স্বাস্থ্য সেবায় গরিব ও অবহেলিতরা বঞ্চিত 


বলা হয় স্বাস্থ্য সেবা সবার জন্যে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যারা শ্রমিক, আদিবাসি, নিম্ন বর্ণের মানুষ এমনকি প্রতিবন্ধিতার শিকার - তারা স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না। তারা নানা রকম রোগের শিকার হচ্ছেন কিন্তু স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে বৈষম্যমুলক আচরণের কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সারা দেশে এমন ঘটনা অনেক রয়েছে। স্বাস্থ্য আন্দোলনের জন সম্মেলনে তাদের মধ্যে কয়েকজন এই চিত্র তুলে ধরেছেন।

রওশন আরা বেগম (৪৩) নির্মান শ্রমিক স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তিনি থাকেন মিরপুর পল্লবী, লালমাটিয়া পুরাবস্তি। স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যাবার পর থেকে রাজমিস্ত্রী জোগালী হিসেবে কাজ করেন। মাথায় বেশি বোঝা নিলে মাথা ব্যথা করে। কাজের চাপ বেশি পড়লে বুক ব্যথা করে।

তিনি বলেন “ভাত যোগাতে পারি না ডাক্তার দেখাবো কেমন করে”। তিনি চার বছর আগে বুকে ব্যথার জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাসপাতালের ডাক্তারা বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখে বলেছিলেন হার্ডের সমস্যা হয়েছে। বাহির থেকে ওষুধ কিনে খেতে বলেন। ৪০০/৫০০ টাকার ওষুধ বাহির থেকে কিনে খেয়েছিলেন। ব্যথা উঠলে ফার্মেসী থেকে ৫ টাকা দামের গ্যাসটিকের ওষুধ খান। রফিক ডাক্তারের ফার্মেসী থেকে বাকীতে ওষুধ খান। মাসের শেষে টাকা পরিশোধ করে দেন।

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে সারাদিন চলে যায়। গরিব মানুষকে অবহেলা করা হয়। তিনি বলেন আমরা হাসপাতালে গেলে আমাদের যেন অবহেলা না করা হয়। তার দাবী হলো নির্মাণ শ্রমিকের জন্য সরকারি হাসপাতালে যেন আলাদা বিভাগ খোলা হয়। যাতে শ্রমিকরা সহজে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে।

এখন মেশিনে ইট ভাঙ্গে তাই মহিলা শ্রমিকদের মজুরী কমে গেছে, অর্থাৎ আয়ও কমে যাচ্ছে।

মুক্তি রানী সরকার, গার্মেন্ট শ্রমিক

মুক্তি রানী সরকার গার্মেন্ট শ্রমিক (৩৫)। তিনি থাকেন মিরপুর ১১ নং, লালমাটিয়া ব্লক-এ পুরাবস্তি। অপারেটর হিসেবে গার্মেন্টে কাজ করেন। অসুস্থ হলে ছুটি চাইলে ছুটি দেয় না। কাজের শেষে বাড়ি ফিরে ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খান। মাসিক বেতন পান ৬,৬০০ টাকা। ওভার টাইম দিয়ে ৯০০০ টাকার মত পরে। মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা হয়। এছাড়া মুক্তির স্বেতী রোগ আছে। শরীরের কিছু অংশ সাদা হয়ে গেছে। গার্মেন্টে কাজ করার পর থেকে তার স্বেতী রোগ হয়েছে। এই রোগ হ্ওয়ার পরে সবাই তাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখে। সুপারভাইজার বলেন, “আপনাকে চাকরিতে রাখা যাবে না”। চার মাস আগে স্বেতী রোগের চিকিৎসার জন্য কর্মীটোলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। ১৫ জনের পরে তার ডাক পরে। সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন ডাক্তারের দেখা মেলে তখন ডাক্তার সাহেব বলেন, “এই হাসপাতালে এ রোগের কোন চিকিৎসা নাই”।

