেন নাম সালটলিন। এই সিরাপ খাওয়ানোর পর ঠান্ডা ভাল হয়।

একদিন কনার মা উঠানে ধান শুকাতে দেন, হঠাৎ দেখতে পান কনা তার দাদীর কাছে যাচ্ছে। কনার মা তাকে জোড়ে ডাক দেন কনা শুনতে পায়না। তারপর তার বাবা মা তাকে অনেক চিকিৎসা করেন যাতে সে কানে শুনতে পায়। কিন্তু তারপর থেকে কনা কানেও শুনেনা আবার আস্তে আস্তে কথা বলাও বন্ধ করে দেয়। আগে মায়ের কাছে বলত আমাকে দুধ দাও, আমি দুধ খাব। এখন শুধু কান্না করে আর মায়ের পিছন পিছন ঘুরে দুধ খাওয়ার জন্য। ১৪ মাস বয়সে হঠাৎ তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। কনাকে রাজশাহী মেডিক্যালের ডাক্তার মাথার সিটিস্ক্যান করে দেখেন। ডাক্তার বলেন মাথায় কোন সমস্যা নেই। ডাক্তার বলেন এই সমস্যা জন্ম থেকে হয়েছে। কনার মা বলেন, বাচ্চা পেটে থাকতে আমি প্রতিদিন বমি বন্ধ হওয়ার জন্য ওষুধ খেতাম। এতে কি বাচ্চার কোন সমস্যা হয়েছে কিনা আল্লায় জানে।

কনার মা বলেন, এই সমস্যা বেশি দেখার কারনে কনার বাবা কবিরাজ ধরেছেন। কবিরাজ বলেন আপনাদের এইঘর ভাল না। কবিরাজ আসনে বসে বলে আপনাদের এই ঘরে অনেক পূর্বে মা কালির আসন ছিল। এতে আপনাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কনার মা বলেন আমার ভাসুর আগে এই ঘরে থাকতো। তার একটি ৩ বছরের ছেলে পানিতে মারা গেছে। এরপর ভাসুরের মাথা ব্যাথা করতো। ব্যাথার জন্য সে কান্না কাটি করতো। গলা দিয়ে রক্তও পরেছে। মাথা ব্যাথা কবিরাজের চিকিৎসায় ভাল হয়। আর গলা দিয়ে রক্ত আসা ঈশ্বরদী হাসপাতালে চিকিৎসা করে ভাল হয়েছে। এরপর তারা এই ঘর ছেড়ে চলে যায়। তারপর আমরা এই ঘরে আসি। এখানেই আমার প্রথম মেয়ে বাচ্চা হয়। মেয়েটিও ৩ বছরের মাথায় পানিতে পরে মারা গেছে। মেয়ে মারা যাওয়ার পর ৩ টি গরু মারা যায়। গরুর ঘরটিও ছিল এই ঘরের পাশাপাশি। এর এক বছর পর আমার ২য় সন্তান সাব্বির হয়। সাব্বির প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। সাব্বিরের পর ৩য় সন্তান একটি মেয়ে হয় যার নাম কনা। কনার জন্মের ১ বছর পর আবার ৩ টি গরু মারা গেছে। সাবিনা মনে করেন একারনে তার ছেলেও মতো মেয়েও প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। কনার জন্য প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধীতা কাটানো ও কষ্ট কমানোর জন্য কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নেই

সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলে কোন ফ্রি লাগে না। শুধু ওষুধের টাকা লাগে। ওষুধ কিনতে গেলে ১০/২০ টাকা ছাড় দেয়।

মা বলেন, আমার মেয়ে এখনো চিকিৎসা চলছে। সবাই জানতে চায় কি সমস্যা । কেন এমন হলো।

ডাক্তারদের কাছে সেবা নিতে গেলে তারা বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করেন, শিশুটি জন্ম থেকে কথা বলতে পারেনা, নাকি জন্মের পর কোন সমস্যা হয়েছিল।

মো: সাব্বির: শ্রবণ

সাব্বিরের বর্তমান বয়স ৬ বছর ১০ মাস।সাব্বির

পিতা নাম-কামাল মন্ডল, বয়স ৩০ বছর, পেশায় দিন মজুর ও কৃষক।

মায়ের নাম-সাবিনা ইয়াসমিন, বয়স ২৫ বছর, গৃহিনী

ঠিকানা হাজারীপাড়া, মুলাডুলি, ঈশ্বরদী, পাবনা।

পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। বাবা, মা, সাব্বিরের ছোট বোন বয়স ১.৫ বছর এবং সাব্বির নিজে।