সারাদিন কাজ বাদ দিয়ে ৪০/৫০ টাকা খরচ করে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে তাকে বাড়ি ফিরে আসতে হয়। ঐ হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে মিরপুর ১ নাম্বারে জার্মান হোমিও হল সেখানে যান। জার্মান হোমিও হল এর ডাক্তাররা বলেছেন এই রোগের চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে করতে হয়। মাসে তারা ১০,০০০ টাকার ওষুধ লিখে দেয়। তার পক্ষে এত টাকা দিয়ে ওষুধ কেনা সম্ভব হয়নি বলে সেখানে আর যান নি। মিরপুরের মানিক দি এলাকায় প্রতি বৃহস্পতিবার ডাক্তার ফ্রি চিকিৎসা দেন। সেখান থেকে ফ্রি ওষুধ আনেন। এই চিকিৎসাতে রোগ কমেনি আরো বেড়ে গেছে।

গার্মেন্টে সাধারণ রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়। কিন্তু যে ওষুধ দেয় তা পরিমাণে কম। তাতে রোগ ভাল হয় না। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা কার্ড করে দেয় সেখানে কার্ড করেছেন। সাধারণ কোন রোগ হলে সেখানে যান। বছরে ১০০ টাকা করে নেয়। কিন্তু কোন পরীক্ষা করতে হলে বাহির থেকে করতে হয়। তখন অনেক টাকা লাগে। ১৫ দিন আগে তার বুকে ব্যথা হয়েছিল বাহির থেকে এক্সরে করতে হয়েছে। সব মিলে খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। সুস্থ হয়ে যখন কাজে গেছেন তখন তাকে আর কাজে নেয়নি।

স্বামী রড মিলে চাকরি করতো। একসিডেন্ট করে একটি পা ভেঙ্গে যায়। পরে পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তিনি এখন অচলাবস্তায় ঘরে পড়ে আছে।

আদিবাসী সম্প্রদায়দের কথা

গ্রাম-সাগরদিঘি, ইউনিয়ন- বিরিশিরি, উপজেলা- দুর্গাপুর, জেলা- নেত্রকোণা।

অর্নেলা রাংসা বলেন, “আমরা গারো সম্প্রদায়। সরকারি হাসপাতালে আমরা ভাল সেবা পাই না। আমার ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও কোনো টিকেট পাই নি। আদিবাসি বলে আমাদেরকে মূল্যায়ন করা হয় না”।

সরকারি হাসপাতাল ও সরকারি মাতৃসনদে গারো ও হাজং সম্প্রদায় অর্থাৎ আদিবাসী সম্প্রদায় বলে তাদের গ্রহণ করতে চায় না। সরকারি হাসপাতালে তারা সঠিক সেবা পায় না। তাদের কোনো আত্মীয় স্বজন হাসপাতালে চাকুরী না করলে (যেমন- সুইপার, ছাড়–দার) তারা লাইন ধরেও সেবা নিতে পারে না। বিনামূল্যে কোন ঔষধ পায় না। কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালে করা হয় না।

কোন গর্ভবতী মাকে সরকারি হাসপাতালে বা মাতৃসাদনে সিজার করার ব্যবস্থা নাই। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই সকল সেবা পেতে খুবই কষ্ট হয়। তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয় এবং তারা অনেক হয়রানি শিকার হয়।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের সুপারিশমালা:

  • আদিবাসীদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ করে দেওয়া।
  • মেডিসিন বিশেজ্ঞ ডাক্তার পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
  • কাছাকাছি স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
  • আদিবাসি নারীদের আলাদা বা গাইনী বিভাগে ডাক্তার পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।

আমরা নিচু জাত বলে ডাক্তাররা আমাদের দেখতে চায় না

আমরা কাওরা সম্প্রদায়। অবহেলা ও অনাদরে দিনের পর দিন না খেয়ে যাদের দিন কাটে তাদের আবার স্বাস্থ্য কিসের? শুকুরের সাথে সম্পৃক্ত আমরা। আমরা শুকর পালি বিধায় ডাক্তার এবং নার্সরা আমাদের চিকিৎসা দিতে অস্বস্তি বোধ করে”। অসুস্থ হলে কোথায় চিকিৎসা সেবা নেন, জানতে চাইলে এভাবেই উত্তর দেন কাওরা সম্প্রদায়ের শিপ্রা মন্ডল (৩৫)।

খুলনায় কাওরা সম্প্রদায়ের মূল পেশা শুকরের পাল চরানো। শুকরের পাল চরাতে হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মাঠে মাঠে শুকর চরানোই তাদের কাজ। আঞ্চলিকভাবে এদেরকে ‘শুকর রাখাল’ বলে।

শুকরের সাথেই এদের রাত্রি যাপন করতে হয়। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তাদের থাকতে হয়। এ সব রাখালদের বেতন খুবই সামান্য। প্রতি মাসে তাদের বেতন ১০০০-১২০০ টাকা। এক বছরের চুক্তিতে তাদেরকে কাজে যেতে হয়। মালিক তাদেরকে খাওয়া ছাড়া বছরে ৪টি লুঙ্গি ও ৪টি গামছা দিয়ে থাকে। এদিকে মাস শেষে বেতনের সামান্য টাকার জন্য বাড়ীতে পরিবার পরিজনেরা অপেক্ষায় থাকে। মালিক বাড়িতে এসে টাকা দিয়ে যায়। এই সামান্য টাকায় ভাত, কাপড় কোনটাই হয় না। দিনের পর দিন তাদের অর্ধাহারে, অনাহারে থাকতে হয়। পেট ভরে বাচ্চাদের মুখে খাবার দিতেই পারে না তো লেখাপড়া শেখাবে কিভাবে? এ অভাবের সংসার থেকে আট দশ বছর বয়স হলে ছেলেদের চলে যেতে হয় শুকরের পাল চরাতে আর মেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয় বিয়ের বন্দোবস্ত।

শুকর পালন ছাড়া তারা আর কোন কাজ করতে জানে না বলে বংশের ধারাবাহিকতায় পরিবারের সবাই শুকরের পাল চরায়। সমাজে তারা ঘৃণিত অস্পৃশ্য। আর নারীদের কাজ বাড়ীতে থেকে সংসারের কাজ করা। সম্প্রতি কিছু কিছু নারীরা কেউ রাজমিস্ত্রী জোগালের কাজ করে, শামুক ভাঙ্গে, চিংড়ীর ডিপোতে মাছের মাথা আলাদা করে, রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করে। আবার কেউ কেউ ধানের ক্ষেত পরিস্কারের কাজ করে। এদের পারিশ্রমিক অতি সামান্য।

কাওরা সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার বিষয়টি খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। ১২ বছর বয়সের নীচে শিশুদের অসুখের মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশি, জিহ্বায় ঘা, মাথা যন্ত্রণা, গালে ঘা (মুখে ঘা) দেখা যায়। আর ১২ থেকে ১৮ বছরের মেয়েদের অসুখের মধ্যে বেশী দেখা যায় মাথা ব্যথা, দূর্বলতা, পেট ব্যথা, লিভারের সমস্যা, চোখ জ্বালা পোড়া, সাদাস্রাব ভাঙ্গা। এই সমস্যা হলে সাধারণত কবিরাজি ওষুধ খাওয়ান হয়। নারীদের অসুস্থতায় দেখা যায় মাথা ব্যথা, জরায়ুর সমস্যা, নাড়ী বেড় হওয়া, হাত-পা ফুলে যাওয়া, জ্বর, সর্দি। বেশি হয় ঘা, পচড়া, মাথা যন্ত্রণা, গ্যাস, বুকে ব্যথা। এরা নিচু জাত বলে ডাক্তারা দেখতে চায় না। বাজারের ওষুধের দোকানে অসুখের ধরণ বলে ওষুধ কিনে খায়।