আর্থিক অবস্থা- সাব্বিরের বাবার ৫ কাঠা জমির একটি বসত বাড়ি আছে। তাতে একটি ঘর। ঘরটির ছাউনি টিনের কিন্তু চার পাশে মাটির দেওয়াল।ছোট একটি রান্না ঘর আছে। গবাদি পশু পাখি বলতে একটি মুরগী ও বাচ্চা ৬টি। একটি আম গাছ, একটি লিচু গাছ, একটি লিচু গাছ এবং একটি জাম্বুরা। ছোট একটি বাঁশ ঝার আছে। কৃষি জমি বলতে ২০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করেন। পাশাপাশি দিন মজুরের কাজ করে দিন চলে।

সাব্বিরের প্রতিবন্ধী হওয়ার কারন- সাব্বির তার মায়ের ২য় সন্তান। প্রথম সন্তান ৩ বছর বয়সে পানিতে পরে মারা গেছে। সাব্বির তার মায়ের গর্ভে আসার পর তার মা একমাস কিছু খেতে পারেনি। খেলে বমি হতো। এজন্য মা সাবিনা দাশুরিয়া বাজারে ডা: রেজাউল করিমের কাছে চিকিৎসা নেন। এরপর থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত দিনে দুবার বমির ওষুধ খেতেন। তা না হলে সে কিছু খেতে পারতো না। বাচ্চা হওয়ার পর বাচ্চার নিঃশ্বাস ছিলনা। বাচ্চা নীল হয়ে গেছে। তবে বাচ্চা নরমালে হয়েছিল। বাচ্চা হওয়ার হওয়ার পর দিন বাচ্চার পেট ফুলে যায়। এজন্য বাচ্চাকে দাশুরিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ২ দিন ওষুধ খাওয়ানোর পর ভাল হয়ে যায়। বাচ্চা মায়ের পেট থেকে গ্যাষ্টিক নিয়ে জন্ম হয়। বাচ্চা কান্না করতে করতে ঘুমাইলে আবার কান্না নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে। এভাবে তিন মাস বাচ্চা কান্না করেছে। তিস মাস পর এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। বাচ্চা যখন বসে, মা তাকে বসিয়ে রেখে কাজ করতো তখন শিশুটি খেলা করতো। মা যদি তার সামনে যেত, দেখলে কান্না করত। তাই প্রথম ৬ মাসে বুঝতে পারা যায় বাচ্চাটি কানে শুনে না। যখন বয়স এক বছর হয়ে গেল তখন থেকে বুঝা যায় সে কথাও বলতে পারে না।

সাব্বিরকে পাবনা হাসপাতাল থেকে এক মাস ওষুধ খাওয়ানো হয়, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এরপর নাটোর মিশনে দেখানো হয় , ডাক্তাররা বলেন জন্ম থেকে সে শ্রবণ শক্তি হারিয়েছে। পরে সাব্বিরের বাবা মা তাকে সিরাজগঞ্জ এনায়েতপুর হাসপাতালে দেখান, সেখানে বলেন এটা জন্মগত সমস্যা।তাই তারা মণকে বুঝ দেওয়ার জন্য ঢাকা মহাখালী হাসপাতালে দেখান। মাথা পরিক্ষা করেন, থ্যারাপি পরিক্ষা করেন, ইয়ার ফোন সিস্টেমে কানের মেশিন দেন। মেশিন কানে দিলে সাব্বির কাঁন্না করতো। কিন্তু কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে ফেললে কান্না করতো না। এজন্য এই মেশিন বেশি দিন ব্যবহার করতে পারেনি। ডাক্তার বলেছিল এই মেশিন ব্যবহার করলে ভাল হতে পারে। সাব্বিরকে চিকিৎসা করানোর জন্য প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

প্রতিবন্ধীতা কাটানো ও কষ্ট কমানোর জন্য কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নেই

সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলে কোন ফি লাগে না। শুধু ওষুধের টাকা লাগে। ওষুধ কিনতে গেলে ১০/২০ টাকা ছাড় দেয়। মা বলেন, আমার ছেলে দেখলে কেউ বলতে পারেনা ছেলে প্রতিবন্ধী, যখন কথা বলতে চায় তখন বুঝতে পারে সে কথা বলতে পারে না। তখন মানুষ বলে কত সুন্দর ছেলে, কিন্তু কথা বলতে পারে না। অন্যদের চেয়ে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সহজ হয়।

ডাক্তারদের কাছে সেবা নিতে গেলে তারা বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করেন, শিশুটি জন্ম থেকে কথা বলতে পারেনা, নাকি জন্মের পর কোন সমস্যা হয়েছিল। তার কি রাগ বেশি না কম। খাবার দাবারের কোন দাবি দাওয়া করে কিনা? যা চায় তাই দিতে হয় কিনা? বাড়ির অন্যদের সাথে দূরত্ব কেমন? খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কেমন।

সাব্বির প্রতিমাসে সমাজ সেবা উন্নয়ন অফিস থেকে ৫০০ টাকা করে ভাতা পায়।

ঝর্না খাতুন (১৮)ঝরর্ণা

পিতার নাম- আলাউদ্দিন, বয়স ৫৫ বছর, পেশায় একজন কৃষক।

মাতার নাম- শাহিদা বেগম, বয়স ৪৮ বছর, পেশায় গৃহিনী।

ঠিকানা- সুলতানপুর, দাশুরিয়া, ঈশ্বরদী, পাবনা।

পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন, বাবা মা, দুই ভাই এবং ঝর্না। বড় ভাউ শরিফুল ইসলাম বয়স ৩০, তিনি চাকরি করেন, আর ছোট ভাই ৫ম শ্রেণীতে পড়ে।

বসত ভিটা- এক বিঘা জমি নিয়ে তাদের বসত বাড়ি। তার মধ্যে ছোট একটি পুকুর আছে। ঝর্নাদের বাড়িতে ৪ টি ঘর আছে। তার মধ্যে থাকার ঘর ২ টি, ১ টি রান্না ঘর এবং একটি গরুর ঘর। বাড়িতে অনেক ধরনের গাছ আছে। যেমন নারকেল গাছ ৫ টি, আম গাছ ৭ টি, পেয়ারা গাছ ৪ টি, নিম গাছ ১ টি, বড় একটি জাম গাছ, বেল গাছ আছে ৪ টি, মেহগনি গাছ ৫ টি এবং লিচু গাছ আছে ৫ টি। ঝর্নার বাবার ৩ বিঘা আবাদী জমি আছে। জমিতে ধান চাষ করেন। জমি থেকে যে ধান আসে তাতে সারা বছর চলে যায়।

বাড়িতে গরু আছে ৩টি, যার মধ্যে একটি দুধের গাভী, একটি ষাড় বাছুর এবং একটি বড় ষাড়। ছাগল আছে ৬টি। চারটি ডিম পাড়ার উপযুক্ত মুরগী এবং ১ টি মুরগীর ৭ টি বাচ্চা সহ আছে।

প্রতিবন্ধী হওয়ার কারন- ঝর্ণা যখন তার মায়ের গর্ভে আসে, মায়ের কথায় তার কোন সমস্যা হয়নি। ঝর্ণার মা প্রথম কিছু ঠিক মতো খেতে পারেনি। পরে অবশ্য নিয়মিত খাবার দাবার করতে পারে। বাচ্চার নড়াচড়াও ঠিক ছিল। তবে ঝর্ণা পেটে আসার পর কোন টিকা মা কোন টিকা নেয়নি। বাচ্চা হওয়ার ব্যথা শুরু হওয়া থেকে ৭ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা প্রসব হয়। প্রসবের সাথে সাথে কান্না করেছে, দুধও খেয়েছে। এরপর বাচ্চাকে গোসল করানো হয়। আবার বুকের দুধ খাওয়ানো হয়। কান্নার পর যে বাচ্চা চোখ বন্ধ করেছে, ১০ দিন পর বাচ্চা চোখ খোলেনি। তবে চোখ বন্ধ করেও দুধ খেয়েছে। প্রসবের ১০ দিন পর বাচ্চার খিচুনী হয়েছিল। খিচুনী হওয়ার কারনে সবাই বলে বাচ্চার গাঁয়ে কালের বাতাস লাগছে। তার জন্য বৈদ্য দিয়ে ঝাড় ফুকরা করতে হবে। প্রথমে বৈদ্য কবিরাজ কে দেখানো হয়। এভাবে বৈদ্য কবিরাজকে দ্বারা ৩ মাস চিকিৎসা করানো হয়। এরপর শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনিছুর রহমানকে দেখানো হলে বলেন আপনার বাচ্চা স্বাভাবিক হবেনা। যখন বাচ্চা ১০ দিন চোখ বন্ধ করে ছিল তখন দেখানো উচিত ছিল। তারপর আবার খিচুনী হয়ে ছিল। কোন চিকিৎসা করানো হয়নি। এখন আর ঠিক হবে না।