ঝর্ণা বিশ্বাস (৩০) বলেন, “আমাদের এখানে পাশ করা কোন ডাক্তার নাই। সর্দার ডাঙ্গায় (আমাদের এলাকা থেকে দূরে) একটা কমিউনিটি ক্লিনিক আছে সেখানে আমরা যাই। সেখানে জ¦র, সর্দি, চুলকানি, ডাইরিয়া’র ওষুধ পাওয়া যায়। সব সময় ওষুধ পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। আর বেশীরভাগ সময় ক্লিনিক বন্ধ থাকে। বড় রোগ হলে ২৫০ বেডের সরকারী হাসপাতাল, আবু নাসের হাসপাতাল, আকিজ মেডিক্যালে যাই। ২৫০ বেডের হাসপাতালে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাই। সব ধরণের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। আমরা নিচু জাত বলে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগেই নার্সরা বলে, “পরে আস, এখন ডাক্তার দেখতে পারবে না।” কখন কখন ডাক্তারের কাছে যেতে পারি। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করে দেয়। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে হয়। টাকা থাকলে কিনে খাই না থাকলে খাই না।”

সমাজে অবহেলিত, নিগৃহীত এরা পায় না কোনো স্বাস্থ্য সেবা। সমাজ থেকে আলাদা হয়ে থাকার কারণে এরা সাহস করে বাইরেও যায় না। কোথায় গেলে কি ধরণের সেবা পাওয়া যায় সেটা তারা জানে না। আবার জানার পর সেখানে গেলে সে সমাজের অন্য লোকের মত স্বাভাবিক সেবা পাবে কি না এই সংশয়ে তারা থাকে। বর্তমানে সরকারী/বেসরকারী যে সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে যারা এলাকায় গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা অর্থাৎ মা ও শিশুর সেবা দেন তারা এখন কাওরাদের কাছে যান। তবে কাওরা সম্প্রদায় মানুষদের সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা দিতে নয়। শুধুমাত্র বিবাহিতা কাওরা নারীদের সন্তান নিয়ন্ত্রণের জন্য কপার্টি, ইঞ্জেকশন ও লাইগেশন করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতেই তারা সর্বদা ব্যস্ত থাকে। এ কাজের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কিছু কমিশন পায়। এদিকে যাকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দেওয়া হচ্ছে সে কেমন আছে, তার শরীর কেমন আছে, সে মরবে না বাঁচবে তার হিসেব কারো কাছেই নেই। ভুক্তভোগীরা সর্বদা এ ধরণের স্বাস্থ্য কর্মীদের সেবার আতংকে থাকে।

সাদাপাতা (তামাক) সেবনকারী

খুলনা জেলার দিঘলীয়া উপজেলার আড়ংঘাটা গ্রামের কাওরা পাড়ার বাসিন্দা বাসনা মন্ডল (৩২)। ছোট বেলায় বাবাকে সব সময় পান সাজিয়ে খাওয়ানোটা যেন তারই দায়িত্ব ছিল। বাবা পানের সাথে সাদাপাতা খেতেন। বাবা যখন বৃদ্ধ হয়ে গেলেন তখন তিনি গোটা পান চিবিয়ে খেতে পারতেন না। ফলে হামান দিস্তায় পান ছেঁচে বাবাকে খাওয়াতে হতো। বাসনা সব সময় বাবাকে পান ছেঁচে দিতেন এবং সেখান থেকে নিজে একটু খেয়ে দেখতেন। প্রতিদিন এভাবে ৫/৬ বার খেতে খেতে এক সময় তার অভ্যাসে পরিণত হয়। ফলে প্রতিদিন সে ৮/১০ বার পান খেতেন সংগে সাদাপাতা। একটা সাদাপাতা তার ২ থেকে ৩ দিনের বেশী চলতো। তখন তার বয়স প্রায় ১০-১২ বছর। এই বযসেই বাবা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় এক শুকর পালক ছেলের সাথে।

বিয়ে, স্বামী সংসারের কোন মানে তখন তার জানা ছিল না। ফলে স্বামীর হাত ধরে পাড়ি জমাতে হলো অন্য এক গায়ে। কিন্তু সেখানে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার অগেই বাসনার বায়না বাবার বাড়ীতে আসবে। বাবা এবং ভাইরা তাকে নিয়ে আসেন নিজ বাড়ীতে। এরপর তিনি স্বামীর বাড়ীতে আর কখনও যাননি। এক সময় স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করেন আর বাসনা থেকে যায় সারা জীবন বাবার সংসারে আর এখন আছেন ভাইদের সংসারে।