এরপর ঝর্ণাকে পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছু দিন পর পর খিচুনী ওঠে। এজন্য পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে ১ বছর চিকিৎসা করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।

সবশেষে ঝর্না কে রাজশাহী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা বলেন, ঝর্ণা ভাল হবে না। জন্মের পর থেকেই এই সমস্যা। মাসে ৭/৮ বার খিচুনী দেখা যায়। আবার কোন মাসে একবারও হয় না। আর এভাবেই আছে ঝর্না। তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। ঝর্ণা নিজে নিজে হাটতে পারে না, কথা বলতে পারেনা, কাঁদতে পারে না, দাঁড়াতে পারে না, আসলে সে কিছু করতে পারে না। নিজে ভাত খেতে পারে না। প্রসাব পায়খানা আসলে বুঝতে পারে না। ক্ষুধা লাগলে বলতে পারে না, তবে কানে শুনে। কেউ ডাকলে তার দিকে তাকায়। ঝর্ণা জন্মগত প্রতিবন্ধী।

প্রতিবন্ধী কাটানো বা তার কষ্ট কমানোর জন্য কোন স্বাস্থ্য সেবা দানের প্রতিষ্ঠান নেই

প্রতিবন্ধী যদি সাধারণ চিকিৎসার জন্যও যদি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যায়। তাহলেও তার স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া অন্যদের তুলনায় সহজ হয়। প্রতিবন্ধীর চিকিৎসা ও সাধারন রোগের চিকিৎসা চিকিৎসা খরচ অন্য রোগীদের চেয়ে কম।

সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠিান যেসকল প্রশ্ন করেন- কবে থেকে এই সমস্যা, এজন্য কোন ধরনের চিকিৎসা করা হয়েছে। ডাক্তার কি ধরনের চিকিৎসা দিয়েছে। তার খাওয়া দাওয়া কেমন, বাছগোছ করে কিনা? ক্ষিদা লাগলে বলতে পারে কিনা? প্রসাব পায়খানা আসলে নিজ থেকে বলতে পারে কিনা?

প্রতিবন্ধী জীবনজীবন

পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের হাজারীপাড়া গ্রামের দিন মজুর আশরাফুলের এবং মা মোমেনা বেগমের ২য় সন্তান জীবন।

পিতা মো: আশরাফুল (৩৭) পেশায় একজন দিন মজুর। মা মোমেনা বেগম একটা জুট মিলে রান্নার কাজ করেন। বড় বোন সাথী (১৬) ১০ম শ্রেনীতে পড়ে। এবং ছোট ভাই বিপ্লবের বয়স মাত্র ৫ বছর।

আর্থিক অবস্থা- জীবনদের বসত বাড়ী ৩ শতাংশ জমির উপর। থাকার ঘর টিনের ছাউনি কিন্তু ৩ পাশের দেয়ল মাটির এক পাশে টিনের বেড়া। বাড়িতে গাছের সংখ্যা ৩টি ছোট মেহগনি গাছ, ১ টি আমগাছ ছোট। চাষের কোন জমি নেই। একটি মুরগী ছাড়া কোন গবাদী পশুপাখি নেই। জীবনদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। কারন তাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হলো তার মায়ের জুট মিলে রান্না করা। জীবনের বাবা কোন কাজ করেনা। যদি কোন সময় মণ চায় তাহলে কাজ করে, মণ না চাইলে করেনা। আবার যদি কোন টাকা পয়সা রোজগার করে তা পরিবারে খরচ করেনা। তার সকল টাকা নেশা করতেই শেষ হয়ে যায়।মাঝে মধ্যে যদি কোন টাকা বাঁচে তাহলে সংসারে দেন। জীবনের বয়স যখন ৬ বছর তখন তার বাবা অন্য গ্রামের আরেকটি বিয়ে করেন। সেখানে ঐ বউয়ের সাথে ১ বছর সংসার করেন। তারপর সংসার ভেঙ্গে যায়। তার প্রধান কারন হলো ছোট বউ মদ, গাজা, হিরুয়িন ব্যবসায়ী। যার ফলে আশরাফুল একজন নেশাখোরে পরিনত হয়েছে। জীবনের বাবার ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা নেই। জীবনের কাছে তার বাবার পরিচয় জানতে চাইলে দিতে চায়না। পরে তার চাচির অনুরোধে তার বাবার নাম বলেন, কারন তার বাবা একজন নেশাখোর মানুষ।

জীবনের মা জুট মিলে রান্নার কাজ করেন। সেখানে সে খাবার বাদে মাসে ৩ হাজার ৫ শত টাকা করে পান। রাতে যখন জীবনের মা কাজ শেষে বাড়ি ফিরেন তখন রাতের খাবার নিয়ে আসেন। রাতে সবাই মিলে সেই খাবার খায়, কিছু থাকলে সকালে খায়। তাদের বাড়িতে ২ বেলা রান্না করা হয়। জীবনের মা তার স্বামীকে ব্যবসা করার জন্য এনজিও থেকে টাকা তুলে দেন। কিন্তু সেই টাকা জীবনের বাবা ইচ্ছামত খরচ করেন এবং নেশা করেন। জীবনের মা সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যায়। অনেক সময় তারা না খেয়ে থাকে।

জীবনের প্রতিবন্ধী হওয়ার কারন

১৪১৬ সালের চৈত্র মাসের মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার সময় তার মা, তাকে গোসল করানোর জন্য ডাকে। কিন্তু জীবন তার মায়ের ডাকে সাড়া দেয়নি। জীবনের মা ভাবেন জীবন যেহেতু আসছে না তাহলে একটু পরে গোসল করানো যাবে। আগে গরুটা গোসল করাই। তাই জীবনের মা গরুটাকে গোসল করাতে যায়। হঠাৎ করে তার মা পুকুর পাড়ে লোক জনের চিৎকার শুনতে পায়। চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখে জীবনে পরিস্থিতি। পাশের বাড়ির একটি গরু লোহার শাবল দিয়ে খুটি দিয়ে মাঠে বেঁধে দিয়ে ছিল। জীবন পুকুর পাড়ে খেলছিল। হঠাৎ করে গরুটি শাবল সহ ছুটে আসে জীবনের দিকে। শাবলের বারি খেয়ে জীবন পুকুরে পরে যায়, এমন ভাবে পরেছে জীবনের মাথা ছিল নিচের দিকে আর পা ছিল উপরের দিকে। পুকুরে পরে আছে দেখে জীবনের খালা পুকুর থেকে তুলে নিয়ে আসে। এই অবস্থায়ও জীবনের জ্ঞান ছিল। জীবন প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। পিঠের বাম পাশে ছিদ্র হয়ে গেছে। প্রচুন্ড রক্ত যাইতে থাকে। সাথে সাথে গ্রামের ডাক্তার নিয়ে আসে রক্ত বন্ধ করার জন্য। আঘাতের জায়গায় ৩ টি সেলাই করা হয়। ৪ ঘন্টা পর জীবন বলেন আমার কোমড়ের নিচে কিছু আছে বলে মনে হয়না। পায়ে কোন শক্তি নেই। তখন রাত প্রায় ৯ টা। জীবন বলে আমার পেট ব্যথা করছে, আমি প্রসাব করবো বলে চিৎকার করে। জীবনের মনে হয় তার কোমড় থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত অবশ হয়ে গেছে। তখন সে প্রসাব করার জন্য চিৎকার করতে থাকে। তখন তাকে ঈশ্বরদী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন বাজে রাত সাড়ে ১০ টা, ঈশ্বরদী হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেন, এখানে এর জন্য কোন চিকিৎসা নেই, আপনারা ওকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে রেফার করা হয় পাবনা হাসপাতালে। পাবনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর জীবনে প্রসাবের রাস্তা দিয়ে নল দিয়ে তাকে প্রসাব করানো হয়। পাবনা হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডাক্তাররা বলেন, পাবনা সদর হাসপাতালেও তার কোন চিকিৎসা নেই, আপনারা ওকে ঢাকা নিয়ে যান। পরে জীবনকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আবার প্রসাব বন্ধ হয়ে যায়, পেট ফুলে যায়। গ্রামের ডাক্তার প্রসাবের রাস্তা দিয়ে নল দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু এতে প্রসাবের রাস্তায় আঘাত পায় এবং প্রচুন্ড রক্ত পরে। পরে তাকে রাজশাহী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৭ দিন রাখা হয় এবং ডাক্তারদের কথা মতো নানান রকম পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট দেখে রাজশাহী হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেন, আমাদের পক্ষে সম্ভব না, আপনারা ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান। এরপর জীবনকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে এক মাস রাখার পরও কোন উন্নতি হয়নি। ঢাকা হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেন, এই রোগীর চিকিৎসা আমাদের এখানে নেই আপনারা ওকে সিআরপিতে নিয়ে যান। সিআরপিতে নিয়ে ৩ মাস চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু সেখানে মাত্র পিঠের আঘাত ভাল হয়েছে। সিআরপিতে চিকিৎসা করার সময় সকল ডাক্তাররা মিলে বসে জীবনের চিকিৎসা নিয়ে মিটিং করতো। এভাবেই তার চিকিৎসা চলতো। হঠাৎ একদিন ডাক্তররা তার মাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনার ছেলে আর জীবনে ভাল হবেনা। কারন মানুষের মেরুদন্ডের ভিতর একটা রগ থাকে, সেটা ছিঁচে গেছে। আর এভাবেই জীবন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।