বর্তমানে বাসনা ভালবাসেন তামাকপাতাকে। তামাকপাতা ছাড়া বাসনার এক মূহূর্ত কাটতো না। দীর্ঘ ১৫ বছর একাধারে তামাকপাতা খাওয়ায় আজ বাসনা অসুস্থ। দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে বাসনা। তামাকপাতা বাসনার জীবন কেড়ে নিতে দ্বিধা করছে না। তার দুই ঠোঁট, দাঁতের মাড়িতে এবং গলার ভিতরে এমনই ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে যে এক গ্লাস পানিও সে এখন মুখে দিতে পারে না।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: সুকুমার মন্ডল বলেন, তামাকপাতা খাওয়ার ফলে তার মুখের ভেতর এবং খাদ্যনালীতে ঘা হয়ে গেছে”। সে এখন পানি পর্যন্ত গিলতে পারছে না। যন্ত্রনায় সে বার বার ডাক্তার কাছে যায় আর সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য কাকুতি মিনতি করছে। কে নেবে বাসনার সুস্থ হয়ে ওঠার দায়িত্ব। কোথায় পাবে সে অর্থের জোগান।

বর্তমানে বাসনার মুখ দিয়ে সব সময় লালা ঝড়ছে। কিছু খেতে পারে না। যন্ত্রনা। বাসনা বলে, “তামাকের ছোবলে আর কত প্রাণ অকালে ঝরতে বসেছে কে জানে। তামাক বিষ। আপনারা কেই সাদাপাতা, জর্দা খাবেন না”।

শারীরিক প্রতিবন্ধী আশরাফুলের মায়ের কথা

আশরাফুল (৩৫) শারীরিক প্রতিবন্ধী। গ্রাম: গোয়াল বাথান, ইউনিয়ন মুলাডুলি, উপজেলা: ঈশ্বরদী, জেলা: পাবনা।

আশরাফুলের মা বলেন, আমার পেটে যখন বাচ্চা ছিল তখন আমার কোন সমস্যা ছিল না। বাচ্চার বয়স যখন একমাস তখন বাচ্চার জ্বর হয়েছিল। একনাগারে তিন দিন জ্বর ছিল। বুকের দুধ চুষে খেতে পারতো না। চিপে চিপে চামুচে করে বুকের দুধ খাওয়াতাম। তিন দিন পরে জ্বর ভাল হয়। আস্তে আস্তে স্বাস্থ্য ভাল হয়, চেহারাও সুন্দর হয়। চার-পাঁচ মাস যখন ওর বয়স তখন খেয়াল করলাম সে হাত পা নাড়ে না। তখন অনেক কবিরাজের কাছে নিয়ে যাই। কবিরাজ ঝাড় ফুক করে কিন্তু ভাল হয় না। ডাক্তারী চিকিৎসা কম করেছি। কবিরাজী চিকিৎসা বেশি করেছি। গ্রামে তখন কোন টিকা ইনজেকশন ছিল না। ওকে কোন টিকা দেয়া হয়নি।

এই ভাবে ১৫ বছর চিকিৎসা করেছি। যখন আশরাফুলের বয়স ১৮/১৯ বছর তখন ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। ডাক্তাররা ওকে দেখে বলেছে ওর দু,পায়ের সব রগ শুকিয়ে গেছে। এটা আর ভাল হবে না। মনের শান্তির জন্য ওখান থেকে আবার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওখানকার ডাক্তাররাও বলেছে আপনার ছেলে ভাল হবে না। তার পর থেকে চিকিৎসা বন্ধ করেছি। তবুতো আমার ছেলে আমি তো ছেলেকে পেটে ধরেছি। আমার তো চেষ্টা করতেই হয়। আমার ছেলে আমাকে পালতেই হয়।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।