তখন জীবনের মা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন আর বিলাপ করতে থাকে। আমার জীবনের কি হবে। জীবনের চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ করা হয়। এই টাকা এলাকার লোকজন, গ্রাম, হাট বাজার থেকে তুলে দিয়েছেন।

জীবনের পায়খানা প্রসাব আসলে সে বলতে পারে না। সে হাটা চলা করতে পারেনা। তার পা যদি কেউ টেনে সোজা করে দেন, তা আবার আপনা আপনি কুকড়িয়ে যায়। বসে থাকতে থাকতে পায়খানার রাস্তায় ঘাঁ হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে ৩০০ টাকা করে ওষুধ লাগে। চলাফেরা করার জন্য সে একটি বাচ্চাদের বেয়ারিং তৈরী করা গাড়ি ব্যবহার করেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া একটি হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন।

২. প্রতিবন্ধীতা কাটানোর জন্য এখানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোন উপায় নেই।

৩. হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়াটা অনেক সময় সহজ আবার অনেক সময় কঠিন হয়।

৪. সরকারি কোন হাসপাতালে প্রতিবন্ধীদের জন্য চিকিৎসা বাবদ ডাক্তার ফ্রি বাবদ কোন টাকা নেয় না। তবে ওষুধের দোকানে ওষুধ কিনতে টাকা লাগে। যদি রোগীকে সাথে করে নেওয়া হয় তাহরে দোকানদারও কিছু টাকা কম নেয়। এবং গাড়িওয়ালার ভাড়া নেয় না। তবে সাথে যে যায় তার ভাড়া নেয়।

৫. প্রতিবন্ধী রোগীরা হাসপাতালে গেলে যে সকল প্রশ্ন করা হয়- তার খাবার সম্পর্কে জানতে চায়, কিভাবে সে প্রতিবন্ধী হলো, তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। কোথায় চিকিৎসা করা হয়েছে জানতে চায়, কখন থেকে প্রতিবন্ধী, সে কি খেতে ভালবাসে। কখন সে বেশি অসুস্থ্য হয়ে যায়। এ সম্পর্কে ডাক্তাররা জানতে চায়। বিশেষ করে ডাক্তারার তাকে পরিষ্কার থাকতে বলেন।

বি. দ্র. জীবন প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পান।

বানেছা বেগমবাছেনা

ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুরিয়া ইউনিয়নোর সুলতানপুর গ্রামের আমছের আলী প্রা: (৬০) এর ২য় স্ত্রী বানেছা বেগম (৩৫)।

আমছের আলী পেশায় একজন জ্বাল মুুরি বিক্রেতা। এই আয় থেকেই চলে তাদের দুজনের সংসার।

বানেছা বেগমের প্রতিবন্ধী হওয়ার কারন-

বানেছা বেগম ভালভাবের হাটতে পারেনা। তার পা দুটো কুকড়ানো। একা হাটা চলা করলে পরে গিয়ে হাত পা ভেঙ্গে যায়।

তবুও হাটার চেষ্টা করেন। একটু হাটতে গেলে ক্লান্ত হয়ে যায়। কথা বলতে পারে তবে একটু বাজে এবং কানে শোনে।

বানেছার যখন ৩ মাস তখন তার জ্বর হয়। তারপর থেকে তার এই সমস্যা হয়। যখন তার হাটার সময় হয়ে যায় তবুও সে হাটতে পারে না। তখন তার পরিবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাটানোর চেষ্টা করেন। সে যেন দাঁড়াতে ও হাটতে পারে সে জন্য বাড়ির উঠানে বানেছার কোমড় পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে দাড় করিয়ে রাখতো। কিন্তু সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো না। এরকম ভাবে যখন বানেছার বয়স ১২-১৩ বছর তখন সে কোন মতে হাটতে পারে। এখন তার বয়স ৩৫ বছর, তারপরও সে ঝুলে ঝুলে হাটে। রাস্তা ঘাটে গাড়িতে সে একা চলতে পারেনা। প্রতিবন্ধীতার কারনে সে এ যাবৎ অনেক চিকিৎসা করেছে কিন্তু কোন সমাধান হয়নি।

প্রতিবন্ধীতা কাটানোর জন্য কোন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত নেই

প্রতিবন্ধীতা বা সাধারণ রোগের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিতে গেলে আলাদা করে কোন সুবিধা দেওয়া হয়না। অন্যদের মতো করে লাইনে দাড়িয়ে সেবা নিতে হয়। মা বলেছেন এক পাল্লায় টাকা আরেক পাল্লায় মেয়েকে রাখলে টাকার ওজন বেশি হবে।

স্বাস্থ্য সেবা নিতে গেলে মানুষ জানতে চায় কিভাবে প্রতিবন্ধী হলো।

জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী কিনা? কোথায় চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে বর্তমান অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা? এসব কথা জানতে চায়।

বর্তমানে প্রতিবন্ধী অফিস থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে পান। এই টাকা ৩ মাস পরপর ১৫০০ করে একবারে দেন।

নাম প্রতিবন্ধীতা বয়স

বর্তমান অবস্থা

চিকিৎসা খরচ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবহার
কনা শ্রবণ প্রতিবন্ধী ১ বছর ৫ মাস কানে শোনে না এবং কথা বলতে পারে না। মাথা পরীক্ষা করেন, থ্যারাপি পরীক্ষা করেন, ইয়ার ফোন সিস্টেমে কানের মেশিন দেন। পনের হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কনাকে রাজশাহী মেডিক্যালের ডাক্তার মাথার সিটিস্ক্যান করে দেখেন। ডাক্তার বলেন মাথায় কোন সমস্যা নেই। ডাক্তার বলেন এই সমস্যা জন্ম থেকে হয়েছে।
সাব্বির শ্রবণ প্রতিবন্ধী ৬ বছর ১০ মাস কানে শোনে না এবং কথা বলতে পারে না। মাথা পরীক্ষা করেন, থ্যারাপি পরীক্ষা করেন, ইয়ার ফোন সিস্টেমে কানের মেশিন দেন। আশি থেকে নব্বই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সাব্বিরকে পাবনা হাসপাতাল থেকে এক মাস ওষুধ খাওয়ানো হয়, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এরপর নাটোর মিশনে দেখানো হয় , ডাক্তাররা বলেন জন্ম থেকে সে শ্রবণ শক্তি হারিয়েছে। পরে সাব্বিরের বাবা মা তাকে সিরাজগঞ্জ এনায়েতপুর হাসপাতালে দেখান, সেখানে বলেন এটা জন্মগত সমস্যা।তাই তারা মণকে বুঝ দেওয়ার জন্য ঢাকা মহাখালী হাসপাতালে দেখান। মাথা পরিক্ষা করেন, থ্যারাপি পরিক্ষা করেন, ইয়ার ফোন সিস্টেমে কানের মেশিন দেন। মেশিন কানে দিলে সাব্বির কাঁন্না করতো। কিন্তু কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে ফেললে কান্না করতো না। এজন্য এই মেশিন বেশি দিন ব্যবহার করতে পারেনি। ডাক্তার বলেছিল এই মেশিন ব্যবহার করলে ভাল হতে পারে।
ঝর্ণা খাতুন ঝর্ণা জন্মগত প্রতিবন্ধী ১৮ বছর মাসে ৭/৮ বার খিচুনী দেখা যায়। আবার কোন মাসে একবারও হয় না। আর এভাবেই আছে ঝর্না। বৈদ্য কবিরাজ, এলোপ্যাথি। তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে।

প্রথমে বৈদ্য কবিরাজ কে দেখানো হয়। এভাবে বৈদ্য কবিরাজকে দ্বারা ৩ মাস চিকিৎসা করানো হয়। এরপর শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনিছুর রহমানকে দেখানো হলে বলেন আপনার বাচ্চা স্বাভাবিক হবেনা। যখন বাচ্চা ১০ দিন চোখ বন্ধ করে ছিল তখন দেখানো উচিত ছিল। তারপর আবার খিচুনী হয়ে ছিল। কোন চিকিৎসা করানো হয়নি। এখন আর ঠিক হবে না।

এরপর ঝর্ণাকে পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছু দিন পর পর খিচুনী ওঠে। এজন্য পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে ১ বছর চিকিৎসা করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।

সবশেষে ঝর্না কে রাজশাহী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা বলেন, ঝর্ণা ভাল হবে না।

জীবন কোমড় থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত অবশ হয়ে গেছে ৮ বছর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া একটি হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন
প্রতি সপ্তাহে ৩০০ টাকা করে ওষুধ লাগে। জীবনের চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ করা হয়। এই টাকা এলাকার লোকজন, গ্রাম, হাট বাজার থেকে তুলে দিয়েছেন। জীবনের মনে হয় তার কোমড় থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত অবশ হয়ে গেছে। তখন সে প্রসাব করার জন্য চিৎকার করতে থাকে। তখন তাকে ঈশ্বরদী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন বাজে রাত সাড়ে ১০ টা, ঈশ্বরদী হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেন, এখানে এর জন্য কোন চিকিৎসা নেই, আপনারা ওকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে রেফার করা হয় পাবনা হাসপাতালে। পাবনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর জীবনে প্রসাবের রাস্তা দিয়ে নল দিয়ে তাকে প্রসাব করানো হয়। পাবনা হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডাক্তাররা বলেন, পাবনা সদর হাসপাতালেও তার কোন চিকিৎসা নেই, আপনারা ওকে ঢাকা নিয়ে যান। পরে জীবনকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আবার প্রসাব বন্ধ হয়ে যায়, পেট ফুলে যায়। গ্রামের ডাক্তার প্রসাবের রাস্তা দিয়ে নল দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু এতে প্রসাবের রাস্তায় আঘাত পায় এবং প্রচুন্ড রক্ত পরে। পরে তাকে রাজশাহী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৭ দিন রাখা হয় এবং ডাক্তারদের কথা মতো নানান রকম পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট দেখে রাজশাহী হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেন, আমাদের পক্ষে সম্ভব না, আপনারা ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান। এরপর জীবনকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে এক মাস রাখার পরও কোন উন্নতি হয়নি। ঢাকা হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেন, এই রোগীর চিকিৎসা আমাদের এখানে নেই আপনারা ওকে সিআরপিতে নিয়ে যান। সিআরপিতে নিয়ে ৩ মাস চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু সেখানে মাত্র পিঠের আঘাত ভাল হয়েছে। সিআরপিতে চিকিৎসা করার সময় সকল ডাক্তাররা মিলে বসে জীবনের চিকিৎসা নিয়ে মিটিং করতো। এভাবেই তার চিকিৎসা চলতো। হঠাৎ একদিন ডাক্তররা তার মাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনার ছেলে আর জীবনে ভাল হবেনা। কারন মানুষের মেরুদন্ডের ভিতর একটা রগ থাকে, সেটা ছিঁচে গেছে। আর এভাবেই জীবন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।
বানেছা বেগম তার পা দুটো কুকড়ানো ৩৫ বছর ভাল ভাবে হাটতে পারেনা। তার পা দুটো কুকড়ানো। একা হাটা চলা করলে পরে গিয়ে হাত পা ভেঙ্গে যায়।
মা বলেছেন এক পাল্লায় টাকা আরেক পাল্লায় মেয়েকে রাখলে টাকার ওজন বেশি হবে। প্রতিবন্ধীতার কারনে সে এ যাবৎ অনেক চিকিৎসা করেছে কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। তার পরিবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাটানোর চেষ্টা করেন। সে যেন দাঁড়াতে ও হাটতে পারে সে জন্য বাড়ির উঠানে বানেছার কোমড় পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে দাড় করিয়ে রাখতো।

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।